বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল উইন্ডিজ
- Update Time : ১০:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৬৭ Time View
পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার ফারভিজ মাহারুফ বললেন, আগের ম্যাচের চেয়ে উইকেট অনেক ভালো। বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস বললেন, ১৮০ রানের লক্ষ্য হলেও তাদের চলবে। তার দল লক্ষ্য পেল কেবল ১৫০। তার পরও মুখ থুবড়ে পড়লেন লিটন ও তার সতীর্থ ব্যাটসম্যানরা। বোলারদের অসাধারণ ঘুরে দাঁড়ানোয় সিরিজ জিইয়ে রাখার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবল দল।
চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাঝারি পুঁজি নিয়েও দারুণ জয়ের স্বাদ পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪ রানের জয়ে ক্যারিবিয়ানরা সিরিজ জিতে নিল এক ম্যাচ বাকি রেখেই। সবশেষ আট সিরিজে কেবল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিততে পেরেছিল ক্যারিবিয়ানরা। সেই ব্যর্থতার ধারা কাটিয়ে তারা সিরিজ জিতে ফিরছে বাংলাদেশ থেকে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। যদিও একটা সময় তারা ছিল দুইশর পথে। কিন্তু অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিংয়ে ধস নামায় বাংলাদেশের বোলাররা।
এক পর্যায়ে ক্যারিবিয়ানদের রান ছিল ১ উইকেটে ১০৬। সেখান থেকে পরের ৪৩ রানে তারা হারায় তারা ৮ উইকেট। আলিক আথানেজ ও শেই হোপের জুটিতে আসে ৫৯ বলে ১০৫ রান। তার পরও সেই দলকে দেড়শর নিচে আটকে রাখেন নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমানরা। বোলারদের এমন উজ্জীবিত পারফম্যান্স বিফলে যায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। ২০ ওভারে তারা তুলত পারে কেবল ৮ উইকেটে ১৩৫ রান।
ইনিংস শুরু করতে নেমে এক প্রান্তে ১৭ ওভার টিকে থেকেও আসল কাজটুকু করতে পারেননি তানজিদ হাসান। জীবন পেয়েও তিনি ফেরেন ৪৮ বলে ৬১ রান করে। জীবন পেয়েছেন সাইফ হাসান, লিটন, তাওহিদ হৃদয়রাও। ক্যারিবিয়ান ফিল্ডাররা একের পর এক ক্যাচ ছেড়েছেন। বাংলাদেেশর ব্যাটসম্যানরাও যেন পণ করেছিলেন, আউট হয়েই ছাড়বেন! ম্যাচের শুরুটা ছিল উত্তেজনাময়। প্রথম বলেই তানজিম হাসানের দারুণ ডেলিভারিতে ব্র্যান্ডন কিংয়ের ক্যাচ ছাড়েন লিটন। সেই কিং পরের ওভারে বিদায় নেন তাসকিন আহমেদের বলে ক্যাচ দিয়ে।
আরেক ওপেনার আলিক আথানেজও তানজিমের বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তাওহিদ হৃদয়ের হাতে। বাঁহাতি এই ব্যাটার সেটির খেসারত বুঝিয়ে দেন দ্রুতই। ওই ওভারেই মারেন তিনি একটি ছক্কা। তাসকিনের লেংথ বল ছক্কায় উড়িয়ে দেন তিনে নামা শেই হোপ। প্রথম দুই ওভারে ছয় রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরের চার ওভারে তোলে ৪৪।
পাওয়ার প্লের পরও এই দুজনের ব্যাটের দাপট চলতে থাকে। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের প্রথম ওভারে একটি করে ছক্কা আসে দুজনের ব্যাট থেকেই। সাইফ হাসান, শামীম হোসেনের স্পিন ব্যবহার করে লাভ হয়নি তেমন। ১০ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ৯৪ রান। পরের ওভারে হোপের ছক্কায় রান পেরিয়ে যায় একশ। এরপরই সেই নাটকীয় পালাবদল। প্রথম তিন ওভারে ৩২ রান দেওয়া নাসুমের হাত ধরে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন আথানেজ। ৩৩ বলে ৫২ রান করে তার বিদায়ে থামে দুর্দান্ত জুটি।
