প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়নে ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

- Update Time : ০৬:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৯ Time View
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়নে ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার প্রধান শিক্ষক পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ করা হচ্ছে। একটি মামলার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মামলা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান হলে ৩২ হাজার শিক্ষককে সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হবে। স্কুলে যাওয়ার উপযোগি প্রত্যেক শিশুদের বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রদানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সোমবার (৪ আগস্ট) সকালে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেডের হলে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশংঙ্কা দেখছি না। প্রশাসনিক অনেক পদ রয়েছে যেখানে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ও যাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয় উভয়ে একই পদের। শিক্ষকদের জন্য বেতন কমিশন হয়েছে। বেতন কমিশন সেটি বিবেচনা করবে।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের সরকারী প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলে-মেয়েরা পড়ে। তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত থাকে। তাদের অভিভাবকরা সঠিকভাবে খেয়াল রাখে না। অপরদিকে কিন্ডারগার্টেনে নিজস্ব বৃত্তি চালু রয়েছে। ক্লাস টু থেকে ফাইভ পর্যন্ত সেখানে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃত্তি না প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়ন। দেশের সংবিধানে আছে সরকার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করবে। যদি কেউ মনে করে সে সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে, তাহলে আমাদের স্কুল ওপেন আছে। তারা সরকারি স্কুলে ভর্তি হোক, আমরা সবার দায়িত্ব নেব।
উপদেষ্টা বলেন, আগে পরীক্ষা থেকে মুক্তি দেয়া একটি প্রকল্প চালু ছিল। কিন্তু শিক্ষক, অভিভাবক কেউ তা ভাল ভাবে নেয়নি। উন্নত দেশগুলোতে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অনুপাত রয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাত আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তাই আমরা পুনরায় পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীরা কত নম্বর পেল তা আমরা দেখতে চাই না। বরং আমরা দেখতে চাই একজন শিক্ষার্থী তার মাতৃভাষায় লিখতে, পড়তে, বুঝতে ও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে কিনা। সাধারণ অংক করতে পারে কিনা। যদি এটি পারে তবে আমরা বুঝবো শিক্ষার্থী পড়াশোনায় এগিয়ে গেছে। যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের জন্য আমরা আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করছি। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে, ডিসেম্বরে আমরা এর মূল্যায়ন করবো।
স্কুল ফিডিং নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালুর বিষয়ে সরকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে সারাদেশে ১৫০টি উপজেলার সবগুলো স্কুলে স্কুলে ফিডিং কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। অপরদিকে কক্সবাজার ও বান্দরবনের প্রত্যেক উপজেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। অর্থাৎ সারাদেশে মোট ১৬৫টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর জন্য ক্রয় প্রক্রিয়া ও যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতির কার্যক্রম শেষ হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দূর্গম চরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়ন নিয়ে আমাদের চিন্তা রয়েছে। কিভাবে এসব এলাকায় অবকাঠামো তৈরি করা যায়, শিক্ষকদের রাখা যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। একই সাথে আমাদের মানসিকতায় বড় অন্তরায় আছে। উপজেলা ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা কিছুদিনের মধ্যে শহরে আসতে চায়। অপরদিকে যারা শহরে থাকেন, তাদের তো সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া যায় না। বদলির জন্য উপর মহল থেকে আমাদের কাছে অনেক তদবির আসে।
এরপর শিল্পকলা একাডেমি প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়নে রংপুর জেলার অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, স্থানীয় সরকার পরিচালক আবু জাফর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নুর মো. শামসুজ্জামান, পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসানসহ অন্যরা।