ঢাকা ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
বর্তমান সময়ে সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না – জামায়াত আমির ৭ বছরে ও সুবর্ণা হত্যার বিচার হয়নি, হুমকির মুখে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু; রংপুরে দুই ক্লিনিককে জরিমানা,ওটি সিলগালা পিআর পদ্ধতি দেশকে আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে – রিজভী তিন দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিল শেকৃবি শিক্ষার্থীরা কুবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ; তদন্ত কমিটি গঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ১-১১’র প্রেক্ষাপট তৈরি করে আ.লীগ কর্তৃত্বশীল শাসকরূপে চিহ্নিত হয় : মাওলানা আবদুল হালিম মাদক বিষাক্ত সাপের মতো ব্যক্তি ও সমাজকে নিঃশেষ করে দেয়
রেলে লুটপাটের কাহিনী-১

তাবাসসুমের নেতৃত্বে আওয়ামী প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয়

নওরোজ রিপোর্ট
  • Update Time : ১০:২৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • / ১৫০৫ Time View

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গণ-অভ্যুত্থানে বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। চলে গেছে ১০ মাস। কিন্তু অন্যান্য স্থানের ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়েতেও এখনো শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহনকারী, সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তাবাসসুম, সাদরুল, সালাহউদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পদায়ন, বদলী ও নিয়োগ বাণিজ্যের এই ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট কিভাবে এখনও রেলের সদর দপ্তরে পদায়িত থাকে, সেটা সংশ্লিস্টদের বিরাট জিজ্ঞাসা।

তাবাসসুম গংদের অফিস আছে, গাড়ি আছে, বেতন আছে কিন্তু তারা কাজে নাই। তারা যেন জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। গত আট মাসে তারা কে কোন কাজ করেছে তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দাপ্তরিক কোন কাজ না করলেও রেলকে অস্থিতিশীল করতে তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ সহসাই স্ব-মূর্তিতে ফিরে আসবে। তারা এখনও নিজেরা সেই স্বপ্ন দেখে এবং অন্যদেরকে ভয়-ভীতি দেখায়।

প্রাসাদ ষড়যন্ত্র তাবাসসুম গংদের মজ্জাগত। তাবাসসুম, সাদরুল, সালাহউদ্দিনরা ২২ বছরের চাকুরী জীবনের প্রায় পুরোটা সময় সদর দপ্তরেই কর্মরত ছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া এটা কি সম্ভব? এই প্রশ্ন রেলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর।

আওয়ামী সরকারের পুরো সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে হেন কোন অপরাধ নেই তারা করেননি। অর্থের বিনিময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, পদায়ন ও বদলী এই তাবাসসুম সাদরুল গংদের ইচ্ছায় হতো। সরকার পরিবর্তিত হলেও তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা পুনরায় ক্ষমতার বলয়ে যাবার স্বপ্নে বিভোর। কে ভাঙবে এই ত্রয়ীর সিন্ডিকেট। প্রশাসন কি এতটাই অসহায়? রেল সংশ্লিষ্টরা মনে করছে সর্ষের ভিতরই লুকিয়ে আছে ভূত।

তাবাসসুম ইসলাম

তাবাসসুম ইসলাম এর কুকীর্তির ফিরিস্তি :

তাবাসসুম ইসলাম দূর্নীতিবাজ, ক্ষমতালিপ্সু, লাস্যময়ী সম্রাজ্ঞী। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত। প্রকল্পের আওতায় ১০০টি ব্রডগেজ ক্যারেজ চীন থেকে আনা হয়। ক্যারেজগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ক্যারেজ ক্রয়ে তাবাসসুমের দুর্নীতির কারণে রেলওয়েকে বিব্রত হতে হয়েছে। অভিযোগ আছে, চীনা প্রতিষ্ঠানকে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে তিনি নিম্নমানের ক্যারেজ এনেছেন।
তার স্বামী জসিম উদ্দিন হায়দার, ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবে বিসিএস পাস করেন। আওয়ামী সরকারকে মসনদে রাখতে এই জসিম হায়দারদের ভূমিকা দেশব্যাপী আলোচিত। জসিম হায়দার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পিএম দপ্তরের পরিচালকসহ বিভিন্ন জেলার ডিসি ছিলেন। জসিম বিগত সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ায় তার স্ত্রী তাবাসসুম ছিলো সকলের নিকট পূজনীয়। এমনকি রেল সচিব, ডিজি পর্যন্ত তাবাসসুমকে সমীহ করতো। সাবেক রেল সচিব হুমায়ুন কবির এবং রেলের সাবেক ডিজি কামরুল ইসলাম তাকে রেলের ‘রানীর’ মর্যাদায় রাখতেন। তাদের খাস কামরায় তাবাসসুমের ছিল অবাধ যাতায়াত। ২২ বছরের চাকুরী জীবনে তাবাসসুম-এর মাঠ পর্যায়ে কাজের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও কর্মজীবনের প্রতিটি পদোন্নতি তিনি সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে নিয়েছেন।

