মোন্থার প্রভাব: কার্তিকের এই বৃষ্টি বয়ে আনবে শীত!
 
																
								
							
                                - Update Time : ১২:৫০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬৩৩ Time View
কার্তিক মাসের মাঝামাঝি এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা দেখা গেছে। এই বৃষ্টি আরও দুই দিন থাকতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির প্রবণতা শনিবার পর্যন্ত থাকবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা কমে গিয়ে ঠান্ডা ভাব তৈরি হবে। বাড়বে শীতের আমেজ।
মোন্থার প্রভাবে ৩ বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে আছড়ে পরা ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ দুর্বল হয়ে গেলেও এর প্রভাব কমছে না; বরং এর প্রভাবে এবার দেশের তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আজ শুক্রবার অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী দুই দিন (৪৮ ঘণ্টা) এর প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগ অতিক্রম করার পর দূরে এসে এভাবে বৃষ্টি ঝরানোর পেছনে কারণ হলো, আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া আরেক নিম্নচাপ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ ভারতের অন্ধ্র উপকূলে দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের আকাশে মেঘ জমেছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির। বৃহস্পতিবার খুলনা, মোংলা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, নরসিংদী, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে সামান্য বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
চলতি বছর দেশের শীতকাল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা দীর্ঘ ও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে রাজধানী ঢাকায় শীতের আগমন এবারও দেরিতে হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, গত বছর নভেম্বরেই সারাদেশে কনকনে শীত পড়েছিল; কিন্তু ঢাকায় তেমন ঠান্ডা অনুভূত হয়নি। এবারও নভেম্বরজুড়ে রাজধানীতে শীতের প্রভাব তেমন থাকবে না। ঢাকায় শীত শুরু হতে পারে নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলায় শীত বাড়তে পারে। এরপর ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ঠান্ডা ছড়িয়ে পড়বে।
ঢাকায় শীত দেরিতে নামার কারণ হিসেবে একেএম নাজমুল হক বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন সিস্টেম সৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে সহজে তাপমাত্রা কমছে না। তার সঙ্গে ঘনবসতি ও যানবাহনের তাপ মিলিয়ে ঢাকায় তাপমাত্রা সবসময় আশপাশের জেলার চেয়ে বেশি থাকে। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, যেখানে ঢাকায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোক থাকার কথা, সেখানে এখন তিন কোটিরও বেশি মানুষ বাস করছে। ফলে তাপমাত্রা টাঙ্গাইল বা গাজীপুরের তুলনায় ঢাকায় গড়ে দুই থেকে তিন ডিগ্রি বেশি থাকে।
ভারী বৃষ্টির বার্তা: আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগ অতিক্রম করার পর দূরে এসে এভাবে বৃষ্টি ঝরানোর পেছনে কারণ হলো, আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া আরেক নিম্নচাপ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। যখন কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তবে তাকে ভারী বৃষ্টি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় অতি ভারী বৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম ৪৮ ঘণ্টার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। তিনি আজ বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় যে টানা কোথাও ভারী বা অতি ভারী বৃষ্টি হবে, তা নয়। এ সময়ের মধ্যে তিন বিভাগের কোনো স্থানে এ বৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবেই এই বৃষ্টি।
এদিকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলা দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে আজ প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। এই চার জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে দেশের কয়েকটি নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই। কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী তিন দিন রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং ভারতের উজানে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি দুদিন স্থিতিশীল থাকলেও পরবর্তী তিন দিনে কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আত্রাই, করতোয়া, টাঙ্গন, পুনর্ভবা, ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদীর পানি আগামী তিন দিনে দ্রুত বাড়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সোমেশ্বরী, ভুগাই, কংস ও জিঞ্জিরাম নদীর পানিও বাড়তে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, কার্তিকের এই বৃষ্টি কৃষির জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এখন আমন ধান পাকার মৌসুম, অনেক কৃষক কাটা শুরু করেছেন। আবার রবিশস্যের জমি প্রস্তুতের কাজও চলমান। বৃষ্টিতে এসব কাজ অন্তত দুই-তিন দিন পিছিয়ে যাবে। তবে বৃষ্টি থেমে দ্রুত রোদ উঠলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
Please Share This Post in Your Social Media
- 
                                        সর্বশেষ
- 
                                        জনপ্রিয়
 
					 
																			

































































































