ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগারগাঁওয়ের ‘ভাইরাল কেকের’ সুবাদে জমজমাট ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:৩৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১১৭ Time View

আগারগাঁওয়ের ‘ভাইরাল কেকের’ সুবাদে জমজমাট মেলা

সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে আইসিটি টাওয়ারের বিপরীত দিকে বসে ‘ভাইরাল জাকিরের’ কেকের দোকান।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নাম এখন ‘কেকপট্টি’ রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বানানো মেট্রোর ‘কেকপট্টি’ স্টেশনের ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে এই হালকা চালের মজার পেছনে কারণ আছে। সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কটিতে রোজ বিকেলে উপস্থিত হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। রীতিমতো মেলা বসে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে কেক বিক্রেতাদের উপস্থিতি।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরে বানানো কেক নিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন বিক্রেতারা। তার মধ্যে নারী বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। সুলভে কেক খাওয়ার সুযোগ আর একই সঙ্গে বেড়ানোর ইচ্ছা মিলে রোজকার উৎসবে পরিণত হচ্ছে আগারগাঁওয়ের এ জায়গা।

এখানে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরেই পথের পাশে খাবার বিক্রি হলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন জমজমাট হয়েছে ‘ভাইরাল কেকের’ সুবাদে। আর সেই কেক ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক, ইউটিউবের সুবাদে। অন্তত এখানকার কেক বিক্রেতারা তাই মনে করেন। ক্রেতারাও বললেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেই কেক খেতে এসেছেন।

টেবিল ছাড়াও এখানে কেউ কেউ নিজেদের গাড়িতে রেখে বিক্রি করছেন কেক। মখমলের মতো নরম আর দুধ সাদা কেকের ওপর রুপালি বল, আমের ঘ্রাণ মেশানো কেকের টপারে নীল ফুল বা চিরাচরিত চকলেট ক্রিমের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে খোপ কাটা ঘরের নকশা করা রসমালাই কেক। সড়কে বসা দোকানগুলোয় হরেক পদের কেক মিলছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন থেকে নেমে নির্বাচন ভবনের দিকে যাওয়ার পথে স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের পর থেকে শুরু হয় এই কেকের দোকান। সেখানে গত সোমবার বিকেলে শুরুতেই দেখা গেল ‘সুগার হুইল’ ব্যানার লেখা একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। এটি আসলে গাড়ির বনেট। সেখানে কেক রেখে বিক্রি করছিলেন সাফা নামের একজন নারী। তিনি সোমবার নবম দিনের মতো এসেছিলেন বলে জানালেন। বললেন, যা আনেন সবই বিক্রি হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন তিন থেকে চারজন সহকর্মী। কথা বলতে বলতেই বিক্রি হয়ে গেল দুই পিস ভ্যানিলা আর ওভারলোডেড চকলেট কেক।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরে বানানো কেক নিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন বিক্রেতারা। তার মধ্যে নারী বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। সুলভে কেক খাওয়ার সুযোগ আর একই সঙ্গে বেড়ানোর ইচ্ছা মিলে রোজকার উৎসবে পরিণত হচ্ছে আগারগাঁওয়ের এ জায়গা।
সামনে এগিয়ে ‘রূপস কেক জোনে’ও একই দৃশ্য। এখানে গাড়ির বনেট শোরুম। তুমুল ব্যস্ত নারী কেক দেবেন না কথা বলবেন—বুঝতে পারছিলেন না। তাঁর চারটি কেক ততক্ষণে শেষ। এখানেও ১০০ থেকে ১২০ ও ১৫০ টাকা পিস কেক বিক্রি হচ্ছে। এই নারী উদ্যোক্তা জানালেন, কেকের উপকরণ হিসেবে দাম কমবেশি হয়।

ঘুরে ঘুরে এখানকার এই মেলার অধিকাংশ দোকানে কথা বলে জানা গেল, সবাই নিজের বাসায় কেক বানিয়ে এখানে বিক্রি করতে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁরা আসেন বিকালে। কেক বিক্রি হয়ে গেলেই ফিরে যান।

