ঢাকা ০৮:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক ও আজকের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শামসুল হক দুররানী
  • Update Time : ০১:১৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • / ২৯ Time View

ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনদিন দেশ শাসন করবেন-এমন ভাবনা কারোই ছিল না। প্রধান উপদেষ্টা হয়ে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিয়ে চমকে দিবেন বিশ্ব নেতৃত্বকে এমনটি চিন্তাও করেননি বিচারক এম এ আউয়াল।

কিন্তু সত্য ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে নিজের জীবনকে বাজি রেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা, তৎকালীন আইনমন্ত্রী কারারুদ্ধ আনিসুল হক ও স্বৈরাচারের সক্রিয় মদদদাতা তৎকালীন আইন সচিব গোলাম সরোয়ারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সকল আসামীদের জামিন এবং পরে মামলা থেকে খালাস দেন।

হামলা, মামলা, চাকুরীচ্যুতি এমনকি গ্রেফতারের হুমকির মুখেও সেদিন তিনি নিজ কর্তব্য পালনে  বিরত ছিলেন না। স্বৈরাচারের আমলে হাতেগোনা দু’একজন বিচারকই কেবল তৎকালীন আইনমন্ত্রী ও আইন সচিবের অন্যায় নির্দেশ পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জনাব এম এ আউয়ালের মত আর একজন সাহসী বিচারক হলেন তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ জনাব আব্দুল মান্নান। যিনি তার চাকুরী জীবনে স্বৈরাচারের পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন শাস্তি ও হয়রানীমূলক পোস্টিংয়ে।

বারবার এক জেলা থেকে অন্য জেলার একেবারে কম গুরুত্বপূর্ণ আদালতে পোস্টিং দিয়েও যাকে বাগে আনতে পারেনি স্বৈরাচার, সেই আব্দুল মান্নান যখন যেখানে দায়িত্ব পেয়েছেন তা সততা ও ন্যায়ের সাথেই পালন করেছেন। পরবর্তীতে অবশ্য এই বঞ্চিত অবহেলিত জেলা ও দায়রা জজ বর্তমান সরকারের আমলেই উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছেন। এতে বিচারপ্রার্থী ও বিচারাঙ্গনসহ সকল মহলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি প্রশংসিত হয়েছে।

ফিরে আসি আগের কথায়। শ্রম আদালতে দায়ের করা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে বহুতলা শ্রম আদালত পায়ে হেটে উপরে উঠার সময় সিঁড়িতে বাতিও ছিল না।

স্বৈরাচার হাসিনার আমলে মামলার হাজিরার দিন আগে থেকেই লিফট অচল করে রাখতো। বন্ধ করে রাখা হতো সিঁড়ির বাতি। দুঃসহ সময় পার করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

খুনি হাসিনাসহ কারারুদ্ধ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক আইন সচিব গোলাম সরোয়ারের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাজা নিশ্চিত করা। কিন্তু বিধিবাম। মহান আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও তাকে কেউ শাস্তি দিতে পারে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন যাকে রাজত্ব দেবেন তাকে ঠেকায় কে?

নিম্ন আদালতের ৬ মাসের দণ্ডাদেশ এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল করেন। ঐ সময় শ্রম আপীল আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের বর্তমানে যুগ্ম সচিব (মতামত) জনাব এম এ আউয়াল।

ওই কারণে তৎকালীন আইন সচিব গোলাম সরোয়ার তার অফিস কক্ষে এম এ আউয়ালকে ডেকে এনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, তোমার কতো বড় সাহস, ইউনূসকে জামিন দিছো। মন চায় ৭ তলা থেকে তোমাকে ফেলে দেই। যাও এর পরিণতি ভোগ করবা। এতো হুমকি ধামকি ভয়-ভীতির মধ্যে আইনের শিক্ষক এম এ আউয়াল ছিলেন কর্মের প্রতি অবিচল।

ফৌজদারী আপীল ৩৭/২০২৪ নং মামলায় পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট শুনানী শেষে আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেয়া রায় বাতিল করে সকলকে বেকসুর খালাস দেন। পরদিন ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

পতিত হাসিনার সহযোগী সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জেলে গেলেও নাটের গুরু সাবেক আইন সচিব গোলাম সরোয়ার আছেন বহাল তবিয়তে। তিনি পলাতক থেকে পেনশনে গিয়ে এখন সকল সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