শেখ পরিবারের আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক সচিব হুমায়ুন কবির দুই ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে গত বছর তাকে গ্রেড-৩ পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করতে সচিব হুমায়ুন কবির পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প ও দোহাজারী কক্সবাজার প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কোটি কোটি টাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সচিব হুমায়ুন কবির বিমান চার্টার করে অতিথিদের কক্সবাজার নিয়ে যান।
তাবাসসুমকে দেন উভয় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করার দায়িত্ব। হাসিনা-তাবাসসুমের ঘনিষ্ঠ ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে তিনি বনে যান প্রশাসনের বড় কর্তা। শুধু রেল নয়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও তাবসসুম অর্থের বিনিময়ে পোস্টিং বাণিজ্য করতেন। হুমায়ুন কবির তো শেখ মুজিবকে নিয়ে গল্প লিখে আগেই সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে সচিব হয়েছেন। প্রকল্প উদ্বোধন কেমিস্ট্রির মাধ্যমে সেবার পেলেন আরো বড় পুরস্কার। সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ!!

বিষয়টি ছিল ঐ সময়ের টক অব দি কান্ট্রি। রেলের সাবেক ডিজি কামরুলও সেদিকেই এগুচ্ছিলেন। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য গুরুদক্ষিণার বিষয়টি বাজারে চাউর হলে সরকার সিদ্ধান্ত বদল করে।

হুমায়ুন-কামরুল-তাবাসসুমদের নীল নকশায় পার্থ সরকারের মতো সিনিয়র একজন কর্মকর্তাকে এডিজি আরএস পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সিনিয়র পাঁচ ব্যাচকে ডিঙ্গিয়ে তাবাসসুম যখন এডিজি আরএস হবার সকল যড়যন্ত্র সম্পন্ন করেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তখন সরকার পরিবর্তন হয়। সে কারণে তাবাসসুমের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নাই। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় তিনি এখন নতুন খেলায় নেমেছেন। তার সিনিয়র কিছু ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তাদের চরিত্র হরন করে উদ্ভট লেখা ফেসবুকে ছড়াচ্ছেন। উদ্দেশ্য, সিনিয়রদের ঝামেলায় ফেলে পথের কাটা দূর করে এডিজি আরএস হওয়া।

অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে তিনি সাহায্য নিচ্ছেন তার সহকর্মী সাদরুল, সালাহউদ্দিন ও বোরহানের। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা নামে বেনামে ফেক আইডি দিয়ে ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন আর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য পাচার করছেন। তোষামোদি আর সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে তাবাসসুম ছিলেন সব সময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। সে কারণে পদায়ন ও পদোন্নতির ঘুষ বাণিজ্য করে তিনি হয়েছেন অঢেল সম্পদের অধিকারী। ঢাকায় তার অভিজাত এলাকায় ৮/১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে স্বামী স্ত্রীর অনেক সম্পদ রয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। চাকুরী জীবনে তিনি কতবার যে বিদেশ ভ্রমন করেছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। সরকারী আদেশের (জিও) মাধ্যমে তিনি বিদেশ ভ্রমণ করে কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। প্রাডো, পাজেরো ছাড়া সাধারণ গাড়িতে তাবাসসুম চড়েন না। নিজ নামে একাধিক গাড়ি বরাদ্দ নেয়া ছাড়াও প্রকল্প পরিচালকদের কাছ থেকে জ্বালানীসহ গাড়ি নিতেন।

