ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
নোয়াখালীতে বামনী নদীর ভাঙন রোধে ক্লোজার নির্মাণ ও ব্লক স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন এতো হত্যাকাণ্ডের পর আ.লীগ ন্যূনতম অনুশোচনা প্রকাশ করেনি পিকে হালদারের প্রেতাত্মা বনজ কুমার ও মিহির কান্তি ভ্রাতৃদ্বয়ের চমকপ্রদ কাহিনী বীর শহীদ আবু সাঈদের রংপুরে স্বৈরাচারের পুনর্বাসন বিএনপি নেতা বাচ্চুর বিরুদ্ধে আ.লীগকে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ, ব্যবহৃত লাল গাড়ি ভাইরাল সাতক্ষীরায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারকালে নারী-শিশুসহ ১২জন আটক লাশ উত্তোলনে আগ্রহ নেই পরিবারের, ফিরে গেলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এর ত্রৈমাসিক নিষ্পত্তি সভা অনুষ্ঠিত পঞ্চগড়ে গিনি হাউস জুয়েলার্স থেকে ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

পিকে হালদারের প্রেতাত্মা বনজ কুমার ও মিহির কান্তি ভ্রাতৃদ্বয়ের চমকপ্রদ কাহিনী

আরিফুল হক নভেল
  • Update Time : ১০:৪৭:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৭ Time View

পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার মজুমদার ও সাবেক আমলা মিহির কান্তি মজুমদার ভ্রাতৃদ্বয়ের চানক্য নীতিতে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা ও তার তল্পিবাহকরা খুশি হলেও ভাল থাকেনি দেশের মানুষ। দুই ভাইয়ের লুটপাট এবং নানা অপকর্মের তদন্ত করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে।
দেশের পুঁজি বাজার ও ৪টি ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এর ধানমন্ডি অফিসের পাহারায় নিয়োজিত এখন বনজ কুমারের বড় ভাই মিহির কান্তি মজুমদার, তিনি নিয়মিত ধানমন্ডির ৫নং রোডের ৫৭নং প্লটের ২০ নম্বর বাড়ীতে অফিস করছেন। পুরাতন সাদা রংয়ের ৩ তালা এই বাড়ীতে একসময় অফিস করতেন বহুল আলোচিত ব্যাংক লুটেরা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।
পিকে হালদারের রেখে যাওয়া অফিসের হাল ধরেছেন আলোচিত সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার। দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারের সাবেক এ আমলা নিয়মিতই ধানমন্ডির ওই বাড়িতে অফিস করছেন। মিহির কান্তি মজুমদারের আপন ছোট ভাই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার মজুমদার। বড় ভাইয়ের মতো সাবেক এ অতিরিক্ত আইজিপির বিরুদ্ধেও আছে গুরুতর অভিযোগ। দেশের স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি তৎপরতার নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভ‚মিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে বনজের বিরুদ্ধে।
অবসরে যাওয়ার পর কিছুদিন ভারতে থেকে এখন তিনি সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করছেন। বিতর্কিত এই ৩জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মস্ত্রণালয়।
দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, পিকে, মিহির ও বনজ একই চক্রের সদস্য। প্রতিটি আর্থিক অপরাধম‚লক কর্মকান্ডে তারা ছিলেন একে অপরের সহযোগী। এ চক্র দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অর্থ লোপাট করেছে। লোপাটকৃত সেই অর্থ ব্যবহার হয়েছে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি তৎপরতায়। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে তাদের। এ নেটওয়ার্কে দেশের প্রভাবশালী আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাও যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
পিকে হালদার ভারতে পালিয়ে যান ২০২২ সালের মে মাসে। গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্টের হাতে সেখানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। জামিনে বের হয়ে পিকে হালদার এখন কলকাতায় রাজকীয় জীবন যাপন করছেন। তার পথ অনুসরণ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার মজুমদারও। গত বছরের ৩০ জুলাই অবসরে যাওয়ার পর পরই বিদেশে পাড়ি জমান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক এ প্রধান। তবে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মিহির কান্তি মজুমদার।
রহস্যে ঘেরা ধানমন্ডির ওই বাড়িটি নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রায় এক বিঘা জমির ওপর পুরনো তিনতলা বাড়ি। আশপাশের বাড়িগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার হচ্ছে অফিস হিসেবে। কিন্তু ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানের অফিস তার কোনো নেমপ্লেট নেই। সেখানে মানুষের চলাচল অনেকটাই সীমিত। নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া ওই বাড়িতে অন্যদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে।
বিভিন্ন স‚ত্রে জানা গেছে, নিরিবিলি ওই বাড়িটি ম‚লত বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার ও হুন্ডি তৎপরতা পরিচালনার জন্য ব্যবহার হয়। সেখানে অফিস করেন ২০-২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসে কর্মরত একজন কর্মী বলেন, ‘সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার এখানে নিয়মিত অফিস করেন। সকালে স্যারকে আনতে গাড়ি গেছে। তবে স্যার এখনো অফিসে আসেননি। আদাবরে স্যারের আরেকটি অফিস রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও পিকে হালদার ও বনজ কুমার মজুমদারের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে মিহিরি কান্তি মজুমদার একটি সহযোগী দৈনিকে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা নেই। আমি নিজেই উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পিকে হালদারের সঙ্গে আমার কোনোকালেই কোনো সম্পর্ক ছিল না। এ অফিসও তার নয়। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় পিকে হালদার আমার পেছনে ঘুরেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয় ছিল। আমরা একটা টাকাও তাকে দিইনি।’
