দীর্ঘ বন্ধের পর অবশেষে খুলছে বাকৃবি ক্যাম্পাস

- Update Time : ১১:১৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ২০ Time View
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) দীর্ঘ ৩৪ দিনের স্থবিরতার অবসান ঘটতে চলেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস পরীক্ষা শুরু হবে। এর আগে গত ৩ অক্টোবর সকাল ৯ টা থেকে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ আবাসিক হলসমূহে উঠতে শুরু করেছে।
জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ ১৫ আহত হন। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেদিন রাত সাড়ে নয়টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরী সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়র আবাসিক হলে অবস্থানরত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এর আগে একইদিন সকাল ১১ টায় কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে একটি একাডেমিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। দুপুর দেড়টায় শিক্ষা পরিষদ তিন ডিগ্রির প্রস্তাব করলে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় উপস্থিত শিক্ষকদের ৮ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং হল বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলে হয়েছে, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই আগামী ০৫ অক্টোবর থেকে যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসসমূহ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন এবং ইনস্টিটিউটের পরিচালক মহোদয়গণ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবেন। আগামী ৩ অক্টোবর সকাল ৯টা হতে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ আবাসিক হলসমূহে উঠতে পারবে।’
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দেয়। যেমনটি কুয়েট দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার সময় হয়েছিল। তবে বাকৃবি প্রশাসন ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বরই ক্যাম্পাস খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা সবার প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালু হওয়ার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সবাই আরও দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, যাতে শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম জানায়, ‘দীর্ঘ ৩৫ দিন পর বাকৃবি ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে এতে আমরা আনন্দিত। যদিও আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ৭ সেপ্টেম্বরেই, ফলে সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবুও আমরা আশাবাদী, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে সেই আশঙ্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে। গত কয়েকদিনে বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা আশা করি, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপে এমন ঘটনা আর ঘটবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকবে।’
একই অনুষদের অন্য এক শিক্ষার্থী মো. আলিফ রিয়াদ খান বলেন, ‘দীর্ঘ বিরতির পর ক্লাস শুরু হওয়াটা সবার জন্য স্বস্তিদায়ক। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান ঘটেছে। শিক্ষাজীবনের স্থবিরতা কাটিয়ে এখন সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ও সহনশীল হতে হবে, যাতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকে। পাশাপাশি সেশনজট নিরসনে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আগামীকাল থেকে ক্যাম্পাসে খুলছে। দীর্ঘ বিরতির পর খুলতেছে, অতীতে কি হয়েছে আমরা আর পিছনে না তাকাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ইতিবাচক ভাবে আমরা সকলে অগ্রসর হই, এটাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য হবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং আগের চেয়েও উন্নত এক বাকৃবি গড়ে তোলা।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়