তবে কে কোথায় বসবেন, এ নিয়ে একটু ঝামেলা কমবেশি রোজই হচ্ছে। বিক্রেতাদের মতে, ক্রেতারা মাঝের দোকানগুলোয় কম উপস্থিত হন। ফলে সবাই দুই প্রান্তের শুরুর দিকে বসতে চান।রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কটিতে কেক খেতে রোজ বিকেলে উপস্থিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। রীতিমতো মেলা বসে যাচ্ছে।

নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কে আরও কয়েক বছর আগে থেকেই ভ্রাম্যমাণ দোকানদারেরা বসেন। বিকেল হলে মানুষ এখানে খেতে ও ঘুরতে আসে। তবে এ জায়গা সম্প্রতি বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে ওঠে কেক বিক্রির সুবাদে। হঠাৎ এত কেক বিক্রেতা একসঙ্গে উপস্থিত হয়ে এ ভিড় জমিয়ে তুলেছেন। ঝামেলা হচ্ছে, এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো নিয়ে।

ভাইরাল জাকিরের পর ‘সিমি আপা’ নামে একজন কেক বিক্রেতা ভাইরাল হয়েছেন। এই নারীর ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় এতই বেশি যে তাঁকে টোকেন দিয়ে ক্রেতার সিরিয়াল সামলাতে হচ্ছে এখন। হঠাৎ এই ভাইরাল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র সপ্তাহ তিন হয়।
এখানে আইসিটি টাওয়ারের বিপরীত দিকের পথে পাওয়া গেল সেই ভাইরাল জাকিরের দোকান। ‘লাখ টাকার কেক’, ‘আগুন কেক’ ইত্যাদি কেকের খবর দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন। তিনি যেখানে প্রতিদিন বসছেন, সেখানে দেড় বছর ধরেই বসছেন বলে দাবি করেন। তবে তাঁর কেক ভাইরাল হওয়ায় তাঁর দোকান নিয়েও আগ্রহ বেড়েছে। সরকারি সড়ক হওয়ায় তাঁর দোকানের জায়গায় কেউ আগে এলেই টেবিল বিছিয়ে বসে যাচ্ছেন। আর এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে প্রায়ই। তাঁর দোকান আবার স্থানান্তর করতে হচ্ছে আরেক জায়গায়। কখনো কখনো এ নিয়ে দুই পক্ষের বাহাস হচ্ছে।

গত সোমবার বিকেলে সেই ভাইরাল জাকিরের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, ইউটিউবার ও টিকটক ভিডিও নির্মাতারা তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। তিনি কথা বলতে বলতে সমানতালে কেক কেটে বিক্রি করছেন। অতি ভিড়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলো না।

তবে এই ভাইরাল কেক বিক্রেতার পাশের দোকান থেকে জানাল, রোজই এই সড়কে ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের মধ্যে স্থান পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। কারও দোকানে বেশি বিক্রি হলেই আরেক বিক্রেতা পরদিন সেখানে বসার চেষ্টা করছেন।

তবে এসব ঘটনা এখানে আসা কেক ক্রেতাদের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। তাঁরা এসেছেন ব্যাপারটা দেখতে। হঠাৎ এত মানুষ কেন এখানে একসঙ্গে এত কেক বিক্রি করছেন, সেই আগ্রহ থেকে। তাঁদের অধিকাংশই আসছেন ফেসবুকে ভাইরাল কেকের খবর পেয়ে। একেকজন অন্তত ৭ থেকে ৮টি কেক আনছেন। কেউ কেউ ১৫টি পর্যন্ত কেক আনছেন। এসবই তাঁদের ঘরে বানানো কেক বলে দাবি করলেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কেক বিক্রেতারা।

তবে হঠাৎ কেন সবাই কেকের মতো একটি শৌখিন খাবার নিয়ে এত মেতে উঠলেন? সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা এই কেকের মেলায় উপস্থিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের অধিকাংশই আসছেন ফেসবুকে এ জায়গার ভিডিও দেখে।

ভাইরাল জাকিরের পর ‘সিমি আপা’ নামে একজন কেক বিক্রেতা ভাইরাল হয়েছেন। এই নারীর ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় এতই বেশি যে তাঁকে টোকেন দিয়ে ক্রেতার সিরিয়াল সামলাতে হচ্ছে এখন। হঠাৎ এই ভাইরাল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র সপ্তাহ তিন হয়।