এ অফিসে কী ধরনের কাজ হয়, কেন বসেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বসি। উদ্দীপনে থাকাকালীন এখানে আমাকে অফিস করার জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তবে উদ্দীপন কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, ধানমন্ডিতে তাদের এ ধরনের কোনো দপ্তর কখনই ছিল না।
পতিত সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১১ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব হন মিহির কান্তি মজুমদার। এরপর ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) শীর্ষ পদ দখল করতে শুরু করেন তিনি। পিকে হালদারের সহযোগী হিসেবে ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, বিদেশে পাচার, জমি-ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
মিহির কান্তি মজুমদার সর্বশেষ বেসরকারি এনজিও উদ্দীপনের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। সে সময় তিনি ক্ষুদ্র ঋণ আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৭টি প্রকল্পে যুক্ত করেন। এর মাধ্যমে এনজিওটি থেকে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চেয়ারম্যানের আর্থিক অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে এসেছে মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির (এমআরএ) প্রতিবেদনেও। সুশাসনের ঘাটতি ও আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় উদ্দীপনে প্রশাসক বসিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এর পর্ষদ থেকে মিহির কান্তি মজুমদারকে অপসারণ করা হয়েছে। উদ্দীপনের পক্ষ থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারে মিহির কান্তি মজুমদার ও পর্ষদের অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে আলোচিত অর্থনৈতিক দুর্বৃত্ত পিকে হালদারের সঙ্গে মিহির কান্তি মজুমদারের যোগসাজশের বিষয়টিও উঠে এসেছে। মিহির কান্তি মজুমদার উদ্দীপনের চেয়ারম্যান হওয়ার পর সংস্থাটি পিকে হালদারের মালিকানাধীন বহুল আলোচিত কুমিরের খামারটি কিনে নেয়। যদিও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের আইনে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করার কোনো বিধানই নেই। উদ্দীপনের কর্মকর্তারা বলছেন, ময়মনসিংহের ভালুকায় কুমিরের খামারটি কিনেছিলেন পিকে হালদার। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৫৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এরপর খামারটি থেকে কোনো আয় না থাকলেও পিকে হালদারের কাছ থেকে উদ্দীপনের নামে এটি কিনে নেন মিহির কান্তি মজুমদার। ম‚লত এর মাধ্যমে পিকে হালদারের হাতে উদ্দীপনের টাকা তুলে দেয়া হয়েছে। আর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেয়া ঋণও পিকে হালদার আত্মসাৎ করেছেন। কুমিরের ওই খামারের পেছনে উদ্দীপনের ৪২ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
কুমিরের খামারের মতো বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন দিয়ে উদ্দীপন থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মিহির কান্তি মজুমদার। যেমন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান প্রোবের সঙ্গে ২০১৯ সালে উদ্দীপনের একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তির আলোকে উদ্দীপনের কর্মীদের প্যাথলজিক্যাল সার্ভিস দেয়ার কথা ছিল। যদিও চুক্তি অনুযায়ী উদ্দীপনের কর্মীরা সেই সেবা পাননি। প্রকল্পটির আওতায় ভারতীয় নাগরিক বিজয় দাসের মাধ্যমে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের একটি সূত্র। ওই প্রকল্পের টাকা কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার কোনো হদিস নেই।
অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে মিহির কান্তি মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান উদ্দীপনের প্রশাসক ও সাবেক সচিব এএইচএম নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় মিহির কান্তি মজুমদার উদ্দীপনের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এরই মধ্যে আমরা তাকে শোকজ এবং তার উদ্দীপনে সাধারণ সদস্যপদ বাতিল করেছি। আর্থিক এসব অপরাধের কারণে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার জন্য আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। তার আর্থিক অপরাধ সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে দুদকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিছু প্রকল্পের নামে উদ্দীপন থেকে যেসব অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে, সেগুলো বিদেশে পাচার হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। কিছু প্রকল্পে ব্যবহৃত এসব অর্থ আর ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি না।’
দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত মিহির কান্তি মজুমদার বরগুনার তালতলী উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি দখলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এ কাজে ব্যবহার করেছেন ভাই বনজ কুমার মজুমদারের ক্ষমতা। গড়েছেন বাংলো বাড়ি, মাছের ঘের, গরুর খামার, ঢাকায় একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট, হাউজিং কোম্পানিসহ আরো অনেক কিছু। স্ত্রী গীতা রানী মজুমদারের নামেও রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট।
মিহির কান্তি মজুমদারের মতোই সরকারি চাকরিতে থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়েছেন তার ছোট ভাই বনজ কুমার মজুমদার। তাকে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের অধিপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেয়ার পর কর্মজীবনের বড় অংশই তিনি কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে দেখা যায়, চাকরিকালে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে বনজ কুমার মজুমদারের। পরবর্তী সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় এ স্বর্ণ পাইকারি বাজারের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন তিনি। তার নেতৃত্বে দেশ থেকে কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে স্বর্ণ পাচার করা হতো।
প্রভাবশালী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে দ্রæততম সময়ে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবেও পদোন্নতি পান বনজ কুমার। এরপর টানা আট বছর নেতৃত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। এ সময়ের মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় ঢাকার পাশাপাশি বরগুনা ও কুষ্টিয়ায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। তবে এতসব অবৈধ সম্পদের মালিক হলেও বনজ কুমারের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডিসহ নানা অনিয়মে যুক্ত থাকায় চলতি বছরের শুরুতে বনজ কুমারের পাসপোর্ট বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, চট্টগ্রামে বনজ কুমারের বেশ কয়েকটি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। এ ট্রলারগুলোকে তিনি স্বর্ণ চোরাচালানের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। পুলিশের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হওয়ায় বনজ কুমারের এসব ফিশিং ট্রলারকে কখনই তল্লাশির মুখে পড়তে হতো না।
স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির অবৈধ টাকায় দেশে-বিদেশে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। এর মধ্যে শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের রুমঘাটায় বনজ কুমারের বিলাসবহুল একটি বাড়ি রয়েছে।
অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসা বা স্বর্ণ চোরাচালান এগুলো ক্রিমিন্যাল অফেন্স এবং দুর্নীতির ফসল। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নামে অনেকেই এগুলোতে জড়িয়ে গেছে। অর্থ পাচার বা স্বর্ণ চোরাচালান কীভাবে হয়, সেগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানতে হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভ্রাতৃদ্বয় এসব অপরাধে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

পিকে হালদারের প্রেতাত্মা বনজ কুমার ও মিহির কান্তি ভ্রাতৃদ্বয়ের চমকপ্রদ কাহিনী

আরিফুল হক নভেল
Update Time : ১০:৪৭:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার মজুমদার ও সাবেক আমলা মিহির কান্তি মজুমদার ভ্রাতৃদ্বয়ের চানক্য নীতিতে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা ও তার তল্পিবাহকরা খুশি হলেও ভাল থাকেনি দেশের মানুষ। দুই ভাইয়ের লুটপাট এবং নানা অপকর্মের তদন্ত করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে।
দেশের পুঁজি বাজার ও ৪টি ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এর ধানমন্ডি অফিসের পাহারায় নিয়োজিত এখন বনজ কুমারের বড় ভাই মিহির কান্তি মজুমদার, তিনি নিয়মিত ধানমন্ডির ৫নং রোডের ৫৭নং প্লটের ২০ নম্বর বাড়ীতে অফিস করছেন। পুরাতন সাদা রংয়ের ৩ তালা এই বাড়ীতে একসময় অফিস করতেন বহুল আলোচিত ব্যাংক লুটেরা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।
পিকে হালদারের রেখে যাওয়া অফিসের হাল ধরেছেন আলোচিত সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার। দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারের সাবেক এ আমলা নিয়মিতই ধানমন্ডির ওই বাড়িতে অফিস করছেন। মিহির কান্তি মজুমদারের আপন ছোট ভাই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার মজুমদার। বড় ভাইয়ের মতো সাবেক এ অতিরিক্ত আইজিপির বিরুদ্ধেও আছে গুরুতর অভিযোগ। দেশের স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি তৎপরতার নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভ‚মিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে বনজের বিরুদ্ধে।
অবসরে যাওয়ার পর কিছুদিন ভারতে থেকে এখন তিনি সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করছেন। বিতর্কিত এই ৩জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মস্ত্রণালয়।
দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, পিকে, মিহির ও বনজ একই চক্রের সদস্য। প্রতিটি আর্থিক অপরাধম‚লক কর্মকান্ডে তারা ছিলেন একে অপরের সহযোগী। এ চক্র দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অর্থ লোপাট করেছে। লোপাটকৃত সেই অর্থ ব্যবহার হয়েছে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি তৎপরতায়। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে তাদের। এ নেটওয়ার্কে দেশের প্রভাবশালী আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাও যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
পিকে হালদার ভারতে পালিয়ে যান ২০২২ সালের মে মাসে। গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্টের হাতে সেখানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। জামিনে বের হয়ে পিকে হালদার এখন কলকাতায় রাজকীয় জীবন যাপন করছেন। তার পথ অনুসরণ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার মজুমদারও। গত বছরের ৩০ জুলাই অবসরে যাওয়ার পর পরই বিদেশে পাড়ি জমান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক এ প্রধান। তবে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মিহির কান্তি মজুমদার।
রহস্যে ঘেরা ধানমন্ডির ওই বাড়িটি নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রায় এক বিঘা জমির ওপর পুরনো তিনতলা বাড়ি। আশপাশের বাড়িগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার হচ্ছে অফিস হিসেবে। কিন্তু ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানের অফিস তার কোনো নেমপ্লেট নেই। সেখানে মানুষের চলাচল অনেকটাই সীমিত। নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া ওই বাড়িতে অন্যদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে।
বিভিন্ন স‚ত্রে জানা গেছে, নিরিবিলি ওই বাড়িটি ম‚লত বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার ও হুন্ডি তৎপরতা পরিচালনার জন্য ব্যবহার হয়। সেখানে অফিস করেন ২০-২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসে কর্মরত একজন কর্মী বলেন, ‘সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার এখানে নিয়মিত অফিস করেন। সকালে স্যারকে আনতে গাড়ি গেছে। তবে স্যার এখনো অফিসে আসেননি। আদাবরে স্যারের আরেকটি অফিস রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও পিকে হালদার ও বনজ কুমার মজুমদারের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে মিহিরি কান্তি মজুমদার একটি সহযোগী দৈনিকে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা নেই। আমি নিজেই উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পিকে হালদারের সঙ্গে আমার কোনোকালেই কোনো সম্পর্ক ছিল না। এ অফিসও তার নয়। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় পিকে হালদার আমার পেছনে ঘুরেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয় ছিল। আমরা একটা টাকাও তাকে দিইনি।’
এ অফিসে কী ধরনের কাজ হয়, কেন বসেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বসি। উদ্দীপনে থাকাকালীন এখানে আমাকে অফিস করার জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তবে উদ্দীপন কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, ধানমন্ডিতে তাদের এ ধরনের কোনো দপ্তর কখনই ছিল না।
পতিত সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১১ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব হন মিহির কান্তি মজুমদার। এরপর ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) শীর্ষ পদ দখল করতে শুরু করেন তিনি। পিকে হালদারের সহযোগী হিসেবে ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, বিদেশে পাচার, জমি-ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
মিহির কান্তি মজুমদার সর্বশেষ বেসরকারি এনজিও উদ্দীপনের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। সে সময় তিনি ক্ষুদ্র ঋণ আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৭টি প্রকল্পে যুক্ত করেন। এর মাধ্যমে এনজিওটি থেকে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চেয়ারম্যানের আর্থিক অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে এসেছে মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির (এমআরএ) প্রতিবেদনেও। সুশাসনের ঘাটতি ও আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় উদ্দীপনে প্রশাসক বসিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এর পর্ষদ থেকে মিহির কান্তি মজুমদারকে অপসারণ করা হয়েছে। উদ্দীপনের পক্ষ থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারে মিহির কান্তি মজুমদার ও পর্ষদের অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে আলোচিত অর্থনৈতিক দুর্বৃত্ত পিকে হালদারের সঙ্গে মিহির কান্তি মজুমদারের যোগসাজশের বিষয়টিও উঠে এসেছে। মিহির কান্তি মজুমদার উদ্দীপনের চেয়ারম্যান হওয়ার পর সংস্থাটি পিকে হালদারের মালিকানাধীন বহুল আলোচিত কুমিরের খামারটি কিনে নেয়। যদিও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের আইনে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করার কোনো বিধানই নেই। উদ্দীপনের কর্মকর্তারা বলছেন, ময়মনসিংহের ভালুকায় কুমিরের খামারটি কিনেছিলেন পিকে হালদার। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৫৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এরপর খামারটি থেকে কোনো আয় না থাকলেও পিকে হালদারের কাছ থেকে উদ্দীপনের নামে এটি কিনে নেন মিহির কান্তি মজুমদার। ম‚লত এর মাধ্যমে পিকে হালদারের হাতে উদ্দীপনের টাকা তুলে দেয়া হয়েছে। আর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেয়া ঋণও পিকে হালদার আত্মসাৎ করেছেন। কুমিরের ওই খামারের পেছনে উদ্দীপনের ৪২ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
