ঢাকা ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে সরকার রেহানার ছেলে ববির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা স্টারলিংকের ৮ স্যাটেলাইট স্টেশন ধ্বংস করলো রাশিয়া! মহানবীকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর তিন দিনের মধ্যে ঐকমত্যের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারব : আলী রীয়াজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত দুর্নীতিবাজরাই কি বিচারপতি নিয়োগ পাচ্ছেন! গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হাসিনা ও আ.লীগ সন্ত্রাসীদের পুশইন করুন : নাহিদ ইসলাম মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি

দুর্নীতিবাজরাই কি বিচারপতি নিয়োগ পাচ্ছেন!

শামসুল হক দুররানী
  • Update Time : ১১:০৭:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • / ১১০ Time View

অতি সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে ভাইবা পরীক্ষা হয়ে গেলো। ভাইবা বোর্ডে অনেক দক্ষ এবং যোগ্য নিম্ন আদালতের বিচারকরা বাদ পড়লেও বাদ পড়েনি দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহকারী কতিপয় বিতর্কিত জেলা জজ। অনেকের বিরুদ্ধে চাকুরীস্থল থেকে শাস্তিমূলক প্রত্যাহার, বিভাগীয় মামলাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্বেও তারা বিচারপতির জন্য গঠিত ভাইবা বোর্ডে হাজির হয়েছেন। এই তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লার নাম উঠেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ থাকাকালে ১০ কেজি হেরোইন মামলার প্রধান আসামীকে অল্প দিনের ব্যবধানে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামিন প্রদান, হেরোইনসহ গ্রেফতারকৃত বেশ কয়েকটি মামলার আসামীদের ঢালাওভাবে জামিন প্রদান, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাবিধ অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলী ও প্রত্যাহারজনিত কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে এই জেলা জজের বিচারপতি হবার দৌড়ঝাঁপ দেখে। গাইবান্ধার জেলা জজ রেজাউল করীমের বিরুদ্ধে ছিল বিভাগীয় মামলা। তিনি অতিরিক্ত জেলা জজ থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, কুড়িগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে পুলিশের হাতে আটক চোরাইগাড়ী অকেজো দেখিয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকায় নিলামে বেনামে ক্রয় করে নিজেই গাড়ীর মালিক বনে যান।

ভাইবা বোর্ডে হাজির হওয়া অপর জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার শিরিনের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগ। নড়াইলের জেলা জজ থাকাকালে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তিনি বর্তমানে পটুয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক। ভাইবা বোর্ডে বিচারপতি হবার জন্য হাজির ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা। কিশোরগঞ্জ জেলায় বাড়ী হওয়ার সুবাধে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নিকট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর জেলা জজ, ঢাকার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪, বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত নারায়ণগঞ্জ, বর্তমানে হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

তবে ভাইবা বোর্ডে হাজির হওয়া বেশ কয়েকজন বিচারকের সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জনাব আজিজ আহমেদ ভুঁইয়া, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর রাফিজুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ নুরুল ইসলাম মানিক। বিচারিক জীবনে আলোচ্য বিচারকরা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। তাদের কর্মকান্ড আগামী দিনের বিচার ব্যবস্থায় এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে -এমন অভিমত সংশ্লিষ্ট সকল মহলের।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-৪ এর বিচারক মুন্সি মোহাম্মদ মশিয়ার রহমানের মত একজন সৎ যোগ্য ভাল কর্মকর্তার বিচারপতি হবার যোগ্যতা থাকার পরও ভাইবা বোর্ডে তার ডাক পড়েনি।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যোগ্য এবং নিষ্ঠাবান ন্যায়পরায়ণ বিচারকরা যদি উপযুক্ত জায়গায় যেতে না পারেন, তাদের স্থলে অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ বিচারকরা স্থান পেলে বিচারাঙ্গনে নেমে আসবে অমানিশার কালো অধ্যায়।
এছাড়া গুরুতর অভিযোগ রয়েছে আইন সচিব জনাব আবু তাহেবের বিরুদ্ধে।

