ঢাকা ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে বাড়তি আগ্রহ ১ আসনকে ঘিরে

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৮০২ Time View

সিলেট-১ আসনটিকে দেশের মর্যাদাপূর্ণ আসনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রতি নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থিতা মানেই হেভিওয়েট নেতাদের লড়াই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনকে ঘিরে সব সময়ই থাকে বাড়তি আগ্রহ। প্রচলিত একটি কথা রয়েছে ‘সিলেট-১ আসনে যে দল জয়ী হয়, সে দলই সরকার গঠন করে।’

সিলেট-১ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে দলের দুই উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরীর মধ্যে। সাবেক মেয়র আরিফুল হক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। অন্যদিকে মুক্তাদির প্রয়াত এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র এবং সিলেট বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের প্রতিনিধি। দলীয় অভ্যন্তরীণ বলয়ে সাইফুর-খন্দকার বিরোধের ধারাবাহিকতায় আরিফুল ও মুক্তাদির এখন সিলেট বিএনপির দুই ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সম্প্রতি মুক্তাদিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সুযোগে আরিফুল মাঠে দখল দৃঢ় করেন এবং বুধবার বিশাল শোডাউন করে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে মুক্তাদিরও নিউইয়র্কে প্রবাসীদের এক মতবিনিময় সভায় একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।তিনিই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকায় মহাসচিবের সাথে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল।ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন সভায় আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, ‘সিলেট-১ নতুবা মেয়র পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

অন্যদিকে মর্যাদার এই আসনে জামায়াত ইসলামি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের পরিবর্তে জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানকে সিলেট-৬ থেকে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।সিলেট-২ আসনে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর এখনও তার নামেই পরিচিত। দলের মধ্যে প্রার্থীতা নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীরের মধ্যে লড়াই সবচেয়ে আলোচিত। এলাকায় ইলিয়াসের প্রতি সহানুভূতি থাকায় তাহসিনাই এগিয়ে আছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, ব্যারিস্টার এম এ সালামসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। কাইয়ুম তৃণমূলের জনপ্রিয়, মালেক প্রবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সালাম কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী। এছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. ফয়েজ উদ্দিন এমবিইও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে মাওলানা লোকমান আহমদকে।

সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম, মিফতাহ সিদ্দিকী, আব্দুল হাকিম চৌধুরী, বদরুজ্জামান সেলিম, ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিমসহ বেশ কয়েক জন। জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। একঝাঁক বিএনপি প্রার্থী ও জামায়াতের শক্ত অবস্থান মিলিয়ে এখানে ভোটযুদ্ধ বেশ তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিলেট-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মামুনুর রশীদ মামুন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, প্রবাসী নেতা জাকির হোসেন ও প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামিরা তানজীন চৌধুরী। তবে এ আসনে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুকের অবস্থান শক্ত। ফুলতলীর পীর অনুসারীদের প্রভাব থাকায় বিএনপি শেষ পর্যন্ত জমিয়তকে আসনটি ছাড় দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

সিলেট-৬ আসনে আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ড. এনামুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, সৈয়দা আদিবা হোসেন, সাবিনা খান পপি ও অভিনেতা হেলাল খান। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী পরিবর্তন করে নতুন মুখ সেলিম উদ্দিনকে মাঠে নামিয়েছে।

সিলেট অঞ্চলের রাজনীতি বরাবরই জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশক। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের ফল এবারও দেশের রাজনৈতিক চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে আনবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। প্রতি বারই সিলেট-১ আসনের ফল সরকারের পালাবদলের ইঙ্গিত দিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেটে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে বাড়তি আগ্রহ ১ আসনকে ঘিরে

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

সিলেট-১ আসনটিকে দেশের মর্যাদাপূর্ণ আসনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রতি নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থিতা মানেই হেভিওয়েট নেতাদের লড়াই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনকে ঘিরে সব সময়ই থাকে বাড়তি আগ্রহ। প্রচলিত একটি কথা রয়েছে ‘সিলেট-১ আসনে যে দল জয়ী হয়, সে দলই সরকার গঠন করে।’

সিলেট-১ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে দলের দুই উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরীর মধ্যে। সাবেক মেয়র আরিফুল হক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। অন্যদিকে মুক্তাদির প্রয়াত এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র এবং সিলেট বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের প্রতিনিধি। দলীয় অভ্যন্তরীণ বলয়ে সাইফুর-খন্দকার বিরোধের ধারাবাহিকতায় আরিফুল ও মুক্তাদির এখন সিলেট বিএনপির দুই ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সম্প্রতি মুক্তাদিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সুযোগে আরিফুল মাঠে দখল দৃঢ় করেন এবং বুধবার বিশাল শোডাউন করে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে মুক্তাদিরও নিউইয়র্কে প্রবাসীদের এক মতবিনিময় সভায় একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।তিনিই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকায় মহাসচিবের সাথে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল।ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন সভায় আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, ‘সিলেট-১ নতুবা মেয়র পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

অন্যদিকে মর্যাদার এই আসনে জামায়াত ইসলামি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের পরিবর্তে জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানকে সিলেট-৬ থেকে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।সিলেট-২ আসনে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর এখনও তার নামেই পরিচিত। দলের মধ্যে প্রার্থীতা নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীরের মধ্যে লড়াই সবচেয়ে আলোচিত। এলাকায় ইলিয়াসের প্রতি সহানুভূতি থাকায় তাহসিনাই এগিয়ে আছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, ব্যারিস্টার এম এ সালামসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। কাইয়ুম তৃণমূলের জনপ্রিয়, মালেক প্রবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সালাম কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী। এছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. ফয়েজ উদ্দিন এমবিইও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে মাওলানা লোকমান আহমদকে।

সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম, মিফতাহ সিদ্দিকী, আব্দুল হাকিম চৌধুরী, বদরুজ্জামান সেলিম, ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিমসহ বেশ কয়েক জন। জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। একঝাঁক বিএনপি প্রার্থী ও জামায়াতের শক্ত অবস্থান মিলিয়ে এখানে ভোটযুদ্ধ বেশ তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিলেট-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মামুনুর রশীদ মামুন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, প্রবাসী নেতা জাকির হোসেন ও প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামিরা তানজীন চৌধুরী। তবে এ আসনে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুকের অবস্থান শক্ত। ফুলতলীর পীর অনুসারীদের প্রভাব থাকায় বিএনপি শেষ পর্যন্ত জমিয়তকে আসনটি ছাড় দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

সিলেট-৬ আসনে আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ড. এনামুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, সৈয়দা আদিবা হোসেন, সাবিনা খান পপি ও অভিনেতা হেলাল খান। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী পরিবর্তন করে নতুন মুখ সেলিম উদ্দিনকে মাঠে নামিয়েছে।

সিলেট অঞ্চলের রাজনীতি বরাবরই জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশক। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের ফল এবারও দেশের রাজনৈতিক চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে আনবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। প্রতি বারই সিলেট-১ আসনের ফল সরকারের পালাবদলের ইঙ্গিত দিয়েছে।