ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে একমাত্র শেয়ারধারী পরিচালকের পদত্যাগ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ছয় দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার : ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গড়ার আহ্বান বাংলাদেশ ও বিএনপি : আগামী নির্বাচনে সম্ভাবনার দিগন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুইডেন ও নরওয়ের ৯ তরুণ রাজনীতিবিদের সাক্ষাৎ নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত লুটপাট করে সার কারখানা ধ্বংস করে দিয়েছে আ.লীগ সরকার – মঈন খাঁন রাস্তায় ফেলে শিক্ষক পেটানো কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চরিত্র নয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যস্থতায় আফগান-পাকিস্তান সংঘর্ষ স্থগিত: কাবুল প্রেমিকাকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে ‘ধর্ষণ’, রক্তক্ষরণে মৃত্যু ডিবি পরিচয়ে বাসর ঘরে ডাকাতি, স্বর্ণালংকার লুট

বাংলাদেশ ও বিএনপি : আগামী নির্বাচনে সম্ভাবনার দিগন্ত

রাজনীতি ডেস্ক
  • Update Time : ১১:১৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২০ Time View

বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে দেশ আজ বৈশ্বিক অঙ্গনে নতুনভাবে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলছে। তবে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবেশ ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের নেতৃত্বে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি দেশের উন্নয়ন ধারাকে নতুন গতি দিয়েছিল। আজও দলটি জাতীয় রাজনীতিতে এক প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। এই নিবন্ধে বিএনপির নির্বাচনী সম্ভাবনা, শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও হুমকি নিয়ে বিশ্লেষণের চেষ্ট করব। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, একটি মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা কেমন হতে পারে। নির্বাচনের আগে ও পরে দলটি কীভাবে প্রভাব ব্যবস্থাপনা করতে পারে।

শক্তি ও ইতিবাচক দিক : বিএনপি এমন এক সময়ে জন্ম নেয়, যখন দেশের অর্থনীতি, কৃষি ও শিল্পে নতুন প্রাণ প্রয়োজন ছিল। গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, কৃষির আধুনিকায়ন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করার মতো কাজ বিএনপির অবদান হিসেবে স্বীকৃত।

অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও দলীয় কাঠামো: দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিএনপিকে অন্যান্য দলের তুলনায় অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে দলটির নতুন নেতৃত্ব রাষ্ট্র পরিচালনায় আরও পরিণত ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

তরুণ সমাজের প্রতি অঙ্গীকার: বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। বিএনপি কর্মমুখী শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক উদ্যোগ, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আইটি খাতকে প্রসারিত করার মাধ্যমে তরুণদের জাতীয় সম্পদে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি: দলটি সবসময়ই বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে। নির্বাচনী ইশতেহারেও তারা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করেছে, যা জাতীয় জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের দিশা দেখায়।
মধ্যপন্থা ও সমন্বিত জাতীয়তাবাদ : বাংলাদেশ একটি মডারেট মুসলিম কান্ট্রি। বিএনপি সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী এবং দেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে ধরে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা : যদিও প্রবন্ধে বিএনপির ইতিবাচক দিককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তথাপি ভারসাম্য রাখতে সীমাবদ্ধতাও উল্লেখ করা দরকার। ১. দেড় যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে গুম, খুন, হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের কারণে মাঠ পর্যায়ের সংগঠনে কিছুটা দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২. আধুনিক প্রচার কৌশলে (ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার) দুর্বলতা প্রকট। এ মাধ্যমে ইতিবাচক প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। ৩. জনগণের মাঝে দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে হবে।

সুযোগ ও সম্ভাবনা : ১. অর্থনৈতিক পুনর্গঠন : বাংলাদেশ বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনায় বিএনপি কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। ২. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি বরাবরই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স¤পর্ক বজায় রেখেছে। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মুসলিম বিশ্বসহ সব দেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করার নীতি বিএনপির অন্যতম শক্তি হতে পারে। ৩. তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার সুযোগ : ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক তরুণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। বিএনপি যদি তাদের কাছে ইতিবাচক কর্মসূচি তুলে ধরতে পারে, তবে এটি হবে একটি বড় শক্তি। ৪. সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি হ্রাস, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিএনপিকে জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি : ১. প্রতিপক্ষের বিভিন্ন অপপ্রচার রোধে বিএনপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মোকাবোলায় বিএনপিকে আরও সংগঠিত ও কার্যকর মিডিয়া কৌশল নিতে হবে। ২. বৈশ্বিক নতুন মেরুকরণ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এগুলো মোকাবিলায় বিএনপিকে যুগোপযোগী নীতি ও পদক্ষেপ নিতে হবে। ৩. যুব সমাজের প্রত্যাশাÑ দ্রুত কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি ও শিক্ষা ব্যবস্থার যুগোপযুগী পরিবর্তন চায়। বিএনপিকে এসব বিষয়ে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ধর্মীয় মূল্যবোধ : বিএনপি একটি মধ্যপন্থী দল। দলটি বিশ্বাস করে, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, আর রাষ্ট্র সবার। নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সবার সমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা : বিএনপির উচিৎ, জনগণের মাঝে শান্তিপূর্ণ প্রচার অভিযান পরিচালনা করা। নির্বাচনী ইশতেহার স্পষ্টভাবে প্রচার করা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছানো। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গঠনের অঙ্গীকার। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের ভূমিকা শক্তিশালী করা। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা। তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। এই শক্তিকে সুসংগঠিত করার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও জনসমর্থন। বিএনপি তার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণকে একটি ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিশা দেখাতে পারে। বিএনপির শক্তি ও সুযোগ যথেষ্ট রয়েছে। সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। দলটির এই অভিজ্ঞতা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ থাকলেও যথাযথ নীতি ও নেতৃত্বের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, দায়িত্বশীল ও উন্নয়নমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা এখন অপরিহার্য।