এখানে উপস্থিত কেক বিক্রেতা মো. কামরুল হাসান জানালেন, তিনি এখানে আসেন তিন সপ্তাহ হলো। তিনি এসেছেন দক্ষিণ কাফরুল থেকে। তিন সপ্তাহ আগেও এখানে এত বেশি দোকান ছিল না। সব ধরনের খাবারের দোকান মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি দোকান ছিল। এখন শুধু কেকের দোকানই প্রায় ১০০।

এই দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে কেক খাচ্ছিলেন এক দম্পতি। তাঁরা জানালেন, ব্লুবেরি কেক এক পিস খেয়েছেন ১০০ টাকা দিয়ে। আর রসমালাই কেক কিনেছেন দেড়শ টাকা পিস। এরপর বাটার স্কচও এক পিস খাবেন। দুজন মিলে তিন রকম ফ্লেভারের তিন পিস কেক খাওয়া হবে তাঁদের। এটা প্রচলিত কেক পেস্ট্রির দোকান থেকে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের মতো অন্য কেক ক্রেতারাও এসেছেন ফেসবুকে দেখে দেখে। তাঁদের মতে, ফেসবুকই জনপ্রিয় করেছে এই জায়গা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখা গেল, কেকের ভিডিওতে সয়লাব। হঠাৎ কেক নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কী, জানতে চাইলে এখানকার নামহীন ও নামসমেত দোকানের বিক্রেতারা জানালেন, তাঁরা সবাই আগে থেকেই কেক বিক্রি করতেন। তাঁদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ আছে। এখানে একটা জমায়েত তৈরি হওয়ায় তাঁরা শুধু কেক নিয়ে এখন নিজেরা উপস্থিত হচ্ছেন। তবে কেক যেহেতু মূল খাবার নয়, ফলে এই মোহ একই রকম থাকবে না বলেও মনে করেন তাঁরা। হঠাৎ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় মানুষের মধ্যে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। এটা আবার মিলিয়ে যাবে। ফলে আগারগাঁওয়ের নাম ‘কেকপট্টি’ রাখার প্রস্তাব এটা নিছকই রসিকতা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

আগারগাঁওয়ের ‘ভাইরাল কেকের’ সুবাদে জমজমাট ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০১:৩৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে আইসিটি টাওয়ারের বিপরীত দিকে বসে ‘ভাইরাল জাকিরের’ কেকের দোকান।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নাম এখন ‘কেকপট্টি’ রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বানানো মেট্রোর ‘কেকপট্টি’ স্টেশনের ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে এই হালকা চালের মজার পেছনে কারণ আছে। সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কটিতে রোজ বিকেলে উপস্থিত হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। রীতিমতো মেলা বসে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে কেক বিক্রেতাদের উপস্থিতি।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরে বানানো কেক নিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন বিক্রেতারা। তার মধ্যে নারী বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। সুলভে কেক খাওয়ার সুযোগ আর একই সঙ্গে বেড়ানোর ইচ্ছা মিলে রোজকার উৎসবে পরিণত হচ্ছে আগারগাঁওয়ের এ জায়গা।

এখানে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরেই পথের পাশে খাবার বিক্রি হলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন জমজমাট হয়েছে ‘ভাইরাল কেকের’ সুবাদে। আর সেই কেক ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক, ইউটিউবের সুবাদে। অন্তত এখানকার কেক বিক্রেতারা তাই মনে করেন। ক্রেতারাও বললেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেই কেক খেতে এসেছেন।

