১২ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন
সিলেটে এবার ভয়াবহ বিপর্যয়ঃ পাশের হার ৫১.৮৬ শতাংশ

- Update Time : ০৪:২৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ২০৬ Time View
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে সিলেটে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। গত ১২ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই এবার ফেল করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঘোষণা হওয়া ফলাফলে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার ঢাকা বোর্ডে। পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ। এছাড়া বরিশালে ৬২.৫৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯.৪০ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭.৪৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১.৮৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১.৫৪ শতাংশ যশোরে ৫০.২০ শতাংশ ও কুমিল্লায় পাসের হার ৪৮.৮৬ শতাংশ।
ফলাফল অনুযায়ী, সিলেটে পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬। যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর ২০২৪ সালে পাসের হার ছিলো ৮৫ দশমিক ৩৯ ভাগ, ২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২ ভাগ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০ ভাগ, ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০ ভাগ, আর ২০২০ সালে শতভাগ, ২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ০৫, ২০১৮ সালে ৭৩ দশমিক ৭, ২০১৭ সালে ৭২ ভাগ, ২০১৬ সালে ৬৮ দশমিক ৫৯ ভাগ, ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭ আর ২০১৪ সালে ৭৯ দশমিক ১৬।
২০২০ সালে করোনা কালীন সময়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। যেটিকে ‘অটোপাস’ বলা হয়ে থাকে। ফলাফল প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিগত বছরের এসএসসির ফল বিবেচনা নেওয়া হয়।
আর ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার কিছু নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়েছিল, যার ফলে পাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
চলতি বছর সিলেটে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। যেখানে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। যার মধ্যে ছেলে ২৭ হাজার ৭৬৪ জন আর মেয়ে ৪১ হাজার ৪০৮ জন। মোট পাসকৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৮৭০ জন। যার মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৮৭০ এবং মেয়ে ২২ হাজার ১ জন। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬০২ জন যার মধ্যে ছেলে ৬৮১ এবং মেয়ে ৯২১ জন। পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ছেলেরা। ছেলে পরীর্ক্ষীদের মধ্যে পাস করেছেন ৪৯ দশমিক ৯৬ জন আর মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ ভাগ। প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে। এই বিভাগে পাস করেছেন ৪৫ দশমিক ৫৯ ভাগ পরীক্ষার্থী।
আর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ ভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮। ১৬০২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৭৯ জন, মানবিক বিভাগে ১৫৩ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৬৯৮ জন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধস নেমেছে।
অপরদিকে, সিলেট বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে আর বেশি সিলেট জেলায়। সিলেটে পাসের হার ৬০ দশমিক ৬১ ভাগ, হবিগঞ্জে ৪৯ দশমিক ৮৮, সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৫ এবং মৌলভীবাজারে ৪৫ দশমিক ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
ফলাফল ধসের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে খারাপ ফলের কারণে সামগ্রিক ফলাফল খারাপ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সিলেট বোর্ডের অধীনে মফস্বল এলাকাগুলোয় ভালো ইংরেজি শিক্ষক নেই। এছাড়া শহরের মতো কোচিংয়ের সুবিধাও শিক্ষার্থীরা পায় না। সে কারণেই মফস্বলের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও আইসিটিতে বেশি খারাপ করেছে, যা সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। তবে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বোর্ডের অন্যান্য বিষয়গুলোর ফলাফল নিম্নগামী— হিসাববিজ্ঞান: পাসের হার ৬৮ দশমিক ১১ শতাংশ (গত বছর ৭৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ); পদার্থবিজ্ঞান: ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ (গত বছর ৯৬ দশমিক ৪২ শতাংশ); উচ্চতর গণিত: ৭৯ দশমিক ০২ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); ইতিহাস: ৮১ দশমিক ৭৫ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); বাংলা: ৯০ দশমিক ০২ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); রসায়ন: ৮৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); জীববিজ্ঞান: ৯৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); অর্থনীতি: ৮৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); সমাজবিজ্ঞান: ৯৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); যুক্তিবিদ্যা: ৯০ দশমিক ৬৪ শতাংশ (গত বছর ৯৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ); মনোবিজ্ঞান: ৮৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); ভূগোল: ৯৫ দশমিক ৬১ শতাংশ (গত বছর ৯৮ দশমিক ২৯ শতাংশ); পরিসংখ্যান: ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); ইসলামের ইতিহাস: ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ (গত বছর শতভাগ); কৃষি শিক্ষা: ৯২ দশমিক ৮০ শতাংশ (গত বছর শতভাগ)।
এবার সিলেট বোর্ডে মোট পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এবার পাসের হার কমেছে ৩৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এবার সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার ৯৬টি কম। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৬৯৮ জন।
এবার সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৩ জান। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১০ হাজার ১৩৭ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৬ হাজার ২৬০ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬ হাজার ৯৭ জন, যশোর বোর্ডে ৫ হাজার ৯৯৫ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ৪ হাজার ২৬৮ জন, কুমিল্লা ২ হাজার ৭০৭ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে ২ হাজার ৬৮৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ১ হাজার ৬৭৪ জন, কারিগরি বোর্ডে ১ হাজার ৬১০ জন ও সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন।জিপিএ – ৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সিলেট সর্বনিম্ন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়