রসিকের লাইসেন্স বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ, সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধর

- Update Time : ০৭:০৮:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৩১ Time View
সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে লিয়াকত আলী বাদল নামের ওই সাংবাদিককে নগরীর কাচারী বাজার থেকে তুলে নিয়ে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।
লিয়াকত আলী বাদল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও একটি দৈনিক পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ‘‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা” শিরোনাম একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। লিয়াকত আলী বাদলের অভিযোগ, রকি নামের এক ব্যক্তি ও তার লোকজন তাকে (লিয়াকত) তুলে নিয়ে মারধর করেছেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে সাংবাদিককে মারধরের প্রতিবাদে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) সামনে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও পেশাজীবী সাংবাদিকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে রসিকের কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা চালান এবং সিটি করপোরেশন থেকে বের করে দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ সময় দুজন আহত হন। রোববার বেলা ১টার দিকে রংপুর সিটি করপোরেশনে এ ঘটনা।
নির্যাতনের শিকার সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের দাবি, রংপুর সিটি করপোরেশনে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ায় দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি সংবাদ করায় তাকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনারের (রসিক) নির্দেশে তার রকি এবং লোকজন আমাকে আজ কাচারি বাজার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং জোর করে ক্ষমা চাইতে বলে। আমি অন্যায় করিনি, তাই ক্ষমা চাইনি। আমি ন্যায়বিচার চাই।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, বাদল একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রংপুর বিভাগের সাংবাদিক সমাজের সদস্যসচিব। তাকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলন হবে
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, হামলার মাস্টারমাইন্ড সিটি করপোরেশনের সিইও। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় সারা দেশে সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রিপোর্টাস ক্লাব রংপুরের সভাপতি শাহ্ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে—এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি। সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন সাংবাদিককে তুলে এনে মারধর করা নজিরবিহীন ও চরম উদ্বেগজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহার চাই।
সিটি প্রেসক্লাব রংপুর এর সভাপতি স্বপন চৌধুরী বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে মারধর, লাঞ্ছিত ও মব সৃষ্টির ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেবে না সাংবাদিক সমাজ। রংপুরে চাকরি করবেন, দুর্নীতি করবেন আর আপনাদের অপকর্মের কথা লিখলেই সাংবাদিকদের হেনস্থা করবেন-সেই দিন ভুলে যান। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় নেপথ্যের ইন্ধনদাতাসহ জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে করছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে একজনের নাম জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিজু বলেন, কে বা কারা তাকে (লিয়াকত) লাঞ্ছিত করেছে তা আমার জানা নেই। তারা (সাংবাদিকরা) দুপুরে সিটি করপোরেশনের ভিতরে এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সেখানে আমি গিয়ে তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে আমার ওপর চড়াও হয়ে ধাক্কাধাক্কি করেন। আমার পরনে থাকা শার্ট ছিড়ে গেছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়ে উল্টো আমি নিজেই লাঞ্ছিত হয়েছি।
অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা মোবাইল ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। যদি কেউ সিঙ্গেল প্রমাণ করতে পারে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তা মেনে নেব।
উল্লেখ্য; এ ঘটনায় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় মানববন্ধনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিক্ষুদ্ধ সাংবাদিকরা।