Please Share This Post in Your Social Media

একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক ও আজকের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শামসুল হক দুররানী
Update Time : ০১:১৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনদিন দেশ শাসন করবেন-এমন ভাবনা কারোই ছিল না। প্রধান উপদেষ্টা হয়ে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিয়ে চমকে দিবেন বিশ্ব নেতৃত্বকে এমনটি চিন্তাও করেননি বিচারক এম এ আউয়াল।

কিন্তু সত্য ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে নিজের জীবনকে বাজি রেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা, তৎকালীন আইনমন্ত্রী কারারুদ্ধ আনিসুল হক ও স্বৈরাচারের সক্রিয় মদদদাতা তৎকালীন আইন সচিব গোলাম সরোয়ারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সকল আসামীদের জামিন এবং পরে মামলা থেকে খালাস দেন।

হামলা, মামলা, চাকুরীচ্যুতি এমনকি গ্রেফতারের হুমকির মুখেও সেদিন তিনি নিজ কর্তব্য পালনে  বিরত ছিলেন না। স্বৈরাচারের আমলে হাতেগোনা দু’একজন বিচারকই কেবল তৎকালীন আইনমন্ত্রী ও আইন সচিবের অন্যায় নির্দেশ পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জনাব এম এ আউয়ালের মত আর একজন সাহসী বিচারক হলেন তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ জনাব আব্দুল মান্নান। যিনি তার চাকুরী জীবনে স্বৈরাচারের পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন শাস্তি ও হয়রানীমূলক পোস্টিংয়ে।

বারবার এক জেলা থেকে অন্য জেলার একেবারে কম গুরুত্বপূর্ণ আদালতে পোস্টিং দিয়েও যাকে বাগে আনতে পারেনি স্বৈরাচার, সেই আব্দুল মান্নান যখন যেখানে দায়িত্ব পেয়েছেন তা সততা ও ন্যায়ের সাথেই পালন করেছেন। পরবর্তীতে অবশ্য এই বঞ্চিত অবহেলিত জেলা ও দায়রা জজ বর্তমান সরকারের আমলেই উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছেন। এতে বিচারপ্রার্থী ও বিচারাঙ্গনসহ সকল মহলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি প্রশংসিত হয়েছে।

ফিরে আসি আগের কথায়। শ্রম আদালতে দায়ের করা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে বহুতলা শ্রম আদালত পায়ে হেটে উপরে উঠার সময় সিঁড়িতে বাতিও ছিল না।

স্বৈরাচার হাসিনার আমলে মামলার হাজিরার দিন আগে থেকেই লিফট অচল করে রাখতো। বন্ধ করে রাখা হতো সিঁড়ির বাতি। দুঃসহ সময় পার করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

খুনি হাসিনাসহ কারারুদ্ধ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক আইন সচিব গোলাম সরোয়ারের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাজা নিশ্চিত করা। কিন্তু বিধিবাম। মহান আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও তাকে কেউ শাস্তি দিতে পারে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন যাকে রাজত্ব দেবেন তাকে ঠেকায় কে?

নিম্ন আদালতের ৬ মাসের দণ্ডাদেশ এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল করেন। ঐ সময় শ্রম আপীল আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের বর্তমানে যুগ্ম সচিব (মতামত) জনাব এম এ আউয়াল।

ওই কারণে তৎকালীন আইন সচিব গোলাম সরোয়ার তার অফিস কক্ষে এম এ আউয়ালকে ডেকে এনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, তোমার কতো বড় সাহস, ইউনূসকে জামিন দিছো। মন চায় ৭ তলা থেকে তোমাকে ফেলে দেই। যাও এর পরিণতি ভোগ করবা। এতো হুমকি ধামকি ভয়-ভীতির মধ্যে আইনের শিক্ষক এম এ আউয়াল ছিলেন কর্মের প্রতি অবিচল।

ফৌজদারী আপীল ৩৭/২০২৪ নং মামলায় পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট শুনানী শেষে আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেয়া রায় বাতিল করে সকলকে বেকসুর খালাস দেন। পরদিন ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

পতিত হাসিনার সহযোগী সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জেলে গেলেও নাটের গুরু সাবেক আইন সচিব গোলাম সরোয়ার আছেন বহাল তবিয়তে। তিনি পলাতক থেকে পেনশনে গিয়ে এখন সকল সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।