হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বালু উত্তোলন: সন্ত্রাসীদের আস্তানা চৌদ্দহাজার মৌজা

- Update Time : ০৩:২৮:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৫ Time View
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে ড্রেজার ও বলগেট দিয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়ার একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী চক্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রক্ষা বাঁধ। তবুও প্রশাসন রয়েছে নিরব। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন—প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের ছত্রছায়ায় এই কার্যক্রম চলছে, যার প্রতিবাদ করলেই বন্দুকের মুখে পড়তে হয়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এস.এম. সালাউদ্দীন আহমেদ ওরফে শামীম সরকারের নেতৃত্বে ‘মেসার্স সরকার ট্রেডার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীর লক্ষীনগর মৌজায় ২৪ একর বৈধ ইজারাভুক্ত এলাকা পেলেও, তারা কুষ্টিয়ার মরিচা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে বালু উত্তোলন করছে।
সন্ত্রাস, গুলিবর্ষণ ও মামলা: প্রশাসনের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ,
গত ১১ জুলাই ২০২৫, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর ঘাটে শামীম সরকারের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী স্পিডবোর্ডযোগে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে স্থানীয় কামরুল গাইনের ভাই আমরুল গাইন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি (মামলা নম্বর-৬, তারিখ-১১/০৭/২০২৫)।জনগণের দাবি: বালু উত্তোলন বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি—চৌদ্দহাজার মৌজায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর আশ্রয়স্থল নিশ্চিহ্ন করা হোক।
এ বিষয়ে ‘মেসার্স সরকার ট্রেডার্স’-এর মালিক এস.এম. একলাস আহমেদ জানান, “আমি রাজশাহীর বাঘায় বৈধভাবে ইজারা নিয়েছি। যদি কেউ ইজারার বাইরে গিয়ে অন্য জেলায় বালু উত্তোলন করে, সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি বিষয়টি দেখছি।”
প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ,হাইকোর্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা এখন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নৌ-পুলিশের জনবল সংকট এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জনগণের জানমাল, পরিবেশ ও নদী রক্ষার্থে অবিলম্বে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।অন্যথায় জনতার আন্দোলন অনিবার্য।