পরের বলেই জোরের ওপর করা সোজা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান শেরফেন রাদারফোর্ড। টানা দুই ম্যাচে ‘গোল্ডেন ডাক’ পেলেন আগ্রাসী এই বাঁহাতি। পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান নতুন স্পেলে ফিরে আউট করে দেন শেই হোপকে (৩৬ বলে ৫৫)। ক্যারিবিয়ানদের বিপদের মেঘ ঘনিয়ে আসে তখনই। দ্রুতই তা রূপ নেয় উইকেটের বর্ষণে। রিশাদ হোসেনর এক ওভারেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন আগের ম্যাচের নায়ক রভম্যান পাওয়েল ও জেসন হোল্ডার। সেই সময়টায় রানের গতিও যায় থমকে। স্লগ ওভারের এক পর্যায়ে টানা ২৬ বলে আসেনি বাউন্ডারি। শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেন যিনি, সেই রোমারিও শেফার্ড ১৬ বল খেলে করতে পারেন মোটে ১৩ রান।
শেষ ওভারে টানা দুটি উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। শেষ বলে আকিল হোসেনের রান আউটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আটকে যায় দেড়শর নিচে। বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা ছিল নড়বড়ে। তিন রানে জীবন পেয়ে আর দুই রান করেই ফেরেন সাইফ হাসান। জেডেন সিলসের এক ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মেরে ইনিংস গতিময় করার চেষ্টা করেন লিটন। তার পরও প্রথম সাত ওভারে রান আসে কেবল ৪১। এর মধ্যেই লিটন জীবন পান ২০ রানে।
তখনও পর্যন্ত ১৬ বলে ১২ রানে থাকা তানজিদ হাসান একটু জেড়ে ওঠেন আকিল হোসেনকে ছক্কা মেরে। তবে ওই ওভারেই বোল্ড হয়ে যান লিটন (১৭ বলে ২৩)। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাতবার লিটনকে আউট করলেন আকিল। আর কোনো ব্যাটসম্যানের উইকেট পাঁচবারও পাননি তিনি। তানজিদ পরে ছক্কা মারেন খ্যারি পিয়ের ও রোস্টন চেইসের বলেও। আরেক প্রান্তে তাওহিদ হৃদয় ৫ রানে জীবন পেয়ে আউট হন ১৪ বলে ১২ রান করে।
সহজ এক ক্যাচ দিয়েও তানজিদ রক্ষা পান ৪৪ রানে। ফিফটি করে আরও এগিয়ে দলের আশা হয়ে টিকে থাকেন ১৭ ওভার পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শেষ করতে ব্যর্থ তিনিও। তিন ওভারে যখন প্রয়োজন ৩৩ রান, তানজিদের ইনিংস শেষ হয় শেফার্ডের স্লোয়ারে। নুরুল হাসান সোহানের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পাওয়া জাকের আলি ক্রিজে নেমে যেন বুঝতেই পারছিলেন না, ব্যাট হাতে কী করবেন। যন্ত্রণাময় উপস্থিতি শেষে ১৭ বলে ১৭ করে আউট হন তিনি। এরপর জেসন হোল্ডারের নিখুঁত ইয়র্কারে যখন বোল্ড হয়ে যান শামীম হোসেন, বাংলাদেশের শেষ আশাও শেষ হয়ে যায়। শেষ ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের শেষটাও দারুণ করেন আকিল।
এই মাঠেই শুক্রবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪৯/৯ (কিং ১, আথানেজ ৫২, হোপ ৫৫, রাদারফোর্ড ০, পাওয়েল ৩, হোল্ডার ৪, চেইস ১৭*, শেফার্ড ১৩, পিয়ের ০, আকিল ১; তানজিম ৪-০-২৩-০, তাসকিন ৩-০-২৮-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-৩, নাসুম ৪-০-৩৫-২, সাইফ ১-০-৯-০, রিশাদ ৩-০-২০-২, শামীম ১-০-১১-০)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (সাইফ ৫, তানজিদ ৬১, ২৩, হৃদয় ১২, জাকের ১৭, শামীম ১, রিশাদ ০, তানজিম ৮*, নাসুম ২; সিলস ৪-০-৩০-০, হোল্ডার ৪-০-২০-২, শেফার্ড ৪-০-২৯-৩, চেইস ৩-০-১৯-০, আকিল ৪-০-২২-৩, পিয়ের ১-০-১৩-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোমারিও শেফার্ড।







































































































































































