টেবিল ছাড়াও এখানে কেউ কেউ নিজেদের গাড়িতে রেখে বিক্রি করছেন কেক। মখমলের মতো নরম আর দুধ সাদা কেকের ওপর রুপালি বল, আমের ঘ্রাণ মেশানো কেকের টপারে নীল ফুল বা চিরাচরিত চকলেট ক্রিমের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে খোপ কাটা ঘরের নকশা করা রসমালাই কেক। সড়কে বসা দোকানগুলোয় হরেক পদের কেক মিলছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন থেকে নেমে নির্বাচন ভবনের দিকে যাওয়ার পথে স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের পর থেকে শুরু হয় এই কেকের দোকান। সেখানে গত সোমবার বিকেলে শুরুতেই দেখা গেল ‘সুগার হুইল’ ব্যানার লেখা একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। এটি আসলে গাড়ির বনেট। সেখানে কেক রেখে বিক্রি করছিলেন সাফা নামের একজন নারী। তিনি সোমবার নবম দিনের মতো এসেছিলেন বলে জানালেন। বললেন, যা আনেন সবই বিক্রি হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন তিন থেকে চারজন সহকর্মী। কথা বলতে বলতেই বিক্রি হয়ে গেল দুই পিস ভ্যানিলা আর ওভারলোডেড চকলেট কেক।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরে বানানো কেক নিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন বিক্রেতারা। তার মধ্যে নারী বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। সুলভে কেক খাওয়ার সুযোগ আর একই সঙ্গে বেড়ানোর ইচ্ছা মিলে রোজকার উৎসবে পরিণত হচ্ছে আগারগাঁওয়ের এ জায়গা।
সামনে এগিয়ে ‘রূপস কেক জোনে’ও একই দৃশ্য। এখানে গাড়ির বনেট শোরুম। তুমুল ব্যস্ত নারী কেক দেবেন না কথা বলবেন—বুঝতে পারছিলেন না। তাঁর চারটি কেক ততক্ষণে শেষ। এখানেও ১০০ থেকে ১২০ ও ১৫০ টাকা পিস কেক বিক্রি হচ্ছে। এই নারী উদ্যোক্তা জানালেন, কেকের উপকরণ হিসেবে দাম কমবেশি হয়।

ঘুরে ঘুরে এখানকার এই মেলার অধিকাংশ দোকানে কথা বলে জানা গেল, সবাই নিজের বাসায় কেক বানিয়ে এখানে বিক্রি করতে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁরা আসেন বিকালে। কেক বিক্রি হয়ে গেলেই ফিরে যান।

তবে কে কোথায় বসবেন, এ নিয়ে একটু ঝামেলা কমবেশি রোজই হচ্ছে। বিক্রেতাদের মতে, ক্রেতারা মাঝের দোকানগুলোয় কম উপস্থিত হন। ফলে সবাই দুই প্রান্তের শুরুর দিকে বসতে চান।রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কটিতে কেক খেতে রোজ বিকেলে উপস্থিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। রীতিমতো মেলা বসে যাচ্ছে।

নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কে আরও কয়েক বছর আগে থেকেই ভ্রাম্যমাণ দোকানদারেরা বসেন। বিকেল হলে মানুষ এখানে খেতে ও ঘুরতে আসে। তবে এ জায়গা সম্প্রতি বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে ওঠে কেক বিক্রির সুবাদে। হঠাৎ এত কেক বিক্রেতা একসঙ্গে উপস্থিত হয়ে এ ভিড় জমিয়ে তুলেছেন। ঝামেলা হচ্ছে, এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো নিয়ে।

ভাইরাল জাকিরের পর ‘সিমি আপা’ নামে একজন কেক বিক্রেতা ভাইরাল হয়েছেন। এই নারীর ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় এতই বেশি যে তাঁকে টোকেন দিয়ে ক্রেতার সিরিয়াল সামলাতে হচ্ছে এখন। হঠাৎ এই ভাইরাল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র সপ্তাহ তিন হয়।
এখানে আইসিটি টাওয়ারের বিপরীত দিকের পথে পাওয়া গেল সেই ভাইরাল জাকিরের দোকান। ‘লাখ টাকার কেক’, ‘আগুন কেক’ ইত্যাদি কেকের খবর দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন। তিনি যেখানে প্রতিদিন বসছেন, সেখানে দেড় বছর ধরেই বসছেন বলে দাবি করেন। তবে তাঁর কেক ভাইরাল হওয়ায় তাঁর দোকান নিয়েও আগ্রহ বেড়েছে। সরকারি সড়ক হওয়ায় তাঁর দোকানের জায়গায় কেউ আগে এলেই টেবিল বিছিয়ে বসে যাচ্ছেন। আর এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে প্রায়ই। তাঁর দোকান আবার স্থানান্তর করতে হচ্ছে আরেক জায়গায়। কখনো কখনো এ নিয়ে দুই পক্ষের বাহাস হচ্ছে।

গত সোমবার বিকেলে সেই ভাইরাল জাকিরের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, ইউটিউবার ও টিকটক ভিডিও নির্মাতারা তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। তিনি কথা বলতে বলতে সমানতালে কেক কেটে বিক্রি করছেন। অতি ভিড়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলো না।

তবে এই ভাইরাল কেক বিক্রেতার পাশের দোকান থেকে জানাল, রোজই এই সড়কে ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের মধ্যে স্থান পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। কারও দোকানে বেশি বিক্রি হলেই আরেক বিক্রেতা পরদিন সেখানে বসার চেষ্টা করছেন।

তবে এসব ঘটনা এখানে আসা কেক ক্রেতাদের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। তাঁরা এসেছেন ব্যাপারটা দেখতে। হঠাৎ এত মানুষ কেন এখানে একসঙ্গে এত কেক বিক্রি করছেন, সেই আগ্রহ থেকে। তাঁদের অধিকাংশই আসছেন ফেসবুকে ভাইরাল কেকের খবর পেয়ে। একেকজন অন্তত ৭ থেকে ৮টি কেক আনছেন। কেউ কেউ ১৫টি পর্যন্ত কেক আনছেন। এসবই তাঁদের ঘরে বানানো কেক বলে দাবি করলেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কেক বিক্রেতারা।

তবে হঠাৎ কেন সবাই কেকের মতো একটি শৌখিন খাবার নিয়ে এত মেতে উঠলেন? সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা এই কেকের মেলায় উপস্থিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের অধিকাংশই আসছেন ফেসবুকে এ জায়গার ভিডিও দেখে।

ভাইরাল জাকিরের পর ‘সিমি আপা’ নামে একজন কেক বিক্রেতা ভাইরাল হয়েছেন। এই নারীর ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় এতই বেশি যে তাঁকে টোকেন দিয়ে ক্রেতার সিরিয়াল সামলাতে হচ্ছে এখন। হঠাৎ এই ভাইরাল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র সপ্তাহ তিন হয়।

এখানে উপস্থিত কেক বিক্রেতা মো. কামরুল হাসান জানালেন, তিনি এখানে আসেন তিন সপ্তাহ হলো। তিনি এসেছেন দক্ষিণ কাফরুল থেকে। তিন সপ্তাহ আগেও এখানে এত বেশি দোকান ছিল না। সব ধরনের খাবারের দোকান মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি দোকান ছিল। এখন শুধু কেকের দোকানই প্রায় ১০০।

এই দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে কেক খাচ্ছিলেন এক দম্পতি। তাঁরা জানালেন, ব্লুবেরি কেক এক পিস খেয়েছেন ১০০ টাকা দিয়ে। আর রসমালাই কেক কিনেছেন দেড়শ টাকা পিস। এরপর বাটার স্কচও এক পিস খাবেন। দুজন মিলে তিন রকম ফ্লেভারের তিন পিস কেক খাওয়া হবে তাঁদের। এটা প্রচলিত কেক পেস্ট্রির দোকান থেকে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের মতো অন্য কেক ক্রেতারাও এসেছেন ফেসবুকে দেখে দেখে। তাঁদের মতে, ফেসবুকই জনপ্রিয় করেছে এই জায়গা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখা গেল, কেকের ভিডিওতে সয়লাব। হঠাৎ কেক নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কী, জানতে চাইলে এখানকার নামহীন ও নামসমেত দোকানের বিক্রেতারা জানালেন, তাঁরা সবাই আগে থেকেই কেক বিক্রি করতেন। তাঁদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ আছে। এখানে একটা জমায়েত তৈরি হওয়ায় তাঁরা শুধু কেক নিয়ে এখন নিজেরা উপস্থিত হচ্ছেন। তবে কেক যেহেতু মূল খাবার নয়, ফলে এই মোহ একই রকম থাকবে না বলেও মনে করেন তাঁরা। হঠাৎ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় মানুষের মধ্যে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। এটা আবার মিলিয়ে যাবে। ফলে আগারগাঁওয়ের নাম ‘কেকপট্টি’ রাখার প্রস্তাব এটা নিছকই রসিকতা।