ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সিটি ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ অবিলম্বে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে কঠোর কর্মসূচীর হুমকি সাংবাদিকদের রায় ছিঁড়ে ক্ষমতার দাপট দেখানো সেই জেলা জজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ঢাবিতে ধূমপানে জরিমানা, গাঁজা সেবনে বহিষ্কার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল আওয়ামীলীগ – মঈন খান সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ঘুমের মধ্যে মাদ্রাসা ছাত্রকে গলা কেটে হত্যা   ১ হাজার টাকা কমেছে স্বর্ণের দাম বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সুন্দরী নারীরা রাস্তায় বের হতে পারবে না: ফয়জুল করিম ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ,আগুন

বংশগত রোগ থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য,কিন্তু নিরাময়যোগ্য নয়: ডঃ সওগাত

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:১২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৭০ Time View

স্বনামধন্য এবং অগ্রসরমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োটেড (BioTED) বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই থ্যালাসেমিয়া সহ তরুণ প্রজন্মের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে সচেতনতামূলক এবং গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগে বায়োটেড (BioTED) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিগত প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মাঝে থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে বায়োটেড “এওয়ারনেস এন্ড স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন” পরিচালনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আতিয়ার রহমান। বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য বায়োটেডের দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরীর এই প্রচেষ্টার ভূয়ষি প্রশংসা করেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের কে সচেতন এবং সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন ভবিষ্যতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে হলে শিক্ষিত সমাজের এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

‎সেমিনারে মূল বক্তা ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। ধীরে ধীরে সেই কর্মসূচি সামাজিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিকভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করা সম্ভব হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব। সচেতনতাই হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করার প্রথম পদক্ষেপ।

‎তিনি আরও বলেন, বংশগত রোগ হওয়ার কারণে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু নিরাময়যোগ্য নয়। তাই সচেতনতা এবং প্রতিরোধই একমাত্র পথ। আমরা যদি বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করি এবং দু’জনই যদি থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার হই, তবে আমাদের সন্তান এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে। তাই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই ঝুঁকি জানা সম্ভব।
‎এ সময় তিনি সবাইকে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা, থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার হলে সতর্ক সিদ্ধান্ত নিন এবং পরিবার ও সমাজে এ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫-২০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্মগ্রহণ করে যার অধিকাংশই পাঁচ বছর বয়সের পূর্বে মারা যায় বলে ধারণা করা হয়। ‌ উদ্বেগের বিষয় হলো এসব শিশু জন্মগ্রহণ করার পরে বাবা মারা যানতে পারেন যে তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক ছিলেন। তাই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই ব্যাপক ভিত্তিক স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্য থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় বাধ্যতামূলক করা উচিত। যাতে বাহক এবং বাহকের বিয়ের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্মের হার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

সেমিনারে এবং ফ্রি থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিংয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।‌ অপেক্ষাকৃত নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়ার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা ব্যয়বহুল। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সেবা প্রদান করছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে । রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা তৈরীর এই উদ্যোগে সহ আয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি ক্লাব। অনুষ্ঠান শেষে মূল বক্তা ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সচেতন করা গেলে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সারাদেশে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এখনই আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

বংশগত রোগ থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য,কিন্তু নিরাময়যোগ্য নয়: ডঃ সওগাত

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:১২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

স্বনামধন্য এবং অগ্রসরমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োটেড (BioTED) বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই থ্যালাসেমিয়া সহ তরুণ প্রজন্মের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে সচেতনতামূলক এবং গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগে বায়োটেড (BioTED) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিগত প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মাঝে থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে বায়োটেড “এওয়ারনেস এন্ড স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন” পরিচালনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আতিয়ার রহমান। বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য বায়োটেডের দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরীর এই প্রচেষ্টার ভূয়ষি প্রশংসা করেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের কে সচেতন এবং সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন ভবিষ্যতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে হলে শিক্ষিত সমাজের এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

‎সেমিনারে মূল বক্তা ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। ধীরে ধীরে সেই কর্মসূচি সামাজিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিকভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করা সম্ভব হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব। সচেতনতাই হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করার প্রথম পদক্ষেপ।

‎তিনি আরও বলেন, বংশগত রোগ হওয়ার কারণে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু নিরাময়যোগ্য নয়। তাই সচেতনতা এবং প্রতিরোধই একমাত্র পথ। আমরা যদি বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করি এবং দু’জনই যদি থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার হই, তবে আমাদের সন্তান এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে। তাই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই ঝুঁকি জানা সম্ভব।
‎এ সময় তিনি সবাইকে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা, থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার হলে সতর্ক সিদ্ধান্ত নিন এবং পরিবার ও সমাজে এ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫-২০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্মগ্রহণ করে যার অধিকাংশই পাঁচ বছর বয়সের পূর্বে মারা যায় বলে ধারণা করা হয়। ‌ উদ্বেগের বিষয় হলো এসব শিশু জন্মগ্রহণ করার পরে বাবা মারা যানতে পারেন যে তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক ছিলেন। তাই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই ব্যাপক ভিত্তিক স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্য থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় বাধ্যতামূলক করা উচিত। যাতে বাহক এবং বাহকের বিয়ের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্মের হার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

সেমিনারে এবং ফ্রি থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিংয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।‌ অপেক্ষাকৃত নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়ার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা ব্যয়বহুল। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সেবা প্রদান করছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে । রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা তৈরীর এই উদ্যোগে সহ আয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি ক্লাব। অনুষ্ঠান শেষে মূল বক্তা ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সচেতন করা গেলে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সারাদেশে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এখনই আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।