নানান ফুলে নান্দনিক হয়ে উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

- Update Time : ০৪:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / ৩৬ Time View
কুমিল্লার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত লালমাটির বুকে গড়ে ওঠা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব ক্যানভাস। বছরের প্রতিটি ঋতুতে নিজের মতো করে সাজে এই বিদ্যাপীঠ। তবে গ্রীষ্মের শুরুতেই বাংলা নববর্ষকে ঘিরে প্রকৃতি যেন এক নতুন আবেশে জেগে ওঠে। চারদিক জুড়ে তখন শুধুই রঙ, ঘ্রাণ আর ফুলেল সৌন্দর্যের এক অনুপম ছোঁয়া।
গ্রীষ্মের খরতাপে হাঁসফাঁস করছে প্রকৃতি, কিন্তু সেই ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে গাছে গাছে ফুল ফুটেছে একটু বাড়তি ভালোবাসা নিয়ে। ক্যাম্পাসজুড়ে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, শিমুল, রক্তজবা, কাশফুল ও ক্যাসিয়া জাভানিকাসহ নানা প্রজাতির ফুল। লাল, বেগুনি, হলুদ, সাদা, কমলার মিশেলে সৃষ্টি হয়েছে এক রঙিন আবহ, যা মুগ্ধ করছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক থেকে শুরু করে আগত দর্শনার্থীদেরও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পথ, টিলা ও বনাঞ্চল ঘিরে রয়েছে গাছপালা ও ফুলের সমাহার। পথচারি শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ে গাছের ডালে ঝুলে থাকা সোনালুর ঝাঁকড়া ফুল, কিংবা জারুলের হালকা বেগুনি আভা। কোথাও আবার কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে রাঙিয়ে গেছে পুরো আকাশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, “এখানে প্রতি মৌসুমেই ফুল ফোটে। কিন্তু বৈশাখ এলেই প্রকৃতি যেন একটু বেশিই সুন্দর হয়ে ওঠে। ক্লাসে যেতে যেতে মন ভালো হয়ে যায় এই রঙের ছোঁয়ায়।”
ক্যাম্পাসের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সম্পর্কে গণিত বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনামিকা বলেন,’কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানোর জন্য কৃত্রিম কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। প্রকৃতি নিজেই এই লালমাটির ক্যাম্পাসকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। জারুল, কেসিয়া জাভানিকা, কৃষ্ণচূড়া আর সোনালুর অপরূপ রঙ ও ঘ্রাণে প্রতিনিয়ত রঙিন হয়ে উঠছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আর কিছুদিনের মধ্যেই নবীন শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটবে। মনে হয়, প্রকৃতিও যেন প্রস্তুত নবীনদের বরণ করে নেওয়ার জন্য।’
বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র লাল মাটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতির সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। বসন্ত এলে ক্যাম্পাস যেন রঙিন স্বপ্নে রূপ নেয়। কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকা, শিমুল, গোলাপসহ নানা ফুলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। প্রবেশপথে চোখে পড়ে সবুজের মাঝে লাল-হলুদ ফুলের মেলবন্ধন, যা মন রাঙিয়ে তোলে। কৃষ্ণচূড়া রোডে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, যেন নৈসর্গিক কোনো কাব্যের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। বিকেলের মৃদু হাওয়া আর শহীদ মিনারে গানের আড্ডা ক্যাম্পাসজীবনকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। বৈশাখের বৃষ্টিতে ভিজে কৃষ্ণচূড়া রোডে হাঁটা কিংবা মাঠে ফুটবল খেলার অনুভূতিও একেবারে অনন্য।’
এই ফুলের বাহার কেবল চোখের প্রশান্তিই এনে দেয় না, বরং ক্লান্ত মনকেও জাগিয়ে তোলে নতুন উদ্যমে। প্রকৃতির এমন আবরণে ঢাকা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন শুধু একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং জীবনের সৌন্দর্য আবিষ্কারের এক জীবন্ত পাঠশালা।