ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভার

- Update Time : ০৩:৫৯:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / ৮০ Time View
গাজীপুর মহানগর শিল্প নগরী টঙ্গী ঘনবসিত এলাকা যানজট নিরসন ও জনদুর্ভোগ কমাতে গাজীপুর থেকে ঢাকার পথে নির্মিত হয়েছিল বহু প্রতীক্ষিত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভার। তবে বর্তমানে সেটিই পরিণত হয়েছে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে।
প্রতিদিনই এই পথে সাধারণ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ প্রাণও হারাচ্ছেন। দিন হোক বা রাত, টঙ্গী বাজার ও বাটা গেট স্টেশন রোড চেরাগ আলী কাদেরিয়ার সামনে সফিউদ্দিন রোড গাজীপুরা পর্যন্ত পুরো ফ্লাইওভার জুড়েই রয়েছে ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতা।
সম্প্রতি টঙ্গীর চেরাগআলী ফ্লাইওভারে প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইয়ের কিছুদিন আগে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে আসা তিনজন ছিনতাইকারী চাপাতি হাতে এক পথচারীকে ধাওয়া করছে। লোকটি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তার পেছনে ছোটে ছিনতাইকারীরাও। আশপাশের লোকজনের চিৎকারে শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়ে যায়। তবে এমন সৌভাগ্য সবার হয় না।
গত শুক্রবার রাতে রঞ্জু নামের এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন। বয়স আনুমানিক ৩০। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও কাজ শেষে মোটরসাইকেলে করে সাতাইশের বাসায় ফিরছিলেন। পথে বাটা গেট এলাকায় ছিনতাইকারীরা তার গতিরোধ করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তারা রঞ্জুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগেও স্টেশন রোড ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, চাপাতি হাতে এক যুবক আরেকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। অনুরোধ বা বিনয় করলেও ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল।
এ ধরনের ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত। টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, বাটা গেট, বনমালা রেলগেট, হকের মোড়, গাজীপুরা, মিলগেটসহ অন্তত আট-দশটি স্থানে নিয়মিত ছিনতাই হচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এসব সংঘবদ্ধ চক্রে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকেই ছিনতাইকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আগে ভয় দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যেত, এখন তারা খুন পর্যন্ত করছে। এ সময়ে ছিনতাইকারীদের হাতে অন্তত ১০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে সম্প্রতিকালে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পূর্ব থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন ফ্লাইওভার উপরে নেই কোনো সিসি ক্যামেরা এবং সিঁড়িগুলোতে নেই কোন লাইটিং এর ব্যবস্থা যার কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনায় কবলিত হয় ,আমরা প্রতিদিনই ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার করছি। কিছু সংখ্যা ফোর্সেরও অভাব তারপরও আপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছি ফ্লাইওভারগুলোতে স্থায়ী ফোর্স মোতায়েন করেছি এবং মোবাইল পেট্রোল বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কোন কাজ আমরা হতে দেব না। পাশাপাশি যদি আমার কোন পুলিশ কর্মকর্তা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকে সেটাও এক বিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।
ঢাকার মালিবাগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন টঙ্গী পূর্ব থানার গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর রহমান। তিনি নিয়মিত বিআরটি বাসে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন,প্রায়ই রাতে টঙ্গী থেকে গাজীপুরে ফিরতে ভয় লাগে। কিছুদিন আগে বিকেলে চেরাগআলী ফ্লাইওভারে বাস থেকে নামার সময় এক যুবক আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। চিৎকার করেও কোনো কাজ হয়নি।
টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় মোটরসাইকেল চালক জুবায়ের হোসেন জানান,“রাত ১০টার পর ফ্লাইওভারে যাওয়া মানেই আতঙ্ক। অল্প কিছুদিন আগে এক যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়ার সময় দুইজন এসে আমার বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচেছিলাম। নিয়মিত টহল থাকলে এমন পরিস্থিতি নাও হতো।নগরবাসীর প্রত্যাশা যত দ্রুত সম্ভব ফ্লাইওভারটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। না হলে কোটি কোটি টাকার এই বিআরটি প্রকল্প উন্নয়নের প্রতীক না হয়ে পরিণত হবে এক ভয়াবহ মরণফাঁদে।