ঢাকা ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের তালা, সেবা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ

রাজধানী ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:২৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • / ১৯ Time View

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। এতে নগর ভবন থেকে সেবা–সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

আজ শনিবার (১৭ মে) সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তাঁর সমর্থক ও অনুসারীরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন বলেন, তারা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে তালা লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও তাঁর সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাঁদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যত অঘোষিত ছুটি পালন করছেন। তাঁদের কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারছেন না। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও অফিস রয়েছে। এখানেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অফিস করেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কারণে এই অফিসেরও সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেন, কর্মসূচি পালনের দ্বিতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবারও নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই কার্যত নগর ভবন থেকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল নয়টার দিকে নগর ভবনের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁরা বেলা ১১ টা পর্যন্ত নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান তাঁরা।

সচিবালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গেলেও চারদিকে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে ইশরাকের সমর্থকেরা সচিবালয়ের সামনে যেতে পারেননি।

বেলা দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান বলেন, আগামীকাল রোববারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ‘ঢাকাবাসী’।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এর ১৮ দিন পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০২০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের দায়েরকৃত নির্বাচনী মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল দায়ের না করা বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত ‘মতামত প্রদানসংক্রান্ত’ শিরোনামে চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নগরের বাসিন্দারা। সেদিন নগরভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলে। সেই কর্মসূচিতে নগরবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজও তাঁরা এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ ও মিছিলে অংশ নেন।

নগরভবনের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তারা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

কেবল নগর ভবন নয়, সংস্থাটির ১০ টি আঞ্চলিক অফিসেও সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। একটি অঞ্চলের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইশরাকের সমর্থকেরা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন। তারা সেখানে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রবেশ করতে দেননি।

বেলা দুইটার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে মেয়ে ও ভাইকে নিয়ে জুরাইন এলাকা থেকে বাবার মৃত্যুসনদ নিতে এসেছিলেন নাসরিন বেগম। নগর ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এর আগে গত বৃহস্পতিবারও তিনি বাবার মৃত্যু সনদ নিতে এসেছিলেন। আন্দোলনের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। আজ এসে দেখছেন সব ফটকে তালা ঝুলছে। এখন তিনি কি করবেন বুঝতে পারছেন না।’

একই সময়ে মোটরসাইকেলে করে গুলশান এলাকা থেকে তাঁর এক আত্মীয়ের জন্মনিবন্ধনের তথ্য জানতে নগর ভবনে এসেছিলেন শাওন আহমেদ। মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তিনি ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দাবির শহর ঢাকায় তাদের মতো সাধারণ মানুষেরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব ভোগান্তির দ্রুত অবসান চান তারা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

Please Share This Post in Your Social Media

নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের তালা, সেবা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ

রাজধানী ডেস্ক
Update Time : ০৫:২৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। এতে নগর ভবন থেকে সেবা–সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

আজ শনিবার (১৭ মে) সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তাঁর সমর্থক ও অনুসারীরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন বলেন, তারা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে তালা লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও তাঁর সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাঁদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যত অঘোষিত ছুটি পালন করছেন। তাঁদের কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারছেন না। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও অফিস রয়েছে। এখানেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অফিস করেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কারণে এই অফিসেরও সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেন, কর্মসূচি পালনের দ্বিতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবারও নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই কার্যত নগর ভবন থেকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল নয়টার দিকে নগর ভবনের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁরা বেলা ১১ টা পর্যন্ত নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান তাঁরা।

সচিবালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গেলেও চারদিকে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে ইশরাকের সমর্থকেরা সচিবালয়ের সামনে যেতে পারেননি।

বেলা দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান বলেন, আগামীকাল রোববারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ‘ঢাকাবাসী’।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এর ১৮ দিন পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০২০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের দায়েরকৃত নির্বাচনী মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল দায়ের না করা বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত ‘মতামত প্রদানসংক্রান্ত’ শিরোনামে চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নগরের বাসিন্দারা। সেদিন নগরভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলে। সেই কর্মসূচিতে নগরবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজও তাঁরা এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ ও মিছিলে অংশ নেন।

নগরভবনের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তারা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

কেবল নগর ভবন নয়, সংস্থাটির ১০ টি আঞ্চলিক অফিসেও সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। একটি অঞ্চলের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইশরাকের সমর্থকেরা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন। তারা সেখানে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রবেশ করতে দেননি।

বেলা দুইটার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে মেয়ে ও ভাইকে নিয়ে জুরাইন এলাকা থেকে বাবার মৃত্যুসনদ নিতে এসেছিলেন নাসরিন বেগম। নগর ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এর আগে গত বৃহস্পতিবারও তিনি বাবার মৃত্যু সনদ নিতে এসেছিলেন। আন্দোলনের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। আজ এসে দেখছেন সব ফটকে তালা ঝুলছে। এখন তিনি কি করবেন বুঝতে পারছেন না।’

একই সময়ে মোটরসাইকেলে করে গুলশান এলাকা থেকে তাঁর এক আত্মীয়ের জন্মনিবন্ধনের তথ্য জানতে নগর ভবনে এসেছিলেন শাওন আহমেদ। মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তিনি ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দাবির শহর ঢাকায় তাদের মতো সাধারণ মানুষেরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব ভোগান্তির দ্রুত অবসান চান তারা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা