বিএসসি কৃষিবিদদের ছয় দফা দাবিতে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ ও বিক্ষোভ

- Update Time : ০৩:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / ৩৯ Time View
বিএসসি কৃষিবিদদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সামনে থেকে ‘কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের আব্দুল জব্বার মোড় সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে অবস্থান নেন তারা।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই দাবিসমূহ মানা না হলে সারা বাংলায় কৃষিবিদ ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বিএডিসি ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দশম গ্রেডের পদ (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ উপসহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) বিএসসি কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। ডিএইসহ অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে নবম ও অন্যান্য গ্রেডে পদোন্নতি এবং কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস করতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে নবম গ্রেডে (বিএডিসি কোটাভিত্তিক) পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না। দশম গ্রেডের পদগুলো গেজেটের আওতার বাইরে রেখে পৃথক পদসোপান বা প্রচলিত কাঠামো বজায় রাখতে হবে। কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নতুন কোনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না—এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। কৃষি বা কৃষি-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ব্যতীত কেউ “কৃষিবিদ” পদবী ব্যবহার করতে পারবে না—এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীনেই রাখতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘ডিপ্লোমাধারীরা যদি একটি শরীরের হাত হয় তাহলে কৃষিবিদরা সেই শরীরের মস্তিষ্ক। তাই যদি কৃষিবিদরা না থাকে তাহলে বাংলাদেশের কৃষি সেক্টর ও নামে মাত্র হাত নিয়ে প্যারালাইজড হয়ে যাবে। তাই কৃষিবিদদের যথার্থ মর্যাদা ছাড়া কৃষি সেক্টর কে কখনোই সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। তাই ইন্টেরিম সরকারকে বলব কৃষিবিদদের নিয়ে ভাবুন।’
কৃষি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী মো. ইরফান ইউসুফ শিহাব বলেন,’মামার বাড়ির আবদারের মতো শুধু চাকরি চাইলেই হবে না, কাজ করে মেধা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আপনারা যেদিন যথাযথ শিক্ষা, যোগ্যতা, দক্ষতা নিয়ে আমাদের সমমানের হয়ে নবম গ্রেড নিতে আসবেন সেদিনই আমরা আমাদের চাকরিক্ষেত্রে জায়গা দিব। কৃষিবিদ আমাদের ট্যাগ, কৃষিবিদ আমাদের ঐক্য, কৃষিবিদ আমাদের নিষ্ঠা, কৃষিবিদ আমাদের মেধা, কৃষিবিদ আমাদের মনন, এর এদিকে যদি আপনারা আঙ্গুল তোলেন পুরো বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের অবস্থান বুঝিয়ে দেবে।
কৃষি অনুষদের এক শিক্ষার্থী সম্রাট আল হাসান অভিযোগের সুরে বলেন, ‘সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তারা নিয়োগ চান। এখানে পদের মধ্যেই বিজ্ঞান কথাটা আছে। আমরা সকলেই জানি ডিপ্লোমা পড়ার জন্য বিজ্ঞান বিভাগে পড়া আবশ্যক নয়। তাহলে তাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক?
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডিপ্লোমাধারীরা তাদের জন্য দশম গ্রেডের পদ সংরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়েছেন। পদ সংরক্ষিত রাখার আরেকটি অর্থই হলো কোটা অর্থাৎ কোটার মতো করেই তাদের জন্য এই পদটি সংরক্ষিত থাকবে। ভুলে গেলে চলবে না যে এই কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি, তাজা রক্ত ঝড়িয়েছি। এখন আর কোনো বৈষম্য কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।’
আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা জানান, দেশের মানুষের খাদ্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছে কৃষিবিদরা। কৃষিবিদদের এই ছয় দফা দাফি মানা না হলে অতিদ্রুত কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে এমনকি সারা বাংলা জুড়ে কৃষিবিদ ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে।
অবরোধ শেষে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার কাছে ছয় দফা দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপাচার্য বিএসসি কৃষিবিদদের পেশাগত অধিকার রক্ষা ও বৈষম্য নিরসনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন , ডিপ্লোমাধারীদের দাবির বিপরীতে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। এসব দাবি যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। কৃষিবিদদের অস্তিত্ব রক্ষায় যেকোনো যৌক্তিক দাবিতে আমি পাশে আছি।