ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
মাহাথিরের শততম জন্মদিন উপলক্ষে আগাম শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে জাপান এশিয়ার ভবিষ্যৎ আমরাই লিখব: মুহাম্মদ ইউনূস খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি সেনারা ইরানে আক্রমণ না করতে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করলেন ট্রাম্প ফিলিস্তিন সঙ্কটে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান চায় ফ্রান্স: ম্যাক্রোঁ ‘এন-সার্কেল’-এ বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলছে ভারত এক হজযাত্রীকে নিতে দুইবার ফিরলো বিমান, অলৌকিক ঘটনায় অবাক সবাই! মানষিকতা ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে নির্মল ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সম্ভব- পরিবেশ উপদেষ্টা টঙ্গীতে অপহৃত শিশু আলিফ উদ্ধার, গ্রেফতার ৩

সাংবাদিকতার ক্ষমতা প্রদর্শনে শিক্ষার্থীদের মার খেলেন বাকৃবি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক রায়হান আবিদ

বাকৃবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:৩৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
  • / ১৫২ Time View

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে উগ্র আচরণ, সাংবাদিক হিসেবে ক্ষমতা প্রদর্শন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন রায়হান আবিদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাংবাদিক। এছাড়াও নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে ৫ আগস্টের পরে ভোল পাল্টিয়ে ছাত্রদলের বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিতেও দেখা যায় অভিযুক্ত আবিদকে।

সোমবার (২৬ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিনি কনফারেন্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন ওই জায়গায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন রায়হান আবিদ বারবার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি উল্টো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তর্কে জড়ান। এসময় শিক্ষার্থীরা তার উগ্র আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা তাকে চড়-থাপ্পর দিয়ে ধাওয়া করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রায়হান আবিদ একসময় তৎকালীন বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি তায়েফ রিয়াদের একান্ত সহযোগী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রলীগ নেতা এম এ ইউসুফের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে উগ্র আচরণ, হলে ক্ষমতা প্রদর্শন করে আসছিল। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদধারী হওয়ায় সব জায়গায় ক্ষমতা দেখাতো সে।‘

সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রায়হান আবিদ হলের সিনিয়র-জুনিয়র সবার সাথে উগ্র আচরণ করত। সে হলে প্রভাব বিস্তার করে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চাইত। আবিদের কেনা মোটরসাইকেল হলের ছাত্রলীগ নেতা ইউসুফ সবসময় ব্যবহার করত। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সে সাংবাদিকতার ক্ষমতা দেখিয়ে একটি সিঙ্গেল রুমে একাই থাকতে চেয়ে ওই হলের সব শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে হলের শিক্ষার্থীরা তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে বাকৃবি প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান সবুজ তাকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়া থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের মধ্যস্ততায় বিষয়টির সমাধান করা হয়। এখন সে ওই হলে সিঙ্গেল রুম দখল করে একাই থাকে।’

উল্লেখ্য, রায়হান আবিদ দৈনিক জনকণ্ঠ, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দৈনিক আমাদের সময় ডট.কম, ডেইলি এশিয়ান এজ, দেশের ডাকসহ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালের বাকৃবি প্রতিনিধি ছিলেন। বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সহিদুজ্জামান সবুজ ব্যক্তিগত স্বার্থে রায়হান আবিদকে কে সাথে নিয়ে ‘বাকৃবি প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। বাকৃবি প্রেস ক্লাবের পেইজ থেকে একাধিক শিক্ষক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ ও নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নাজমুল আহসান হল সূত্রে জানা যায়, বাকৃবি প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক রিসালাত আলিফ নাজমুল আহসান হলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জুনিয়র শিক্ষার্থীদের রাতভর গেষ্টরুম করাতেন। ৫ আগস্টের পর সে নিজেই হল থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে মাওলানা ভাসানী হলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়।

হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। একাধিকবার ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা ভোগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সাংবাদিক রায়হান আবিদ বলেন, ‘আমাকে আকস্মিকভাবে কোনো কারণ ছাড়াই ৭-৮ জন এসে মারতে থাকে। আমি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি আছি। ডাক্তার আমাকে কানের দুইটা টেস্ট দিয়েছে। আমি এক কানে কিছু শুনতে পারছি না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি ভর্তি কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলাম। দুপুরের দিকে টিএসসি কক্ষের বাইরের দিকে একটা হট্টগোল শুনতে পাই। আমাদের সহকারী প্রক্টর সেখানে যায় এবং কয়েক মূহুর্ত পরেই ফিরে আসে। সেখানে ঠিক কি হয়েছে আমার জানা নেই।’

Please Share This Post in Your Social Media

সাংবাদিকতার ক্ষমতা প্রদর্শনে শিক্ষার্থীদের মার খেলেন বাকৃবি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক রায়হান আবিদ

বাকৃবি প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:৩৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে উগ্র আচরণ, সাংবাদিক হিসেবে ক্ষমতা প্রদর্শন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন রায়হান আবিদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাংবাদিক। এছাড়াও নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে ৫ আগস্টের পরে ভোল পাল্টিয়ে ছাত্রদলের বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিতেও দেখা যায় অভিযুক্ত আবিদকে।

সোমবার (২৬ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিনি কনফারেন্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন ওই জায়গায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন রায়হান আবিদ বারবার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি উল্টো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তর্কে জড়ান। এসময় শিক্ষার্থীরা তার উগ্র আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা তাকে চড়-থাপ্পর দিয়ে ধাওয়া করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রায়হান আবিদ একসময় তৎকালীন বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি তায়েফ রিয়াদের একান্ত সহযোগী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রলীগ নেতা এম এ ইউসুফের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে উগ্র আচরণ, হলে ক্ষমতা প্রদর্শন করে আসছিল। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদধারী হওয়ায় সব জায়গায় ক্ষমতা দেখাতো সে।‘

সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রায়হান আবিদ হলের সিনিয়র-জুনিয়র সবার সাথে উগ্র আচরণ করত। সে হলে প্রভাব বিস্তার করে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চাইত। আবিদের কেনা মোটরসাইকেল হলের ছাত্রলীগ নেতা ইউসুফ সবসময় ব্যবহার করত। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সে সাংবাদিকতার ক্ষমতা দেখিয়ে একটি সিঙ্গেল রুমে একাই থাকতে চেয়ে ওই হলের সব শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে হলের শিক্ষার্থীরা তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে বাকৃবি প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান সবুজ তাকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়া থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের মধ্যস্ততায় বিষয়টির সমাধান করা হয়। এখন সে ওই হলে সিঙ্গেল রুম দখল করে একাই থাকে।’

উল্লেখ্য, রায়হান আবিদ দৈনিক জনকণ্ঠ, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দৈনিক আমাদের সময় ডট.কম, ডেইলি এশিয়ান এজ, দেশের ডাকসহ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালের বাকৃবি প্রতিনিধি ছিলেন। বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সহিদুজ্জামান সবুজ ব্যক্তিগত স্বার্থে রায়হান আবিদকে কে সাথে নিয়ে ‘বাকৃবি প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। বাকৃবি প্রেস ক্লাবের পেইজ থেকে একাধিক শিক্ষক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ ও নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নাজমুল আহসান হল সূত্রে জানা যায়, বাকৃবি প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক রিসালাত আলিফ নাজমুল আহসান হলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জুনিয়র শিক্ষার্থীদের রাতভর গেষ্টরুম করাতেন। ৫ আগস্টের পর সে নিজেই হল থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে মাওলানা ভাসানী হলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়।

হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। একাধিকবার ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা ভোগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সাংবাদিক রায়হান আবিদ বলেন, ‘আমাকে আকস্মিকভাবে কোনো কারণ ছাড়াই ৭-৮ জন এসে মারতে থাকে। আমি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি আছি। ডাক্তার আমাকে কানের দুইটা টেস্ট দিয়েছে। আমি এক কানে কিছু শুনতে পারছি না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি ভর্তি কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলাম। দুপুরের দিকে টিএসসি কক্ষের বাইরের দিকে একটা হট্টগোল শুনতে পাই। আমাদের সহকারী প্রক্টর সেখানে যায় এবং কয়েক মূহুর্ত পরেই ফিরে আসে। সেখানে ঠিক কি হয়েছে আমার জানা নেই।’