স্বৈরাচারের আমলে তোষামোদি এবং খয়ের খা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেছেন তিনি। এজন্য দীর্ঘদিন তিনি সার্ভিস কমিশনের সচিব হয়ে নিয়োগ কমিটি পরিচালনা করেছেন। স্বৈরাচারের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন। মৌলভীবাজারের জেলা জজ থাকাকালে হাসিনাকে খুশি করার জন্য জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে শেখ মুজিবের বিশাল মূর্তি বানিয়ে নিচে তার নাম লিখেছিলেন সুবিধাভোগী এই আবু তাহের। ৫ আগস্টের পর বরিশাল থেকে ঢাকায় বদলী হয়ে এসে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে লোক পাঠিয়ে রাতারাতি নামফলক থেকে তার নাম মুছে ফেলে। পরে অবশ্য উত্তেজিত জনতা মূর্তিটি উচ্ছেদ করে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হবার পর তার আমলে সবচাইতে বেশি আইন লংঘিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের কোন কাজ তিনি সঠিকভাবে করতে পারেননি। নৈতিকতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত নিম্ন আদালতের কোন বিচারকের বিরুদ্ধেই তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। পরকীয়ায় আসক্ত, স্ত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত যৌতুকলোভী অধঃস্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তিনি নিতে পারেননি কোন কার্যকরি ব্যবস্থা। অবশ্য তার সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায় বিচারকদের মধ্যে। খোদ নিজের বিরুদ্ধেই যখন রয়েছে স্ত্রী নির্যাতনসহ নৈতিক স্থলনজনিত অপরাধ, তিনি কিভাবে অন্যের দোষ উদঘাটন করবেন? কিভাবে অন্যের ব্যাভিচার আর নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিচার করবেন? এই প্রশ্ন বিচারাঙ্গণে উঠতে শুরু করেছে।

মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে হেরোইনসহ মাদক মামলার আসামীদের ঢালাওভাবে জামিন দিতেন। জামিন বাণিজ্যে তার নাম উঠে আসে মানুষের মুখে মুখে। এক সময় ১০ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতার মূল আসামীকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামিন প্রদান করেন।

এ নিয়ে দৈনিক নওরোজে প্রথম পাতায় ২০২০ সালের ২ মার্চ তারিখে ‘চাঞ্চল্যকর ১০ কেজি হেরোইন মামলার আসামী ৪২ দিনেই জামিন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। আলোচ্য সংবাদের সূত্র ধরে তাকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করে শাস্তিমূলক বদলী হিসেবে রাজশাহী মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে বদলী করা হয়। পরবর্তীতে জয় বাংলা গান গেয়ে শেখ হাসিনা ও আনিসুল হককে খুশি করে নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে ভোল পাল্টিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ। বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে বড় নেতাদের তদবীরে তিনি নাকী বিচারপতি হচ্ছেন। এমন খবর শুনে হেরোইন ও মাদক মামলাসহ বড় বড় মামলার আসামীদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপরাধী মহল মিষ্টি বিতরণ করছে বলে জানা গেছে। তার শশুর বিএনপি’র আমলে মাগুরাতে বিএনপি’র নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। শশুরের প্রভাব খাটিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা জজের পদটি হাসিল করেন।

আলোচ্য লিয়াকত আলী মোল্লা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে দোকান-পাট ভাড়া, গ্যারেজ ভাড়াবাবদ প্রাপ্ত বাৎসরিক আয় প্রায় ৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে নতুন ভবনের নথি রাখার জন্য সরবরাহকৃত লোহার র‌্যাক যার একটির ওজন ২০০ কেজি। এমন ৩০টি র‌্যাক গোপনে তৎকালীন নায়েব নাজির মাহবুব আলমের সহযোগিতায় মাহবুব ফার্নিচার মার্ট-এর নিকট রাতের আঁধারে গোপনে বিক্রি করে দেয়। এসব সরকারী মালামালের টাকাও তিনি আত্মসাত করেন। এরপরও তার নিজ জেলার ৬জন আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দান করেন।

অভিযোগ উঠেছে, ৩০ লক্ষ টাকা করে অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের সময় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইন সচিবের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল।
চাঁপাইনবাগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার মামলা নং-২, তারিখ ২/১২/১৯, জিআর নং-২৯৪/১৯ (গোমস্তাপুর) ১০ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতারকৃত আসামী হিরা ওরফে হিরো ওরফে প্রিন্স খানকে ২৬/২/২০২০ ইং তারিখে ফৌজদারী মিস ৩৬৬/২০২০০ নং মোকদ্দমায় জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা জামিন মঞ্জুর করেন। অপরদিকে ৩ কেজি ২শ গ্রাম হিরোইন ও ৩২ প্যাকেট ইয়াবাসহ গেফতারকৃত আসামী শফিকুল ইসরাম ওরফে লাদেনকে ৫/১১/১৮ সালে জামিন প্রদান করেন জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। যার জিআর নং-৪৪৩/১৬ (চাঁপাই) ফৌজদারী মিস কেস নং-১৪৭৭/১৮ আদেশ নং-২, তারিখ-৫/১১/১৮ সালে ধারা ১৯৯০ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ১৯(১) এর ১-খ ধারার মামলা।

লিয়াকত আলী মোল্লার আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন মামলার নথিপত্র ঘাটলে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হবে বলে জানিয়েছেন ঐ কোর্ট সংশ্লিষ্ট অনেকে।

Please Share This Post in Your Social Media

দুর্নীতিবাজরাই কি বিচারপতি নিয়োগ পাচ্ছেন!

