ঢাকা ০৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে ৯ করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক
  • Update Time : ১২:১৩:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৫৩ Time View

অ্যানথ্রাক্স একটি প্রাণীবাহিত সংক্রামক রোগ

দেশের বিভন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগ। এটি প্রাণীবাহিত একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া—এ ধরনের প্রাণী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছোট গুটি আকারের, যেটিকে স্পোর বলে। এই স্পোর মাটিতে অনুকূল পরিবেশে অনেক বছর, দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকতে সক্ষম। সুস্থ গবাদিপশু ঘাস খেতে যায় মাঠে, সেখানে যদি অ্যানথ্রাক্সের স্পোর থাকে এবং ঘাস খাওয়ার সময় মুখের কোণায় কেটে গেলে সেখান দিয়ে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু অনুপ্রবেশ করতে পারে। আর এভাবে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে গেলে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর জন্য অনেকে জবাই করে মাংস বিক্রি করতে চায়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত পশু জবাই করার পর মাংস, রক্ত, চামড়ার সংস্পর্শ থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না, আক্রান্ত প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়।

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় এমন প্রশ্নে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন তৈরি করেছে আইইডিসিআর। সেই অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য মলম, ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অ্যানথ্রাক্সের ধরন বুঝে রোগীকে গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে রোগের জটিলতা বাড়বে।

প্রতিরোধে করণীয়
১. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু এবং এ রোগে মৃত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

২. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই বন্ধ করতে হবে।

৩. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস বিক্রি এবং খাওয়া যাবে না।

৪. আক্রান্ত ও অসুস্থ পশুর চিকিৎসার জন্য প্রাণীসম্পদ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

৫. যারা পশুশ্রমিক, কসাই নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

৬. পশুদের নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।

৭. এছাড়া উপদ্রুত বা যে এলাকায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হবে তার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব চার-পেয়ে প্রাণীকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।

৮. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু মারা গেলে পুড়িয়ে ফেললে সবচেয়ে ভালো। সেটি সম্ভব না হলে মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।

৯. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অসুস্থ গরু বিক্রি ও জবাই করে মাংস কাটার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। নিয়মিত মাংসের দোকান পরিদর্শন করতে হবে এর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য।

Please Share This Post in Your Social Media

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে ৯ করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক
Update Time : ১২:১৩:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

দেশের বিভন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগ। এটি প্রাণীবাহিত একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া—এ ধরনের প্রাণী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছোট গুটি আকারের, যেটিকে স্পোর বলে। এই স্পোর মাটিতে অনুকূল পরিবেশে অনেক বছর, দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকতে সক্ষম। সুস্থ গবাদিপশু ঘাস খেতে যায় মাঠে, সেখানে যদি অ্যানথ্রাক্সের স্পোর থাকে এবং ঘাস খাওয়ার সময় মুখের কোণায় কেটে গেলে সেখান দিয়ে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু অনুপ্রবেশ করতে পারে। আর এভাবে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে গেলে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর জন্য অনেকে জবাই করে মাংস বিক্রি করতে চায়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত পশু জবাই করার পর মাংস, রক্ত, চামড়ার সংস্পর্শ থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না, আক্রান্ত প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়।

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় এমন প্রশ্নে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন তৈরি করেছে আইইডিসিআর। সেই অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য মলম, ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অ্যানথ্রাক্সের ধরন বুঝে রোগীকে গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে রোগের জটিলতা বাড়বে।

প্রতিরোধে করণীয়
১. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু এবং এ রোগে মৃত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

২. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই বন্ধ করতে হবে।

৩. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস বিক্রি এবং খাওয়া যাবে না।

৪. আক্রান্ত ও অসুস্থ পশুর চিকিৎসার জন্য প্রাণীসম্পদ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

৫. যারা পশুশ্রমিক, কসাই নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

৬. পশুদের নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।

৭. এছাড়া উপদ্রুত বা যে এলাকায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হবে তার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব চার-পেয়ে প্রাণীকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।

৮. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু মারা গেলে পুড়িয়ে ফেললে সবচেয়ে ভালো। সেটি সম্ভব না হলে মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।

৯. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অসুস্থ গরু বিক্রি ও জবাই করে মাংস কাটার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। নিয়মিত মাংসের দোকান পরিদর্শন করতে হবে এর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য।