ঢাকা ১২:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে বিশৃঙ্খলা, নিহত ১১

নওরোজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০২:৫২:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩
  • / ১১৭ Time View

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন রাজ্যজুড়েই শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি এবং অন্যান্যের ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রক্তক্ষয়ী এই সহিংসতা এরইমধ্যে অন্তত ১১ জনের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

গত শনিবারের এই ভোটকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগের রাজ্যের হাওয়া কোনদিকে তার ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে; এখানকার ফল রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক রদবদলও আনতে পারে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬ জন তৃণমূল সদস্য।

সহিংসতা বিজেপি, বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফের একজন করে কর্মীর পাশাপাশি এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরও প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সহিংসতা ঠেকাতে রাজ্যটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, কিন্তু ভোটের দিন তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ‘ভয়ানক ব্যর্থ’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শাসকদল তৃণমূল।

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত দুটি বুথে ব্যালট বাক্সও ভাঙচুর হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।

এবার ২২টি জেলা পরিষদে ৯২৮, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯ হাজার ৭৩০ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩ হাজার ২২৯ আসনে প্রতিনিধি নির্বাচনে রায় দিতে পারবেন প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ ভোটার।

নির্বাচন কমিশন গত ৮ জুন পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত সংঘর্ষ ও সহিংসতায় এক কিশোরসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশে আসনে বিনাভোটে জিতেছিল তৃণমূল প্রার্থীরা। রাজ্যের এ শাসকদল সন্ত্রাসের আবহ সৃষ্টি করে অনেক এলাকায় অন্যান্যের প্রার্থী হতে দেয়নি বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের।

এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রায় সব জায়গাতেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি ও বাম-কংগ্রেসের ব্যাপক লড়াই হবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, জাতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজেপির প্রচারে।

কংগ্রেস আর কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করেছেন যথাক্রমে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মোটামুটি প্রভাবশালী ভারতীয় সেক্যুলার ফ্রন্টও (আইএসএফ) পঞ্চায়েত ভোটের আগে গণমাধ্যমে স্থান করে নিয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ভাঙড়ে তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত সংঘর্ষেও জড়িয়েছে তারা।

এনডিটিভি জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের গভর্নরের ‘রাজ ভবনকে’ এবারই প্রথম নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

রাজ্যটির গভর্নর সিভি আনন্দ বোস তার সরকারি বাসভবনটিতে মানুষের অভিযোগ শুনতে একটি ‘শান্তি কক্ষ’ খুলেছেন।

গত শতকের ৭০-এর দশকের শেষভাগে পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার পঞ্চায়েত প্রতিনিধি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করতে হয়েছে।

শনিবার ভোটের দিনের নিরাপত্তায় ৬৫ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে আছেন রাজ্য পুলিশের ৭০ হাজার সদস্যও।

“বিজেপি সম্ভবত ভুলে গেছে সাধারণ মানুষ ভোট দেবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়। বিজেপি সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবে না, কেন্দ্রীয় বাহিনীর যত সদস্যই চাওয়া হোক না কেন, মানুষের রায় বদলাবে না,” বলেছেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।

শেষবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার দল ৮৫ শতাংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে বিশৃঙ্খলা, নিহত ১১

Update Time : ০২:৫২:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন রাজ্যজুড়েই শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি এবং অন্যান্যের ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রক্তক্ষয়ী এই সহিংসতা এরইমধ্যে অন্তত ১১ জনের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

গত শনিবারের এই ভোটকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগের রাজ্যের হাওয়া কোনদিকে তার ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে; এখানকার ফল রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক রদবদলও আনতে পারে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬ জন তৃণমূল সদস্য।

সহিংসতা বিজেপি, বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফের একজন করে কর্মীর পাশাপাশি এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরও প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সহিংসতা ঠেকাতে রাজ্যটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, কিন্তু ভোটের দিন তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ‘ভয়ানক ব্যর্থ’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শাসকদল তৃণমূল।

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত দুটি বুথে ব্যালট বাক্সও ভাঙচুর হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।

এবার ২২টি জেলা পরিষদে ৯২৮, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯ হাজার ৭৩০ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩ হাজার ২২৯ আসনে প্রতিনিধি নির্বাচনে রায় দিতে পারবেন প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ ভোটার।

নির্বাচন কমিশন গত ৮ জুন পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত সংঘর্ষ ও সহিংসতায় এক কিশোরসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশে আসনে বিনাভোটে জিতেছিল তৃণমূল প্রার্থীরা। রাজ্যের এ শাসকদল সন্ত্রাসের আবহ সৃষ্টি করে অনেক এলাকায় অন্যান্যের প্রার্থী হতে দেয়নি বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের।

এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রায় সব জায়গাতেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি ও বাম-কংগ্রেসের ব্যাপক লড়াই হবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, জাতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজেপির প্রচারে।

কংগ্রেস আর কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করেছেন যথাক্রমে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মোটামুটি প্রভাবশালী ভারতীয় সেক্যুলার ফ্রন্টও (আইএসএফ) পঞ্চায়েত ভোটের আগে গণমাধ্যমে স্থান করে নিয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ভাঙড়ে তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত সংঘর্ষেও জড়িয়েছে তারা।

এনডিটিভি জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের গভর্নরের ‘রাজ ভবনকে’ এবারই প্রথম নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

রাজ্যটির গভর্নর সিভি আনন্দ বোস তার সরকারি বাসভবনটিতে মানুষের অভিযোগ শুনতে একটি ‘শান্তি কক্ষ’ খুলেছেন।

গত শতকের ৭০-এর দশকের শেষভাগে পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার পঞ্চায়েত প্রতিনিধি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করতে হয়েছে।

শনিবার ভোটের দিনের নিরাপত্তায় ৬৫ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে আছেন রাজ্য পুলিশের ৭০ হাজার সদস্যও।

“বিজেপি সম্ভবত ভুলে গেছে সাধারণ মানুষ ভোট দেবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়। বিজেপি সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবে না, কেন্দ্রীয় বাহিনীর যত সদস্যই চাওয়া হোক না কেন, মানুষের রায় বদলাবে না,” বলেছেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।

শেষবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার দল ৮৫ শতাংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছিল।