ঢাকা ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সিলেট

ট্রেন উদ্ধার করে ফেরার পথে প্রাণ গেল রেলওয়ে প্রকৌশলীর

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
  • Update Time : ১১:১১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৮৯ Time View

সিলেটের মোগলাবাজার রেলস্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলওয়ে সেকশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোজাম্মেল হক।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানান কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রোমান আহমদ।

তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মোগলাবাজার এলাকায় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথ উদ্ধার ও চলাচল স্বাভাবিক করতে কুলাউড়া থেকে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক ঘটনাস্থলে যান। কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন এলাকায় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান। এদিকে দুর্ঘটনার বিষয়টি কুলাউড়া থানা ও রেলওয়ে থানা অবগত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে,সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে চালকসহ ৬-৭জন আহত হযেছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে দায়িত্বরত দুজনকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তবে কমিটির সদস্যদের নাম জানাননি তিনি। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, ঢাকা এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে,এ দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনা কবলিত উদয়ন এক্সপ্রেস-এ দায়িত্বরত দুজন কর্মীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে বলে লেলওয়ে সূত্র জানায়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
এ দুর্ঘটনায় সারাদেশের রেল যোগা যোগ আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তবে লাইনচ্যুত বগি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে লাইন সচল হয়। এরপর আটকে পড়া ‘কালনী এক্সপ্রেস’ মোগলাবাজার থেকে ঢাকার উদেশে ছেড়ে যায় বলে সিলেট রেল স্টেশনের ম্যানেজার মো. নরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

এর আগে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও একাধিক বগি মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে মোগলাবাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়। এরপর সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা একটি লাইন সচল করলে আড়াই ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ আবার চালু হয়। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে সিলেট রেল স্টেশনের ম্যানেজার নরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

আর সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী ট্রেন এসে দুর্ঘটনা কবলিত ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধার করবে। আজকের মধ্যে লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে, সিলেট থেকে ইঞ্জিন এনে, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বাকী বগিগুলো উদ্ধার করে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মোগলাবাজার রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে সিগন্যাল অমান্য ও বাড়তি গতির কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নির্বাহী অফিসার উর্মি রায় জানান, দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন চালকসহ ৬-৭ জন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা বলেন,কোন যাত্রী গুরুতর আহত হননি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেট

ট্রেন উদ্ধার করে ফেরার পথে প্রাণ গেল রেলওয়ে প্রকৌশলীর

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
Update Time : ১১:১১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সিলেটের মোগলাবাজার রেলস্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলওয়ে সেকশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোজাম্মেল হক।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানান কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রোমান আহমদ।

তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মোগলাবাজার এলাকায় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথ উদ্ধার ও চলাচল স্বাভাবিক করতে কুলাউড়া থেকে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক ঘটনাস্থলে যান। কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন এলাকায় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান। এদিকে দুর্ঘটনার বিষয়টি কুলাউড়া থানা ও রেলওয়ে থানা অবগত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে,সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে চালকসহ ৬-৭জন আহত হযেছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে দায়িত্বরত দুজনকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তবে কমিটির সদস্যদের নাম জানাননি তিনি। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, ঢাকা এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে,এ দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনা কবলিত উদয়ন এক্সপ্রেস-এ দায়িত্বরত দুজন কর্মীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে বলে লেলওয়ে সূত্র জানায়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
এ দুর্ঘটনায় সারাদেশের রেল যোগা যোগ আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তবে লাইনচ্যুত বগি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে লাইন সচল হয়। এরপর আটকে পড়া ‘কালনী এক্সপ্রেস’ মোগলাবাজার থেকে ঢাকার উদেশে ছেড়ে যায় বলে সিলেট রেল স্টেশনের ম্যানেজার মো. নরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

এর আগে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও একাধিক বগি মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে মোগলাবাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়। এরপর সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা একটি লাইন সচল করলে আড়াই ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ আবার চালু হয়। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে সিলেট রেল স্টেশনের ম্যানেজার নরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

আর সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী ট্রেন এসে দুর্ঘটনা কবলিত ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধার করবে। আজকের মধ্যে লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে, সিলেট থেকে ইঞ্জিন এনে, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বাকী বগিগুলো উদ্ধার করে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মোগলাবাজার রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে সিগন্যাল অমান্য ও বাড়তি গতির কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নির্বাহী অফিসার উর্মি রায় জানান, দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন চালকসহ ৬-৭ জন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা বলেন,কোন যাত্রী গুরুতর আহত হননি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।