ঢাকা ০৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিয়ের আড়ালে প্রতারণা, এক নারীর ফাঁদে নিঃস্ব ৩ স্বামী

এইচ এম মোজাহিদুল ইসলাম নান্নু
  • Update Time : ০৪:৪১:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৩৮০ Time View

বরগুনার আমতলী উপজেলার চন্দ্রা গ্রামের হাসিনা বেগম (৪২) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ের ফাঁদ পেতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ও জমিজমা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার ভুক্তভোগী তৃতীয় স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু হানিফ হাওলাদার ও প্রথম স্বামী সোলায়মান সরকার পৃথকভাবে এমন অভিযোগ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসিনা বেগম প্রথমে ২০০০ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সোলায়মান সরকারকে বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছর পর সোলায়মান আমতলী উপজেলার চন্দ্রা কারিগরি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ৫৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকায় কর্মরত স্বামীর অনুপস্থিতিতে হাসিনা একাধিক পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে স্বামীকে মারধর করে জোরপূর্বক জমি ও বাড়ি নিজের নামে দলিল করে নেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে হাসিনা সোলায়মানকে তালাক দেন।

প্রথম দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি সন্তান ছিল। তবে স্বামীর দাবি তালাকের পর হাসিনা অবাধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তার মেয়ে এই অবৈধ সম্পর্ককে মানতে নারাজ । এতে বাধা দিতে গেলে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে মারিয়াকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজান হাসিনা, এমন অভিযোগ করেন মেয়ের জামাই ইমরান হাওলাদার।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হাসিনা তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া দারুসুন্নাত দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের আট মাসের মধ্যে আবুল হোসেন মারা গেলে, অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার নামে অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ মৃত আবুল হোসেনের বড় ভাই আমির হোসেনের।

এরপর ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত স্বামীর বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু হানিফ হাওলাদারকে (৭০) কাবিন ছাড়া তৃতীয় বিয়ে করেন। দুই বছর সংসার জীবনে হাসিনা কৌশলে তার কাছ থেকে অন্তত ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ আবু হানিফের। তাকে তালাক না দিয়েই গত ১২ অক্টোবর হাসিনা ঘটখালী এলাকার জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে চতুর্থ বিয়ে করেন।

এছাড়া ২০১৪ সালে চাওড়া কারিগরি কলেজের এক ছাত্রীকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের সহায়তার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ছাত্রীটি আত্মহত্যা করে। ওই মামলায় হাসিনা আসামি না হয়ে প্রধান সাক্ষী হিসেবে তার নাম লেখান প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে।

অভিযোগ করেছেন, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাসিনা বেগম বিভিন্ন সময় বহু মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

হাসিনার ফুফু সেলিনা বেগম বলেন, হাসিনা চারটি বিয়ে করেছে। আগের স্বামীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন জমি-বাড়ির মালিক।

প্রথম স্বামী সোলায়মান সরকার বলেন, আমার জমি ও বাড়ি জোরপূর্বক দলিল করে নিয়েছে হাসিনা। আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়েছে। আমি প্রতারক হাসিনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তৃতীয় স্বামী আবু হানিফ হাওলাদার বলেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমাকে বিয়ে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন তালাক না দিয়েই অন্যকে বিয়ে করেছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে হাসিনা বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি আবু হানিফ হাওলাদারকে তালাক দিয়েই জহিরুল ইসলামকে শরীয়ত অনুযায়ী বিয়ে করেছি।

আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

বিয়ের আড়ালে প্রতারণা, এক নারীর ফাঁদে নিঃস্ব ৩ স্বামী

এইচ এম মোজাহিদুল ইসলাম নান্নু
Update Time : ০৪:৪১:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

বরগুনার আমতলী উপজেলার চন্দ্রা গ্রামের হাসিনা বেগম (৪২) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ের ফাঁদ পেতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ও জমিজমা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার ভুক্তভোগী তৃতীয় স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু হানিফ হাওলাদার ও প্রথম স্বামী সোলায়মান সরকার পৃথকভাবে এমন অভিযোগ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসিনা বেগম প্রথমে ২০০০ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সোলায়মান সরকারকে বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছর পর সোলায়মান আমতলী উপজেলার চন্দ্রা কারিগরি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ৫৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকায় কর্মরত স্বামীর অনুপস্থিতিতে হাসিনা একাধিক পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে স্বামীকে মারধর করে জোরপূর্বক জমি ও বাড়ি নিজের নামে দলিল করে নেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে হাসিনা সোলায়মানকে তালাক দেন।

প্রথম দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি সন্তান ছিল। তবে স্বামীর দাবি তালাকের পর হাসিনা অবাধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তার মেয়ে এই অবৈধ সম্পর্ককে মানতে নারাজ । এতে বাধা দিতে গেলে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে মারিয়াকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজান হাসিনা, এমন অভিযোগ করেন মেয়ের জামাই ইমরান হাওলাদার।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হাসিনা তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া দারুসুন্নাত দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের আট মাসের মধ্যে আবুল হোসেন মারা গেলে, অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার নামে অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ মৃত আবুল হোসেনের বড় ভাই আমির হোসেনের।

এরপর ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত স্বামীর বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু হানিফ হাওলাদারকে (৭০) কাবিন ছাড়া তৃতীয় বিয়ে করেন। দুই বছর সংসার জীবনে হাসিনা কৌশলে তার কাছ থেকে অন্তত ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ আবু হানিফের। তাকে তালাক না দিয়েই গত ১২ অক্টোবর হাসিনা ঘটখালী এলাকার জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে চতুর্থ বিয়ে করেন।

এছাড়া ২০১৪ সালে চাওড়া কারিগরি কলেজের এক ছাত্রীকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের সহায়তার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ছাত্রীটি আত্মহত্যা করে। ওই মামলায় হাসিনা আসামি না হয়ে প্রধান সাক্ষী হিসেবে তার নাম লেখান প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে।

অভিযোগ করেছেন, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাসিনা বেগম বিভিন্ন সময় বহু মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

হাসিনার ফুফু সেলিনা বেগম বলেন, হাসিনা চারটি বিয়ে করেছে। আগের স্বামীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন জমি-বাড়ির মালিক।

প্রথম স্বামী সোলায়মান সরকার বলেন, আমার জমি ও বাড়ি জোরপূর্বক দলিল করে নিয়েছে হাসিনা। আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়েছে। আমি প্রতারক হাসিনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তৃতীয় স্বামী আবু হানিফ হাওলাদার বলেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমাকে বিয়ে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন তালাক না দিয়েই অন্যকে বিয়ে করেছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে হাসিনা বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি আবু হানিফ হাওলাদারকে তালাক দিয়েই জহিরুল ইসলামকে শরীয়ত অনুযায়ী বিয়ে করেছি।

আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।