কুমিরের খামারের মতো বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন দিয়ে উদ্দীপন থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মিহির কান্তি মজুমদার। যেমন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান প্রোবের সঙ্গে ২০১৯ সালে উদ্দীপনের একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তির আলোকে উদ্দীপনের কর্মীদের প্যাথলজিক্যাল সার্ভিস দেয়ার কথা ছিল। যদিও চুক্তি অনুযায়ী উদ্দীপনের কর্মীরা সেই সেবা পাননি। প্রকল্পটির আওতায় ভারতীয় নাগরিক বিজয় দাসের মাধ্যমে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের একটি সূত্র। ওই প্রকল্পের টাকা কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার কোনো হদিস নেই।
অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে মিহির কান্তি মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান উদ্দীপনের প্রশাসক ও সাবেক সচিব এএইচএম নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় মিহির কান্তি মজুমদার উদ্দীপনের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এরই মধ্যে আমরা তাকে শোকজ এবং তার উদ্দীপনে সাধারণ সদস্যপদ বাতিল করেছি। আর্থিক এসব অপরাধের কারণে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার জন্য আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। তার আর্থিক অপরাধ সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে দুদকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিছু প্রকল্পের নামে উদ্দীপন থেকে যেসব অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে, সেগুলো বিদেশে পাচার হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। কিছু প্রকল্পে ব্যবহৃত এসব অর্থ আর ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি না।’
দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত মিহির কান্তি মজুমদার বরগুনার তালতলী উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি দখলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এ কাজে ব্যবহার করেছেন ভাই বনজ কুমার মজুমদারের ক্ষমতা। গড়েছেন বাংলো বাড়ি, মাছের ঘের, গরুর খামার, ঢাকায় একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট, হাউজিং কোম্পানিসহ আরো অনেক কিছু। স্ত্রী গীতা রানী মজুমদারের নামেও রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট।
মিহির কান্তি মজুমদারের মতোই সরকারি চাকরিতে থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়েছেন তার ছোট ভাই বনজ কুমার মজুমদার। তাকে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের অধিপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেয়ার পর কর্মজীবনের বড় অংশই তিনি কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে দেখা যায়, চাকরিকালে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে বনজ কুমার মজুমদারের। পরবর্তী সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় এ স্বর্ণ পাইকারি বাজারের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন তিনি। তার নেতৃত্বে দেশ থেকে কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে স্বর্ণ পাচার করা হতো।
প্রভাবশালী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে দ্রæততম সময়ে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবেও পদোন্নতি পান বনজ কুমার। এরপর টানা আট বছর নেতৃত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। এ সময়ের মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় ঢাকার পাশাপাশি বরগুনা ও কুষ্টিয়ায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। তবে এতসব অবৈধ সম্পদের মালিক হলেও বনজ কুমারের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডিসহ নানা অনিয়মে যুক্ত থাকায় চলতি বছরের শুরুতে বনজ কুমারের পাসপোর্ট বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, চট্টগ্রামে বনজ কুমারের বেশ কয়েকটি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। এ ট্রলারগুলোকে তিনি স্বর্ণ চোরাচালানের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। পুলিশের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হওয়ায় বনজ কুমারের এসব ফিশিং ট্রলারকে কখনই তল্লাশির মুখে পড়তে হতো না।
স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির অবৈধ টাকায় দেশে-বিদেশে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। এর মধ্যে শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের রুমঘাটায় বনজ কুমারের বিলাসবহুল একটি বাড়ি রয়েছে।
অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসা বা স্বর্ণ চোরাচালান এগুলো ক্রিমিন্যাল অফেন্স এবং দুর্নীতির ফসল। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নামে অনেকেই এগুলোতে জড়িয়ে গেছে। অর্থ পাচার বা স্বর্ণ চোরাচালান কীভাবে হয়, সেগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানতে হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভ্রাতৃদ্বয় এসব অপরাধে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।’