তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ

- Update Time : ০৩:১২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / ১১৫ Time View
রংপুরে অসময়ে তিস্তা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলায় ১০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা বেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলায় ডুবতে শুরু করেছে চরে চাষ করা বাদাম ক্ষেত।
বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে তিস্তা বিরুপ আকার ধারণ করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। অরক্ষিত তিস্তার দুইপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা আগাম ব্যবস্থা নিতে দাবি তুলেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, ৪৫ কিলোমিটার তিস্তা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিশেষ করে ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাঁধ সংস্কার না হলে বর্ষার আগে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বন্যায় দুইকূল প্লাবিত হয়ে জনসাথারণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা তহর উদ্দিন, আব্দুর রশীদ, ফরিদ মিয়া, আলিমুদ্দিন, রবিউল ইসলামসহ ১০ জনের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সাথে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবিকার অবলম্বন ৫০ একরের ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।
তিস্তা নদী ভাঙতে ভাঙতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গড়ে তোলা বালুর গ্রামরক্ষা বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্ষায় উজানের ঢলে এ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তিস্তা সেতু ও রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক ভাঙনের হুমকিতে পড়বে।
এছাড়া পানি বৃদ্ধির ফলে কাউনিয়া উপজেলার বেশ কিছু বাদামের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। টেপামদূপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় বেশ কিচু বাদামের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে।
জানা গেছে, তিস্তা নদী নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ ১১৫ কিলোমিটার। এই নদীর ৪৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কমপক্ষে ১০ পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া থেকে নোহালী পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধ রয়েছে। বাঁধের ওপর নদীর ভাঙনের শিকার কমপক্ষে ৮/১০ হাজার মানুষ বাস করছেন। বাঁধের অনেকস্থানের মাটি সরিয়ে ফেলে দোকানপাটও গড়ে উঠেছে। ফলে অরক্ষিত বাঁধের ওই অংশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়া নীলফামারীর জলঢাকার শৌলমারী ও গঙ্গাচড়ার নোহালী সীমান্ত থেকে রংপুরের কাউনিয়ার নীচপাড়া পর্যন্ত এ বাঁধের বেশিরভাগই অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ে ডানতীর বাঁধ।
রংপুর নগরীসহ গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলাকে তিস্তার ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য বাঁধটি নির্মাণ করা হলেও ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় বাঁধটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাঁধের প্রস্থ কমপক্ষে ১৪ ফুট থাকার কথা থাকলেও অনেক স্থানের তা ৬ থেকে ৮ ফুটে নেমে এসেছে।
ডানতীর বাঁধের নীলফামারীর জলঢাকার শৌলমারী এলাকায় দুই কিলোমিটার, আলসিয়াপাড়ায় এক কিলোমিটার ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান বর্ষায় ঝুঁকিপূর্ণস্থান নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব এলাকা সংস্কার করা না হলে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অধিক ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২০ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কার চলছে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রমজান আলী জানান, শংকরদহ গ্রামে ৪৫০ পরিবারের বাস ছিল। কয়েক বছরে বন্যাসহ তিস্তার ভাঙনে সব হারিয়ে পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাকি ছিল ৮০ পরিবার। অসময়ে নদীভাঙনে গত দুই মাসে ১০ পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ফসলের খেত।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুই মাসে অন্তত ৫০ একর ফসলি জমিসহ ১০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। রংপুর-কাকিনা সড়ক থেকে ভাঙনের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। ভাঙন অব্যাহত থাকলে গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে পড়বে সড়কও।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ দ্রুত সংস্কার করা না হলে বর্ষায় বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।
তানিয়া আক্তার কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় ১৫ একর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তারপরও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। বৈরি আবহাওয়ার কারণে ঝড়বৃষ্টি হলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে ।
মো. আহসান হাবিব রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, তিস্তার প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব এলাকার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়