ঢাকা ১২:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের ১৩ বছরের ভোগান্তি থেকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

মোঃ হানিফ হোসেন
  • Update Time : ০৭:২২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১১০ Time View

গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের ১৩ বছরের ভোগান্তি থেকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

গাজীপুরে বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের নামে টানা ১৩ বছর ধরে চলমান উন্নয়ন কাজের ধীরগতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তির দাবিতে সর্বস্তরের জনগণ এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টঙ্গী কলেজ গেইট সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে “গাজীপুরবাসীর সর্বস্তরের জনগণ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে গাজীপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে গাজীপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে গাজীপুর-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাবিল ইউসুফ, টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান আরিফ, গাজীপুর মহানগর জাতীয় যুব শক্তির সিনিয়র সদস্য সচিব মো. তানজিল, এবি পার্টি জেলা ও মহানগর আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি, ছাত্রশিবির টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখার সেক্রেটারি ফারবেজ ফরাজি, আপ বাংলাদেশের নেতা ইব্রাহিম, এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন টঙ্গী পশ্চিম থানা শাখার আহ্বায়ক ফাহাদ ইসলাম ফুয়াদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিআরটি প্রকল্পের নামে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উন্নয়ন কাজ গাজীপুরবাসীর জীবনে এক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন যানজট, ধুলোবালি, খোঁড়াখুঁড়ি ও দুর্ঘটনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের নামে এই ভোগান্তি যেন এক অনন্ত দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অর্থনৈতিকভাবে চরম দুরবস্থায় পড়েছে।

প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান বলেন, বিআরটি প্রকল্পের দুর্নীতি, লুটপাট ও অদক্ষ বাস্তবায়নের কারণে গাজীপুরবাসী বছরের পর বছর ভোগান্তিতে আছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা ও চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে আমাদের ৯ দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরও জানান, এ ৯ দফা দাবি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি আকারে পাঠানো হবে। দাবিগুলো হলো জনগণের নিরাপদ চলাচলের জন্য অবিলম্বে সব ওভারব্রিজ চালু করা; বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের জন্য প্রতিটি ওভারব্রিজে এস্কেলেটর ও লিফট চালু রাখা; স্কুল-কলেজের সামনে জেব্রা ক্রসিং স্থাপন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা; টঙ্গী ব্রিজ সংস্কার করে সাধারণ যানবাহনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা; ফ্লাইওভারের উপর ও নিচে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে ছিনতাই রোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ফ্লাইওভারে ভারী ট্রাক উঠা বন্ধ রাখা এবং রাত ১২টার পর ট্রাক চলাচল সীমিত রাখা; বাসের জন্য নির্দিষ্ট বাস স্টপ ও ওয়েটিং লাইন তৈরি করা, যেন বাস রাস্তার মাঝখানে থেমে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি না করে; অরক্ষিত ম্যানহোলগুলোতে ঢাকনা স্থাপন করে ফুটপাত ও সড়ক পথ চলাচল নিরাপদ রাখা; এবং জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে কার্যকর ও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কারণে গাজীপুরবাসী ১৩ বছর ধরে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তারা আরও বলেন, এই প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি শুধু জনজীবনকেই বিপর্যস্ত করেনি, বরং সরকারের উন্নয়ন ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

শেষে বক্তারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন টঙ্গী শাখার সদস্যদের নিরলস ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান, যাতে গাজীপুরবাসী দীর্ঘ ১৩ বছরের এই দুর্ভোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের ১৩ বছরের ভোগান্তি থেকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

মোঃ হানিফ হোসেন
Update Time : ০৭:২২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

গাজীপুরে বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের নামে টানা ১৩ বছর ধরে চলমান উন্নয়ন কাজের ধীরগতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তির দাবিতে সর্বস্তরের জনগণ এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টঙ্গী কলেজ গেইট সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে “গাজীপুরবাসীর সর্বস্তরের জনগণ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে গাজীপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে গাজীপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে গাজীপুর-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাবিল ইউসুফ, টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান আরিফ, গাজীপুর মহানগর জাতীয় যুব শক্তির সিনিয়র সদস্য সচিব মো. তানজিল, এবি পার্টি জেলা ও মহানগর আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি, ছাত্রশিবির টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখার সেক্রেটারি ফারবেজ ফরাজি, আপ বাংলাদেশের নেতা ইব্রাহিম, এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন টঙ্গী পশ্চিম থানা শাখার আহ্বায়ক ফাহাদ ইসলাম ফুয়াদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিআরটি প্রকল্পের নামে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উন্নয়ন কাজ গাজীপুরবাসীর জীবনে এক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন যানজট, ধুলোবালি, খোঁড়াখুঁড়ি ও দুর্ঘটনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের নামে এই ভোগান্তি যেন এক অনন্ত দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অর্থনৈতিকভাবে চরম দুরবস্থায় পড়েছে।

প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান বলেন, বিআরটি প্রকল্পের দুর্নীতি, লুটপাট ও অদক্ষ বাস্তবায়নের কারণে গাজীপুরবাসী বছরের পর বছর ভোগান্তিতে আছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা ও চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে আমাদের ৯ দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরও জানান, এ ৯ দফা দাবি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি আকারে পাঠানো হবে। দাবিগুলো হলো জনগণের নিরাপদ চলাচলের জন্য অবিলম্বে সব ওভারব্রিজ চালু করা; বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের জন্য প্রতিটি ওভারব্রিজে এস্কেলেটর ও লিফট চালু রাখা; স্কুল-কলেজের সামনে জেব্রা ক্রসিং স্থাপন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা; টঙ্গী ব্রিজ সংস্কার করে সাধারণ যানবাহনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা; ফ্লাইওভারের উপর ও নিচে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে ছিনতাই রোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ফ্লাইওভারে ভারী ট্রাক উঠা বন্ধ রাখা এবং রাত ১২টার পর ট্রাক চলাচল সীমিত রাখা; বাসের জন্য নির্দিষ্ট বাস স্টপ ও ওয়েটিং লাইন তৈরি করা, যেন বাস রাস্তার মাঝখানে থেমে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি না করে; অরক্ষিত ম্যানহোলগুলোতে ঢাকনা স্থাপন করে ফুটপাত ও সড়ক পথ চলাচল নিরাপদ রাখা; এবং জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে কার্যকর ও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কারণে গাজীপুরবাসী ১৩ বছর ধরে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তারা আরও বলেন, এই প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি শুধু জনজীবনকেই বিপর্যস্ত করেনি, বরং সরকারের উন্নয়ন ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

শেষে বক্তারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন টঙ্গী শাখার সদস্যদের নিরলস ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান, যাতে গাজীপুরবাসী দীর্ঘ ১৩ বছরের এই দুর্ভোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।