ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তৈরি পোশাক খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:১৩:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৭০৩ Time View

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ৫১৬ পোশাক কারখানার স্যাম্পল বা নমনা পুড়ে বিনষ্ট হয়েছে। এ বাবদ ক্ষতি হয়েছে আট মিলিয়ন ডলারের। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ এ ক্ষতির বাইরে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার কম নয়। স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হওয়ার ফলে রপ্তানি কার্যক্রম অন্তত এক মাস পিছিয়ে পড়তে পারে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ১৮ অক্টোবর দুর্ঘটনার পরপরই সদস্য কারখানার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় বিজিএমইএ। অনলাইনে তথ্য-উপাত্তের বিস্তারিত জানানোর জন্য একটি লিংক শেয়ার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। অবশ্য গতকাল রোববারও তথ্য নেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫১৬টি কারখানা তাদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে। এতে দেখা যায়, সব কারখানার ক্ষতির পরিমাণ সমান নয়। ৫১৬ কারখানার সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ ৮০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৯৬ কোটি টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ১২০ টাকা দরে এ হিসাব করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে যেসব কারখানার কাঁচামালের বিপরীতে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইইডি)  সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে, সেসব কারখানাকে জরুরি ভিত্তিতে সেবা দিচ্ছে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির  অনুপত্র– ইউডি সনদ সরকারের পক্ষ থেকে এই  সংগঠন দুটি দিয়ে থাকে।

তৈরি পোশাক ছাড়া, ওষুধ শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা বিশেষ করে শাকসবজি ও অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানির জন্য এই কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্গো ভিলেজে থাকা এ রকম পণ্য পুড়ে গেছে।  ওই সব খাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব এখনও জানা যায়নি।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পোশাকের স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানিতে লিড টাইমে অন্তত এক মাস পেছনে পড়তে পারে বাংলাদেশ। লিড টাইম হচ্ছে, ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্যাম্পল  পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদন করে তাদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়। কার্গো ভিলেজে থাকা সব স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে এখন আবার নতুন করে স্যাম্পল আনা, স্যাম্পল তৈরি এবং ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনুমোদন নেওয়া পর্যন্ত অন্তত এক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন,  বিজিএমইএ ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব পেয়েছে, প্রকৃত ক্ষতি তার চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ, সব সদস্য কারখানা এখনও তাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানায়নি। তিনি বলেন, স্যাম্পলের উচিত মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। একটা টোকেন মূল্য নেওয়া হয়। তাতেই তাঁর নিজের কারখানা অনন্ত অ্যাপারেলের ৪০ হাজার ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আগুনে কারখানার ফিনিশড পোশাকের (চূড়ান্ত পণ্য) স্যাম্পল ছাড়াও সুতা, কাপড়ের মান নিয়ন্ত্রণের সুতা এবং কাপড়ের  স্যাম্পলও আনা-নেওয়া হয় আকাশ পথে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমে অনেক জরুরি ডকুমেন্টও পরিবহন করা হয়। সেগুলোর ক্ষতি হয়েছে। তবে আগুনে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা পণ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাঁর কারখানারও ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক ওই দিন রপ্তানি হয়েছে।

গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে দুপুর আড়াইটার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। অগ্নিকাণ্ডটি পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে বলে ধারণা করছেন রপ্তানিকারকদের অনেকে। তাদের যুক্তি, এ রকম স্পর্শকাতর স্থাপনায় এভাবে আগুন লাগার জোরালো কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটি পোশাক কারখানায়ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রকৃত কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

তৈরি পোশাক খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০১:১৩:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ৫১৬ পোশাক কারখানার স্যাম্পল বা নমনা পুড়ে বিনষ্ট হয়েছে। এ বাবদ ক্ষতি হয়েছে আট মিলিয়ন ডলারের। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ এ ক্ষতির বাইরে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার কম নয়। স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হওয়ার ফলে রপ্তানি কার্যক্রম অন্তত এক মাস পিছিয়ে পড়তে পারে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ১৮ অক্টোবর দুর্ঘটনার পরপরই সদস্য কারখানার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় বিজিএমইএ। অনলাইনে তথ্য-উপাত্তের বিস্তারিত জানানোর জন্য একটি লিংক শেয়ার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। অবশ্য গতকাল রোববারও তথ্য নেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫১৬টি কারখানা তাদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে। এতে দেখা যায়, সব কারখানার ক্ষতির পরিমাণ সমান নয়। ৫১৬ কারখানার সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ ৮০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৯৬ কোটি টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ১২০ টাকা দরে এ হিসাব করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে যেসব কারখানার কাঁচামালের বিপরীতে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইইডি)  সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে, সেসব কারখানাকে জরুরি ভিত্তিতে সেবা দিচ্ছে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির  অনুপত্র– ইউডি সনদ সরকারের পক্ষ থেকে এই  সংগঠন দুটি দিয়ে থাকে।

তৈরি পোশাক ছাড়া, ওষুধ শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা বিশেষ করে শাকসবজি ও অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানির জন্য এই কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্গো ভিলেজে থাকা এ রকম পণ্য পুড়ে গেছে।  ওই সব খাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব এখনও জানা যায়নি।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পোশাকের স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানিতে লিড টাইমে অন্তত এক মাস পেছনে পড়তে পারে বাংলাদেশ। লিড টাইম হচ্ছে, ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্যাম্পল  পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদন করে তাদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়। কার্গো ভিলেজে থাকা সব স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে এখন আবার নতুন করে স্যাম্পল আনা, স্যাম্পল তৈরি এবং ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনুমোদন নেওয়া পর্যন্ত অন্তত এক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন,  বিজিএমইএ ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব পেয়েছে, প্রকৃত ক্ষতি তার চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ, সব সদস্য কারখানা এখনও তাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানায়নি। তিনি বলেন, স্যাম্পলের উচিত মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। একটা টোকেন মূল্য নেওয়া হয়। তাতেই তাঁর নিজের কারখানা অনন্ত অ্যাপারেলের ৪০ হাজার ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আগুনে কারখানার ফিনিশড পোশাকের (চূড়ান্ত পণ্য) স্যাম্পল ছাড়াও সুতা, কাপড়ের মান নিয়ন্ত্রণের সুতা এবং কাপড়ের  স্যাম্পলও আনা-নেওয়া হয় আকাশ পথে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমে অনেক জরুরি ডকুমেন্টও পরিবহন করা হয়। সেগুলোর ক্ষতি হয়েছে। তবে আগুনে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা পণ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাঁর কারখানারও ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক ওই দিন রপ্তানি হয়েছে।

গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে দুপুর আড়াইটার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। অগ্নিকাণ্ডটি পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে বলে ধারণা করছেন রপ্তানিকারকদের অনেকে। তাদের যুক্তি, এ রকম স্পর্শকাতর স্থাপনায় এভাবে আগুন লাগার জোরালো কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটি পোশাক কারখানায়ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রকৃত কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।