সালমান রুশদির ওপর হামলাকারীর ২৫ বছরের জেল

- Update Time : ০৬:৩৮:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ১১৯ Time View
ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা ও হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত নিউ জার্সির হাদি মাতারকে ২৫ বছরের জেল দিয়েছে আদালত।
দণ্ডিত ওই ব্যক্তির নাম হাদি মাতার (২৭)। তিনি লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।
গত ফেব্রুয়ারিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন হাদি মাতার। শুক্রবার নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া কাউন্টি আদালত তাকে এই সাজা দিয়েছে। সালমান রুশদিকে খুনের চেষ্টার দায়ে হাদিকে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের জেল দেওয়া হল।
২০২২ সালের অগাস্টের ওই হামলায় সালমান রুশদি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। আর একটি হাতের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়।
আড়াই বছর আগে নিউ ইয়র্কের যে স্থানে ওই হামলার ঘটনা ঘটে, তার কাছেই শাটাকোয়া কাউন্টি আদালতে দুই সপ্তাহের শুনানি শেষে মাতারকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারকরা।
ঘটনার দিন লেখকের সঙ্গে মঞ্চে থাকা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসকে আহত করার জন্যও মাতারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। হামলার সময় রিসের মাথায় সামান্য আঘাত লাগে।
এজন্য হাদি মাতারকে ৭ বছরের জেল দেওয়ার পাশাপাশি প্যারোলে মুক্তির ক্ষেত্রে আরও তিন বছর তত্ত্বাবধানে রাখার সাজা দেওয়া হয়েছিল। তাকে দুই সাজাই একসঙ্গে ভোগ করতে হবে।
রুশদিকে মোট ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। তার চোখ, গাল, ঘাড়, বুক, ধড় ও উরুতে ক্ষত হয়। রুশদি হামলার ঘটনার সাক্ষ্যে বলেছিলেন, তিনি ঐতিহাসিক শাটাকোয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখেন।
হামলাকারীর চোখ দেখে তিনি মুষড়ে পড়েন। ওই চোখ গাঢ় কালো ছিল জানিয়ে লেখক বলেন, তা খুব হিংস্রও ঠেকছিল। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, তাকে ঘুষি মারা হয়েছে, তবে পরে তিনি বুঝতে পারেন যে- তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
রুশদির উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রথম প্রকাশের ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ওই হামলা ঘটে।
নবী মুহাম্মদের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত উপন্যাসটি মুসলমানদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল, যাদের কাছে উপন্যাসটির বিষয়বস্তু সৃষ্টিকর্তার নিন্দাকীর্তন ঠেকছিল।
১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশের পর কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ করা হয়। বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি তখন প্রাণনাশের অসংখ্য হুমকি পেতে থাকেন।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণাও করেন তিনি।
ওই বইয়ের জন্য ইরানের তখনকার শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি তাকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেছিলেন। তখনকার বাস্তবতায় সালমান রুশদি ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন।
রুশদির ওপর হামলাকারী হাদি মাতার ২০২২ সালে কারাগার থেকে নিউ ইয়র্ক পোস্ট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশদিকে হত্যার ফতোয়ার জন্য ইরানের তখনকার শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির তারিফ করেছিলেন।
লেখক সম্পর্কে মাতারের ভাষ্য, “আমি মনে করি না তিনি খুব ভালো মানুষ। তিনি এমন এক ব্যক্তি- যিনি ইসলামকে আক্রমণ করেছেন।” মাতার বলেছিলেন যে, তিনি ‘স্যাটানিক ভার্সেসে’র কয়েক পৃষ্ঠা পড়েছেন।
লেবানন থেকে আসা বাবা-মায়ের নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ে জন্ম নেওয়া মাতার লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সহায়তার আরেক মামলাতেও অভিযুক্ত।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়