লেখক : ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই।

চেয়ারম্যান, নিউ হোপ গ্লোবাল; মানবাধিকার সংগঠক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশ ও বিএনপি : আগামী নির্বাচনে সম্ভাবনার দিগন্ত

রাজনীতি ডেস্ক
Update Time : ১১:১৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে দেশ আজ বৈশ্বিক অঙ্গনে নতুনভাবে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলছে। তবে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবেশ ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের নেতৃত্বে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি দেশের উন্নয়ন ধারাকে নতুন গতি দিয়েছিল। আজও দলটি জাতীয় রাজনীতিতে এক প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। এই নিবন্ধে বিএনপির নির্বাচনী সম্ভাবনা, শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও হুমকি নিয়ে বিশ্লেষণের চেষ্ট করব। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, একটি মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা কেমন হতে পারে। নির্বাচনের আগে ও পরে দলটি কীভাবে প্রভাব ব্যবস্থাপনা করতে পারে।

শক্তি ও ইতিবাচক দিক : বিএনপি এমন এক সময়ে জন্ম নেয়, যখন দেশের অর্থনীতি, কৃষি ও শিল্পে নতুন প্রাণ প্রয়োজন ছিল। গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, কৃষির আধুনিকায়ন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করার মতো কাজ বিএনপির অবদান হিসেবে স্বীকৃত।

অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও দলীয় কাঠামো: দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিএনপিকে অন্যান্য দলের তুলনায় অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে দলটির নতুন নেতৃত্ব রাষ্ট্র পরিচালনায় আরও পরিণত ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

তরুণ সমাজের প্রতি অঙ্গীকার: বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। বিএনপি কর্মমুখী শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক উদ্যোগ, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আইটি খাতকে প্রসারিত করার মাধ্যমে তরুণদের জাতীয় সম্পদে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি: দলটি সবসময়ই বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে। নির্বাচনী ইশতেহারেও তারা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করেছে, যা জাতীয় জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের দিশা দেখায়।
মধ্যপন্থা ও সমন্বিত জাতীয়তাবাদ : বাংলাদেশ একটি মডারেট মুসলিম কান্ট্রি। বিএনপি সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী এবং দেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে ধরে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা : যদিও প্রবন্ধে বিএনপির ইতিবাচক দিককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তথাপি ভারসাম্য রাখতে সীমাবদ্ধতাও উল্লেখ করা দরকার। ১. দেড় যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে গুম, খুন, হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের কারণে মাঠ পর্যায়ের সংগঠনে কিছুটা দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২. আধুনিক প্রচার কৌশলে (ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার) দুর্বলতা প্রকট। এ মাধ্যমে ইতিবাচক প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। ৩. জনগণের মাঝে দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে হবে।

সুযোগ ও সম্ভাবনা : ১. অর্থনৈতিক পুনর্গঠন : বাংলাদেশ বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনায় বিএনপি কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। ২. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি বরাবরই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স¤পর্ক বজায় রেখেছে। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মুসলিম বিশ্বসহ সব দেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করার নীতি বিএনপির অন্যতম শক্তি হতে পারে। ৩. তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার সুযোগ : ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক তরুণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। বিএনপি যদি তাদের কাছে ইতিবাচক কর্মসূচি তুলে ধরতে পারে, তবে এটি হবে একটি বড় শক্তি। ৪. সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি হ্রাস, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিএনপিকে জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি : ১. প্রতিপক্ষের বিভিন্ন অপপ্রচার রোধে বিএনপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মোকাবোলায় বিএনপিকে আরও সংগঠিত ও কার্যকর মিডিয়া কৌশল নিতে হবে। ২. বৈশ্বিক নতুন মেরুকরণ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এগুলো মোকাবিলায় বিএনপিকে যুগোপযোগী নীতি ও পদক্ষেপ নিতে হবে। ৩. যুব সমাজের প্রত্যাশাÑ দ্রুত কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি ও শিক্ষা ব্যবস্থার যুগোপযুগী পরিবর্তন চায়। বিএনপিকে এসব বিষয়ে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ধর্মীয় মূল্যবোধ : বিএনপি একটি মধ্যপন্থী দল। দলটি বিশ্বাস করে, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, আর রাষ্ট্র সবার। নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সবার সমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা : বিএনপির উচিৎ, জনগণের মাঝে শান্তিপূর্ণ প্রচার অভিযান পরিচালনা করা। নির্বাচনী ইশতেহার স্পষ্টভাবে প্রচার করা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছানো। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গঠনের অঙ্গীকার। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের ভূমিকা শক্তিশালী করা। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা। তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। এই শক্তিকে সুসংগঠিত করার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও জনসমর্থন। বিএনপি তার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণকে একটি ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিশা দেখাতে পারে। বিএনপির শক্তি ও সুযোগ যথেষ্ট রয়েছে। সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। দলটির এই অভিজ্ঞতা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ থাকলেও যথাযথ নীতি ও নেতৃত্বের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, দায়িত্বশীল ও উন্নয়নমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা এখন অপরিহার্য।

লেখক : ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই।

চেয়ারম্যান, নিউ হোপ গ্লোবাল; মানবাধিকার সংগঠক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।