ডিসির ড্রাইভার হিসাবে এখনও বহাল তবিয়তে
জুলাই ছাত্র হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা তারেক আজিজ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

- Update Time : ০৭:০২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
- / ২২ Time View

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর)আসনের সাবেক এমপি এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী একএম শাজাহান কামালের সাথে ছাত্রলীগ নেতা তারেক আজিজ (ছবিতে বাম থেকে দ্বিতীয়)।
আগে ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার। আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময়টা দাবড়ে বেড়িয়েছেন। ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দমন পীড়ন চালিয়েছেন ছাত্র-জনতার ওপর।
ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা এখনো প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেউ কেউ জেল হাজতে এবং অনেকেই পলাতক থাকলেও তার প্রভাবে এতটুকু ছেদ পড়েনি। দাপুটে এই ছাত্রলীগ নেতার নাম তারেক আজিজ।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক আজিজ বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) গাড়িচালক। অন্তর্র্বতী সরকারের সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর তারেক আজিজকে ডিসির গাড়িচালক হিসেবে পদায়ন করায় লক্ষ্মীপুর জেলাজুড়ে চলছে তোলপাড়। খোদ জেলা প্রশাসক তাকে রক্ষায় তৎপর রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, অর্থের বিনিময়ে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা তাকে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছেন এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। তারেক আজিজ শুধু একা নন। তার পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার ভাই সাদ্দাম পৌরসভার একই ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম
আহ্বায়ক এবং গত পৌরসভা নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। তার পিতা ছৈয়দ আহাম্মদ পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য। চারটি হত্যা মামলার আসামি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপুর খুবই ঘনিষ্ঠ এই তারেক আজিজ। একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবিও রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর -৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর -২ (রায়পুরা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ঘনিষ্ঠ এই তারেক আজিজ। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তার ছবিও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিসির ড্রাইভার হওয়ার জন্য একজন ড্রাইভারের পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং গ্রেড-১৫ প্রয়োজন। এগুলোর কোনোটিই নেই তারেকের।
সচিবালয়ের পরিবহণ পুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,২০১৪ সালে মাস্টাররোলে লক্ষ্মীপুর সদর ইউএনওর গাড়িচালক হিসেবে চাকরিতে তারেক আজিজের হাতেখড়ি। এসময় তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ইউএনও তাকে সরিয়ে দেন। পরে মাস্টাররোলে কমলনগর এসিল্যান্ডের গাড়িচালক হন। অতীত অনিয়ম, আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং চাকরির শর্তের বেড়াজাল কোনোটিই লক্ষ্মীপুরের ডিসির চালক হওয়ার পথে অন্তরায় হয়নি তার। সরকারি গাড়িচালক হিসেবে গত বছরের ৩১ মার্চ চাকরিতে যোগ দেন তারেক আজিজ।
কয়েক মাসের ব্যবধানে আবার গত ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর ডিসি অফিসে পদায়ন করা হয় তাকে। আর চাকরির এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে ডিসির আস্থাভাজন হয়েছেন তারেক। অথচ তার গ্রেড-১৬। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও দলটির পদধারী হওয়া স্বত্বেও পদ-পদায়নে বঞ্চিত অনেককে পেছনে ফেলেছেন তারেক আজিজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের কাছের বন্ধু হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত তিনি। তার ভাই সাদ্দাম পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং গত পৌরসভা নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ডিসির চালকের ভাই হওয়ার সুবাদে যুবলীগের পদধারী সাদ্দাম এখন স্থানীয় বিআরটিএ কার্যালয়ের বড় দালাল। শুধু তাই নয়, ডিসির প্রভাব খাটিয়ে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের হাজিরহাট বাজারে একটি দোকান ভাইয়ের নামে একসনা বন্দোবস্ত নিয়েছেন তারেক। বন্দোবস্ত পেতে কমলনগর এসিল্যান্ড তার ভাইকে সহায়তা করেছেন বলে নথির তথ্য থেকে জানা যায়।
এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কাছাকাছি রাখায় এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এসবে কর্ণপাত করছেননা স্বয়ং ডিসি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব ও পরিবহন কমিশনার খায়রুল কবীর মেনন বলেন,আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারেক আজিজ আমার ড্রাইভার, এটা সঠিক। কিন্তু সে বা তার পরিবার ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের পদধারী তা জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ না দেয়া পর্যন্ত আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে আপনি বলেছেন আমি অবশ্যই খবর নেবো।”
তাকে রক্ষায় নিজের তৎপরতার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন এমন বিতর্কিত চালককে পাশে রেখে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালানোয় জেলা প্রশাসক নিজেই তার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তবে জেলা প্রশাসক এসব সমালোচনা গায়ে মাখছেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলে তারেক আজিজ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।