ঢাকা ০৮:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ভাঙা ঠেকানোর উদ্যোগ

মাত্র ১৮ লাখ টাকায় ভাঙারির কাছে বিক্রি ‘মিনিস্টার বাড়ি’

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:৪৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৪১ Time View

সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ‘মিনিস্টার বাড়ি’ মাত্র ১৮ টাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। এই ভাঙারি ব্যবসায়ীই শ্রমিক দিয়ে এখন বাড়িটি ভাঙার কাজ করছেন। তবে ঐতিহাসিক এ বাড়িটির ভাঙা ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের দুজন গবেষক এ বাড়িটি পরিদর্শন করেন। এসময় সিলেটের পরিবেশ কর্মী ও স্থপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ এ বাড়িটি নির্মাণ করেন।তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। এরপর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার কারণেই এই বাড়িটি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত।

শুক্রবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় আব্দুল হামিদের নাতি আনিসুল ইসলামকে। তিনি বলেন, বাড়িটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এছাড়া এই বাড়ির পেছনে আমাদের আরও বাড়িঘর রয়েছে। তাই এই পুরনো বাড়িটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি ভাঙতে আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তবে নিরূপায় হয়ে ভাঙতে হচ্ছে।

ভাঙচুর কাছে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, এটি ভাঙতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। প্রায় ৮১ শতক ভবনের উপর এই বাড়িটি কবে নির্মিত হয়েছিলো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ কেউ বাড়িটির বয়স শতবর্ষ বলে জানিয়েছেন। তবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আব্দুল হামিদ ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

শুক্রবার সকালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষকদের পরিদর্শন কালে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির। তিনি বলেন, এই বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এটি না ভেঙে যাদুঘরেও রূপান্তর করা যেতো। পরিবারের সদস্যরাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারতেন।

এসময় উপস্থিত স্থপতি রাজন দাশ জানান, এটি কোনভাবে রক্ষা করা যায় কী না তা আমরা আলাপ আলোচনা করে দেখছি। প্রত্তেত্ত্বের গবেষকরাও বিষয়টি দেখছেন। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ও প্রাচীন এই বাড়িটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আক্ষেপ করেছেন স্থানীয়রাও।

উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ এবং বৃহত্তর আসামের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তৎকালীন বিধানসভার স্পিকারও ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুল হামিদের বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবি আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের মা এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবুল মোমেনের দাদী।

Please Share This Post in Your Social Media

ভাঙা ঠেকানোর উদ্যোগ

মাত্র ১৮ লাখ টাকায় ভাঙারির কাছে বিক্রি ‘মিনিস্টার বাড়ি’

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:৪৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ‘মিনিস্টার বাড়ি’ মাত্র ১৮ টাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। এই ভাঙারি ব্যবসায়ীই শ্রমিক দিয়ে এখন বাড়িটি ভাঙার কাজ করছেন। তবে ঐতিহাসিক এ বাড়িটির ভাঙা ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের দুজন গবেষক এ বাড়িটি পরিদর্শন করেন। এসময় সিলেটের পরিবেশ কর্মী ও স্থপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ এ বাড়িটি নির্মাণ করেন।তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। এরপর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার কারণেই এই বাড়িটি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত।

শুক্রবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় আব্দুল হামিদের নাতি আনিসুল ইসলামকে। তিনি বলেন, বাড়িটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এছাড়া এই বাড়ির পেছনে আমাদের আরও বাড়িঘর রয়েছে। তাই এই পুরনো বাড়িটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি ভাঙতে আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তবে নিরূপায় হয়ে ভাঙতে হচ্ছে।

ভাঙচুর কাছে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, এটি ভাঙতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। প্রায় ৮১ শতক ভবনের উপর এই বাড়িটি কবে নির্মিত হয়েছিলো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ কেউ বাড়িটির বয়স শতবর্ষ বলে জানিয়েছেন। তবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আব্দুল হামিদ ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

শুক্রবার সকালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষকদের পরিদর্শন কালে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির। তিনি বলেন, এই বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এটি না ভেঙে যাদুঘরেও রূপান্তর করা যেতো। পরিবারের সদস্যরাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারতেন।

এসময় উপস্থিত স্থপতি রাজন দাশ জানান, এটি কোনভাবে রক্ষা করা যায় কী না তা আমরা আলাপ আলোচনা করে দেখছি। প্রত্তেত্ত্বের গবেষকরাও বিষয়টি দেখছেন। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ও প্রাচীন এই বাড়িটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আক্ষেপ করেছেন স্থানীয়রাও।

উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ এবং বৃহত্তর আসামের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তৎকালীন বিধানসভার স্পিকারও ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুল হামিদের বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবি আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের মা এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবুল মোমেনের দাদী।