শামসুল হক দুররানী
Update Time : ১১:০৭:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

অতি সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে ভাইবা পরীক্ষা হয়ে গেলো। ভাইবা বোর্ডে অনেক দক্ষ এবং যোগ্য নিম্ন আদালতের বিচারকরা বাদ পড়লেও বাদ পড়েনি দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহকারী কতিপয় বিতর্কিত জেলা জজ। অনেকের বিরুদ্ধে চাকুরীস্থল থেকে শাস্তিমূলক প্রত্যাহার, বিভাগীয় মামলাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্বেও তারা বিচারপতির জন্য গঠিত ভাইবা বোর্ডে হাজির হয়েছেন। এই তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লার নাম উঠেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ থাকাকালে ১০ কেজি হেরোইন মামলার প্রধান আসামীকে অল্প দিনের ব্যবধানে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামিন প্রদান, হেরোইনসহ গ্রেফতারকৃত বেশ কয়েকটি মামলার আসামীদের ঢালাওভাবে জামিন প্রদান, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাবিধ অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলী ও প্রত্যাহারজনিত কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে এই জেলা জজের বিচারপতি হবার দৌড়ঝাঁপ দেখে। গাইবান্ধার জেলা জজ রেজাউল করীমের বিরুদ্ধে ছিল বিভাগীয় মামলা। তিনি অতিরিক্ত জেলা জজ থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, কুড়িগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে পুলিশের হাতে আটক চোরাইগাড়ী অকেজো দেখিয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকায় নিলামে বেনামে ক্রয় করে নিজেই গাড়ীর মালিক বনে যান।

ভাইবা বোর্ডে হাজির হওয়া অপর জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার শিরিনের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগ। নড়াইলের জেলা জজ থাকাকালে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তিনি বর্তমানে পটুয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক। ভাইবা বোর্ডে বিচারপতি হবার জন্য হাজির ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা। কিশোরগঞ্জ জেলায় বাড়ী হওয়ার সুবাধে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নিকট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর জেলা জজ, ঢাকার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪, বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত নারায়ণগঞ্জ, বর্তমানে হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

তবে ভাইবা বোর্ডে হাজির হওয়া বেশ কয়েকজন বিচারকের সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জনাব আজিজ আহমেদ ভুঁইয়া, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর রাফিজুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ নুরুল ইসলাম মানিক। বিচারিক জীবনে আলোচ্য বিচারকরা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। তাদের কর্মকান্ড আগামী দিনের বিচার ব্যবস্থায় এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে -এমন অভিমত সংশ্লিষ্ট সকল মহলের।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-৪ এর বিচারক মুন্সি মোহাম্মদ মশিয়ার রহমানের মত একজন সৎ যোগ্য ভাল কর্মকর্তার বিচারপতি হবার যোগ্যতা থাকার পরও ভাইবা বোর্ডে তার ডাক পড়েনি।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যোগ্য এবং নিষ্ঠাবান ন্যায়পরায়ণ বিচারকরা যদি উপযুক্ত জায়গায় যেতে না পারেন, তাদের স্থলে অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ বিচারকরা স্থান পেলে বিচারাঙ্গনে নেমে আসবে অমানিশার কালো অধ্যায়।
এছাড়া গুরুতর অভিযোগ রয়েছে আইন সচিব জনাব আবু তাহেবের বিরুদ্ধে।