পট পরিবর্তনের পরে তাকে চট্টগ্রামে বদলী করা হলেও দুই মাসের মাথায় তিনি স্বপদে ফিরে এসেছেন। বিগত সরকারের পুরো সময় রেলভবনে কাটালেও দোসরদের সহযোগিতায় আবার রেলভবনে ফিরে আসার ব্যাপারটি বিস্ময়কর। তাকে রেলের সংস্থাপন প্রধান করা হতে পারে এমন গুঞ্জন আছে। সেক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী হবে এমন আশংকা করছেন অনেকেই। এই তাবাসসুমরা যে কতটা ভয়ংকর, সময়ই তা বলে দিবে বলে মন্তব্য করেছেন রেল সংশ্লিষ্টরা। (চলবে)

Please Share This Post in Your Social Media

রেলে লুটপাটের কাহিনী-১

তাবাসসুমের নেতৃত্বে আওয়ামী প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয়

নওরোজ রিপোর্ট
Update Time : ১০:২৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গণ-অভ্যুত্থানে বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। চলে গেছে ১০ মাস। কিন্তু অন্যান্য স্থানের ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়েতেও এখনো শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহনকারী, সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তাবাসসুম, সাদরুল, সালাহউদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পদায়ন, বদলী ও নিয়োগ বাণিজ্যের এই ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট কিভাবে এখনও রেলের সদর দপ্তরে পদায়িত থাকে, সেটা সংশ্লিস্টদের বিরাট জিজ্ঞাসা।

তাবাসসুম গংদের অফিস আছে, গাড়ি আছে, বেতন আছে কিন্তু তারা কাজে নাই। তারা যেন জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। গত আট মাসে তারা কে কোন কাজ করেছে তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দাপ্তরিক কোন কাজ না করলেও রেলকে অস্থিতিশীল করতে তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ সহসাই স্ব-মূর্তিতে ফিরে আসবে। তারা এখনও নিজেরা সেই স্বপ্ন দেখে এবং অন্যদেরকে ভয়-ভীতি দেখায়।

প্রাসাদ ষড়যন্ত্র তাবাসসুম গংদের মজ্জাগত। তাবাসসুম, সাদরুল, সালাহউদ্দিনরা ২২ বছরের চাকুরী জীবনের প্রায় পুরোটা সময় সদর দপ্তরেই কর্মরত ছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া এটা কি সম্ভব? এই প্রশ্ন রেলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর।

আওয়ামী সরকারের পুরো সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে হেন কোন অপরাধ নেই তারা করেননি। অর্থের বিনিময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, পদায়ন ও বদলী এই তাবাসসুম সাদরুল গংদের ইচ্ছায় হতো। সরকার পরিবর্তিত হলেও তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা পুনরায় ক্ষমতার বলয়ে যাবার স্বপ্নে বিভোর। কে ভাঙবে এই ত্রয়ীর সিন্ডিকেট। প্রশাসন কি এতটাই অসহায়? রেল সংশ্লিষ্টরা মনে করছে সর্ষের ভিতরই লুকিয়ে আছে ভূত।

তাবাসসুম ইসলাম

তাবাসসুম ইসলাম এর কুকীর্তির ফিরিস্তি :

তাবাসসুম ইসলাম দূর্নীতিবাজ, ক্ষমতালিপ্সু, লাস্যময়ী সম্রাজ্ঞী। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত। প্রকল্পের আওতায় ১০০টি ব্রডগেজ ক্যারেজ চীন থেকে আনা হয়। ক্যারেজগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ক্যারেজ ক্রয়ে তাবাসসুমের দুর্নীতির কারণে রেলওয়েকে বিব্রত হতে হয়েছে। অভিযোগ আছে, চীনা প্রতিষ্ঠানকে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে তিনি নিম্নমানের ক্যারেজ এনেছেন।
তার স্বামী জসিম উদ্দিন হায়দার, ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবে বিসিএস পাস করেন। আওয়ামী সরকারকে মসনদে রাখতে এই জসিম হায়দারদের ভূমিকা দেশব্যাপী আলোচিত। জসিম হায়দার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পিএম দপ্তরের পরিচালকসহ বিভিন্ন জেলার ডিসি ছিলেন। জসিম বিগত সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ায় তার স্ত্রী তাবাসসুম ছিলো সকলের নিকট পূজনীয়। এমনকি রেল সচিব, ডিজি পর্যন্ত তাবাসসুমকে সমীহ করতো। সাবেক রেল সচিব হুমায়ুন কবির এবং রেলের সাবেক ডিজি কামরুল ইসলাম তাকে রেলের ‘রানীর’ মর্যাদায় রাখতেন। তাদের খাস কামরায় তাবাসসুমের ছিল অবাধ যাতায়াত। ২২ বছরের চাকুরী জীবনে তাবাসসুম-এর মাঠ পর্যায়ে কাজের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও কর্মজীবনের প্রতিটি পদোন্নতি তিনি সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে নিয়েছেন।

