ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা

রাবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:০২:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৩৭ Time View

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পোষ্য কোটা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ এনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে লিচুতলায় সকাল থেকে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে কর্মসূচিতে রাকসুর সব কার্যক্রমসহ জরুরি সেবা কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।

সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, আমাদের উপ-উপাচার্য এবং কর্মকর্তাদের হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের দৃশ্যমান বিচার কার্যকর এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানিক দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন থাকবে। চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎসহ জরুরি প্রয়োজন এ কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। তবে ক্লাশ-পরীক্ষা এই কর্মসূচির আওতায় থাকবে।

রাকসুর বিষয়ে তিনি বলেন, এই কর্মসূচির কারণে রাকসু পিছিয়ে গেলে সেটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।

সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- ধস্তাধস্তির ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন; রাকসু নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে; প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্যকোটা) আপাতত স্থগিত থাকবে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন বৈঠক শেষে কমিশন সদস্য মোস্তাফা কামাল আকন্দ বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখলে রাকসু নির্বাচন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরই অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাশের আমতলায় অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে সকালে ক্যাম্পাসে সব একাডেমিক ভবনের ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ভবনও খুলেছে। শিক্ষার্থীদেরও বাসে করে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৌনে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে, কেউ নিজস্ব বাহনে করে ক্যাম্পাসে আসছেন। তবে তারা জানান কোনো কাজ করবেন না।

এর আগে, শনিবার দুপুর আড়াইটা থেকে শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তার বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তার সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন। পরে উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন মাটিতে পড়ে যান। এছাড়া শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বেশকিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এমন পরিস্থিতিতে রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম।

রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন। এতে উপ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, রোববার এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে।

তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে রাত গভীর হওয়ায় ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে চলে যেতে শুরু করেন।

এর আগে রাত দেড়টার দিকে নিজ বাসভবনের ফটকের কাছে আসেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। মাইকে তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

রাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা

রাবি প্রতিনিধি
Update Time : ১২:০২:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পোষ্য কোটা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ এনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে লিচুতলায় সকাল থেকে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে কর্মসূচিতে রাকসুর সব কার্যক্রমসহ জরুরি সেবা কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।

সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, আমাদের উপ-উপাচার্য এবং কর্মকর্তাদের হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের দৃশ্যমান বিচার কার্যকর এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানিক দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন থাকবে। চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎসহ জরুরি প্রয়োজন এ কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। তবে ক্লাশ-পরীক্ষা এই কর্মসূচির আওতায় থাকবে।

রাকসুর বিষয়ে তিনি বলেন, এই কর্মসূচির কারণে রাকসু পিছিয়ে গেলে সেটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।

সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- ধস্তাধস্তির ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন; রাকসু নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে; প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্যকোটা) আপাতত স্থগিত থাকবে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন বৈঠক শেষে কমিশন সদস্য মোস্তাফা কামাল আকন্দ বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখলে রাকসু নির্বাচন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরই অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাশের আমতলায় অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে সকালে ক্যাম্পাসে সব একাডেমিক ভবনের ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ভবনও খুলেছে। শিক্ষার্থীদেরও বাসে করে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৌনে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে, কেউ নিজস্ব বাহনে করে ক্যাম্পাসে আসছেন। তবে তারা জানান কোনো কাজ করবেন না।

এর আগে, শনিবার দুপুর আড়াইটা থেকে শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তার বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তার সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন। পরে উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন মাটিতে পড়ে যান। এছাড়া শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বেশকিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এমন পরিস্থিতিতে রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম।

রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন। এতে উপ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, রোববার এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে।

তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে রাত গভীর হওয়ায় ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে চলে যেতে শুরু করেন।

এর আগে রাত দেড়টার দিকে নিজ বাসভবনের ফটকের কাছে আসেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। মাইকে তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।