স্বৈরাচারের আমলে তোষামোদি এবং খয়ের খা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেছেন তিনি। এজন্য দীর্ঘদিন তিনি সার্ভিস কমিশনের সচিব হয়ে নিয়োগ কমিটি পরিচালনা করেছেন। স্বৈরাচারের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন। মৌলভীবাজারের জেলা জজ থাকাকালে হাসিনাকে খুশি করার জন্য জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে শেখ মুজিবের বিশাল মূর্তি বানিয়ে নিচে তার নাম লিখেছিলেন সুবিধাভোগী এই আবু তাহের। ৫ আগস্টের পর বরিশাল থেকে ঢাকায় বদলী হয়ে এসে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে লোক পাঠিয়ে রাতারাতি নামফলক থেকে তার নাম মুছে ফেলে। পরে অবশ্য উত্তেজিত জনতা মূর্তিটি উচ্ছেদ করে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হবার পর তার আমলে সবচাইতে বেশি আইন লংঘিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের কোন কাজ তিনি সঠিকভাবে করতে পারেননি। নৈতিকতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত নিম্ন আদালতের কোন বিচারকের বিরুদ্ধেই তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। পরকীয়ায় আসক্ত, স্ত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত যৌতুকলোভী অধঃস্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তিনি নিতে পারেননি কোন কার্যকরি ব্যবস্থা। অবশ্য তার সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায় বিচারকদের মধ্যে। খোদ নিজের বিরুদ্ধেই যখন রয়েছে স্ত্রী নির্যাতনসহ নৈতিক স্থলনজনিত অপরাধ, তিনি কিভাবে অন্যের দোষ উদঘাটন করবেন? কিভাবে অন্যের ব্যাভিচার আর নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিচার করবেন? এই প্রশ্ন বিচারাঙ্গণে উঠতে শুরু করেছে।

মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে হেরোইনসহ মাদক মামলার আসামীদের ঢালাওভাবে জামিন দিতেন। জামিন বাণিজ্যে তার নাম উঠে আসে মানুষের মুখে মুখে। এক সময় ১০ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতার মূল আসামীকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামিন প্রদান করেন।

এ নিয়ে দৈনিক নওরোজে প্রথম পাতায় ২০২০ সালের ২ মার্চ তারিখে ‘চাঞ্চল্যকর ১০ কেজি হেরোইন মামলার আসামী ৪২ দিনেই জামিন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। আলোচ্য সংবাদের সূত্র ধরে তাকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করে শাস্তিমূলক বদলী হিসেবে রাজশাহী মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে বদলী করা হয়। পরবর্তীতে জয় বাংলা গান গেয়ে শেখ হাসিনা ও আনিসুল হককে খুশি করে নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে ভোল পাল্টিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ। বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে বড় নেতাদের তদবীরে তিনি নাকী বিচারপতি হচ্ছেন। এমন খবর শুনে হেরোইন ও মাদক মামলাসহ বড় বড় মামলার আসামীদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপরাধী মহল মিষ্টি বিতরণ করছে বলে জানা গেছে। তার শশুর বিএনপি’র আমলে মাগুরাতে বিএনপি’র নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। শশুরের প্রভাব খাটিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা জজের পদটি হাসিল করেন।

আলোচ্য লিয়াকত আলী মোল্লা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে দোকান-পাট ভাড়া, গ্যারেজ ভাড়াবাবদ প্রাপ্ত বাৎসরিক আয় প্রায় ৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে নতুন ভবনের নথি রাখার জন্য সরবরাহকৃত লোহার র‌্যাক যার একটির ওজন ২০০ কেজি। এমন ৩০টি র‌্যাক গোপনে তৎকালীন নায়েব নাজির মাহবুব আলমের সহযোগিতায় মাহবুব ফার্নিচার মার্ট-এর নিকট রাতের আঁধারে গোপনে বিক্রি করে দেয়। এসব সরকারী মালামালের টাকাও তিনি আত্মসাত করেন। এরপরও তার নিজ জেলার ৬জন আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দান করেন।

অভিযোগ উঠেছে, ৩০ লক্ষ টাকা করে অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের সময় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইন সচিবের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল।
চাঁপাইনবাগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার মামলা নং-২, তারিখ ২/১২/১৯, জিআর নং-২৯৪/১৯ (গোমস্তাপুর) ১০ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতারকৃত আসামী হিরা ওরফে হিরো ওরফে প্রিন্স খানকে ২৬/২/২০২০ ইং তারিখে ফৌজদারী মিস ৩৬৬/২০২০০ নং মোকদ্দমায় জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা জামিন মঞ্জুর করেন। অপরদিকে ৩ কেজি ২শ গ্রাম হিরোইন ও ৩২ প্যাকেট ইয়াবাসহ গেফতারকৃত আসামী শফিকুল ইসরাম ওরফে লাদেনকে ৫/১১/১৮ সালে জামিন প্রদান করেন জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। যার জিআর নং-৪৪৩/১৬ (চাঁপাই) ফৌজদারী মিস কেস নং-১৪৭৭/১৮ আদেশ নং-২, তারিখ-৫/১১/১৮ সালে ধারা ১৯৯০ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ১৯(১) এর ১-খ ধারার মামলা।

লিয়াকত আলী মোল্লার আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন মামলার নথিপত্র ঘাটলে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হবে বলে জানিয়েছেন ঐ কোর্ট সংশ্লিষ্ট অনেকে।