শেখ পরিবারের আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক সচিব হুমায়ুন কবির দুই ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে গত বছর তাকে গ্রেড-৩ পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করতে সচিব হুমায়ুন কবির পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প ও দোহাজারী কক্সবাজার প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কোটি কোটি টাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সচিব হুমায়ুন কবির বিমান চার্টার করে অতিথিদের কক্সবাজার নিয়ে যান।
তাবাসসুমকে দেন উভয় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করার দায়িত্ব। হাসিনা-তাবাসসুমের ঘনিষ্ঠ ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে তিনি বনে যান প্রশাসনের বড় কর্তা। শুধু রেল নয়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও তাবসসুম অর্থের বিনিময়ে পোস্টিং বাণিজ্য করতেন। হুমায়ুন কবির তো শেখ মুজিবকে নিয়ে গল্প লিখে আগেই সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে সচিব হয়েছেন। প্রকল্প উদ্বোধন কেমিস্ট্রির মাধ্যমে সেবার পেলেন আরো বড় পুরস্কার। সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ!!

বিষয়টি ছিল ঐ সময়ের টক অব দি কান্ট্রি। রেলের সাবেক ডিজি কামরুলও সেদিকেই এগুচ্ছিলেন। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য গুরুদক্ষিণার বিষয়টি বাজারে চাউর হলে সরকার সিদ্ধান্ত বদল করে।

হুমায়ুন-কামরুল-তাবাসসুমদের নীল নকশায় পার্থ সরকারের মতো সিনিয়র একজন কর্মকর্তাকে এডিজি আরএস পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সিনিয়র পাঁচ ব্যাচকে ডিঙ্গিয়ে তাবাসসুম যখন এডিজি আরএস হবার সকল যড়যন্ত্র সম্পন্ন করেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তখন সরকার পরিবর্তন হয়। সে কারণে তাবাসসুমের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নাই। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় তিনি এখন নতুন খেলায় নেমেছেন। তার সিনিয়র কিছু ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তাদের চরিত্র হরন করে উদ্ভট লেখা ফেসবুকে ছড়াচ্ছেন। উদ্দেশ্য, সিনিয়রদের ঝামেলায় ফেলে পথের কাটা দূর করে এডিজি আরএস হওয়া।

অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে তিনি সাহায্য নিচ্ছেন তার সহকর্মী সাদরুল, সালাহউদ্দিন ও বোরহানের। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা নামে বেনামে ফেক আইডি দিয়ে ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন আর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য পাচার করছেন। তোষামোদি আর সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে তাবাসসুম ছিলেন সব সময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। সে কারণে পদায়ন ও পদোন্নতির ঘুষ বাণিজ্য করে তিনি হয়েছেন অঢেল সম্পদের অধিকারী। ঢাকায় তার অভিজাত এলাকায় ৮/১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে স্বামী স্ত্রীর অনেক সম্পদ রয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। চাকুরী জীবনে তিনি কতবার যে বিদেশ ভ্রমন করেছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। সরকারী আদেশের (জিও) মাধ্যমে তিনি বিদেশ ভ্রমণ করে কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। প্রাডো, পাজেরো ছাড়া সাধারণ গাড়িতে তাবাসসুম চড়েন না। নিজ নামে একাধিক গাড়ি বরাদ্দ নেয়া ছাড়াও প্রকল্প পরিচালকদের কাছ থেকে জ্বালানীসহ গাড়ি নিতেন।

পট পরিবর্তনের পরে তাকে চট্টগ্রামে বদলী করা হলেও দুই মাসের মাথায় তিনি স্বপদে ফিরে এসেছেন। বিগত সরকারের পুরো সময় রেলভবনে কাটালেও দোসরদের সহযোগিতায় আবার রেলভবনে ফিরে আসার ব্যাপারটি বিস্ময়কর। তাকে রেলের সংস্থাপন প্রধান করা হতে পারে এমন গুঞ্জন আছে। সেক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী হবে এমন আশংকা করছেন অনেকেই। এই তাবাসসুমরা যে কতটা ভয়ংকর, সময়ই তা বলে দিবে বলে মন্তব্য করেছেন রেল সংশ্লিষ্টরা। (চলবে)