মহাদেবপুরে ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে ১৫ টাকা কেজির চাল বিক্রি উদ্বোধন

- Update Time : ০৮:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৫ Time View
নওগাঁর মহাদেবপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দরিদ্রদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি উদ্বোধনী দিনেই নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে কার্ডধারীরা চালের সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেও ঘোষিত পরিমাণ চাল পাচ্ছেন না। বিভিন্ন স্থানে কম চাল দেয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে কার্ড বাতিল হবে এই ভয়ে ক্রেতারা প্রকাশ্যে এর কোন প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তরের জনপদে আশ্বিন-কার্তিক মাসে যখন প্রত্যন্ত পল্লীতে কৃষি শ্রমিকদের হাতে কোন কাজ থাকে না, সেসময় দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (সোস্যাল সেফটি নেট প্রজেক্ট) আওতায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এরই একটি অংশ হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যানুপাতিক হারে দরিদ্রদের চিহ্নিত করে কার্ড দিয়ে তাদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করে আসছে। এবার উত্তরের জেলাগুলোর হাটবাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভাদ্র মাসেই শুরু করা হয়েছে এ কর্মসূচি। এজন্য সারাদেশের মত সম্প্রতি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ২ জন করে মোট ২০ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব নির্ধারিত স্থানে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র খুলেছেন। খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালনায় কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আরিফুজ্জামান মহাদেবপুর সদর ও খাজুর পয়েন্টে বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চাল বিক্রি উদ্বোধন করেন। এসময় উপজেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু উদ্বোধনের পরপরই কয়েকটি কেন্দ্রে চাল কম দেয়া শুরু হয়। এসব দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বিষয়টি না দেখে ডিলারদের দূর্নীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরের মাতাজী রোডে রোকেয়া কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে কার্ডধারী ক্রেতাদের বিশাল লাইন দেখা যায়। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ওজন স্কেলে প্রতি গ্রাহককে ৩০ কেজির পরিবর্তে ১০০ গ্রাম ওজনের বস্তাসহ ৯ কেজি ৭০০ গ্রাম করে চাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দাম নেয়া হচ্ছে ৩০ কেজির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্রেতারা জানালেন, পুরো টাকা দিয়েও অন্তত ৪০০ গ্রাম করে চাল কম পাচ্ছেন তারা। কিন্তু প্রতিবাদ করলে ১৫ টাকা কেজির কার্ড বাতিল হবে এই ভয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না। এই বিক্রয় কেন্দ্রে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে চাল বিতরণ করতে দেখা যায়। প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি দন্ডনীয় অপরাধ হলেও সরকারি কর্তাদের উপস্থিতিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে এই বস্তা।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (ইনভায়রনমেন্ট কনসারভেশন এক্ট ১৯৯৫) এ পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা, পণ্য জব্দ এবং কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এই আইনে খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয় যে, সরকারি খাদ্যগুদাম, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিসিবিসহ সব সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায় পলিথিন/প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র জুট (পাটজাত) বা পিপি (পলিপ্রপিলিন) বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। বিধি ভঙ্গ করলে পরিবেশ আইন ও খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী অর্থদণ্ড, সরবরাহকারীর লাইসেন্স বাতিল এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ সরকারি কোন খাদ্যশস্য যদি পলিথিন বা প্লাস্টিকের বস্তায় মজুদ বা বিতরণ করা হয়, সেটা সরাসরি আইনভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে। এরআগে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে খাদ্যশস্যে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের দায়ে জরিমানা করেন।
জানতে চাইলে, এই বিক্রয় কেন্দ্রের ডিলার ফারুক হোসেন জানান, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ৫০ কেজি ওজনের যেসব চটের বস্তায় চাল সরবরাহ করা হয়েছে তাতে বস্তার ওজনের ৬০০ গ্রাম চাল কম আছে। তাই তিনি ৩০০ গ্রাম করে চাল কম দিচ্ছেন। এই কেন্দ্রের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আকতারও জানান একই কথা। তিনি বলেন, ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৯ কেজি ৭০০ গ্রাম করে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ভূল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে। কিন্তু মহাদেবপুর সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, প্রতিটি ৫০ কেজি চালের বস্তার ওজন চটের বস্তাসহ ৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম করে সরবরাহ করা হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আরেফিন জানান, এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১১ হাজার ৮১৮ জন প্রান্তিক ও দরিদ্র কার্ডধারীদের প্রত্যেকের জন্য ৩০ কেজি করে মোট ৩৫৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এজন্য ২০ জন ডিলারের মাধ্যমে ২০টি খোলা বাজারের বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কোন কেন্দ্রে অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি জানতে বুধবার বিকেলে উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মো: আরিফ্জ্জুামানের সরকারি মোবাইলফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়