ঢাকা ১২:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
কেরানীগঞ্জে অবৈধ ব্যাটারী কারখানা সিলগালা, ৭ দিনের মধ্যে দস্তা বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ স্ত্রীর সাথে অভিমান: চিরকুট লিখে যুবকের আত্মহত্যা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে: গণ অধিকার পরিষদ কাফনের কাপড় পরে সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ইনকিলাব মঞ্চের নিয়মের মধ্যে না এলে রেস্টুরেন্টগুলোর বিদ্যুৎ ও পানি বিচ্ছিন্ন করা হবে সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে স্নিগ্ধর পদত্যাগ লালদিয়ায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে : বিডা চেয়ারম্যান আ.লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা বিএনপিতে আসার বক্তব্য নিয়ে রিজভীর প্রতিবাদ দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

গাজা দখলে ট্রাম্পের ‘চোখ কপালে তোলা’ পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে বিতর্কের ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৮:৩২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৭৩ Time View

গাজায় যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক চমকপ্রদ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে অঞ্চলটির দখল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তার দাবি, গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভিয়েরা’ বা বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।

বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই আরব দেশগুলোর কড়া প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। পাঁচজন আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ অঞ্চলটি আরও বেশি সংঘাতময় করে তুলবে।

তবে মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তার কিছু সমর্থক এটিকে ‘যুগান্তকারী উদ্যোগ’ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে একে ‘অসম্ভব’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করছেন। ইসরায়েলেও বিষয়টি নিয়ে নানান মত রয়েছে। দেশটির এক কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী বাইবেলের একটি পদ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘প্রভু আমাদের জন্য মহান কাজ করেছেন, তাই আমরা আনন্দিত।’ তবে অধিকাংশ ইসরায়েলি ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা দেখে হতবাক।

ট্রাম্পের ব্যাখ্যা
হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, আমরা গাজা দখল করবো এবং একে নতুনভাবে গড়ে তুলবো। আমরা সেখানে অবিস্ফোরিত বোমা ও অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করবো এবং দীর্ঘমেয়াদে এর নিয়ন্ত্রণ নেবো। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে সেখানে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।

ট্রাম্প দাবি করেন, এটি হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোনো পরিকল্পনা নয়। ‘সবাই’ চায়, যুক্তরাষ্ট্র এই জমির মালিক হোক এবং একে একটি ‘মহান স্থানে’ পরিণত করুক।

তার মতে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় ফিলিস্তিনিদের থাকা উচিত নয়। বরং অন্য দেশগুলো তাদের গ্রহণ করুক, আর পুনর্গঠনের পর সেখানে ‘বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে’ আসা মানুষ বসবাস করবে, যার মধ্যে কিছু ফিলিস্তিনিও থাকতে পারে।

নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেছেন, এতে অবশ্যই নজর দেওয়া প্রয়োজন… এটি ইতিহাস বদলে দিতে পারে।

নেতানিয়াহুর সরকার মূলত গাজা যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা আশা করেছিল, ট্রাম্প ইসরায়েলকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে নিতে বলবেন, যাতে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো যায়। কিন্তু ট্রাম্প যে পুরো গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলবেন, তা ইসরায়েলিরাও কল্পনা করেননি।

পরিকল্পনার বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ
গাজার বেশিরভাগ জনগণ আগেও একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের জন্য আরেকটি ‘নাকবা’ বা গণবিপর্যয় মেনে নেওয়া সহজ হবে না। এমনকি, যদি গাজাবাসীরা স্বেচ্ছায় চলেও যায়, তবু এটি জাতিগত নির্মূলের শামিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাছাড়া, আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করতে পারে। সৌদি আরব এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা হবে না।

ট্রাম্পের উদ্দেশ্য কী?
অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের একটি নতুন কৌশল। কেউ কেউ এটিকে তার ব্যবসায়ী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখছেন, যেখানে গাজাকে ‘উন্নয়ন প্রকল্পে’ পরিণত করার কথা বলা হচ্ছে।

এক আরব কূটনীতিক জানিয়েছেন, তারা এখনো নিশ্চিত নন এটি নিছক ট্রাম্পের রাজনৈতিক বক্তব্য, নাকি সত্যিই তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান। তবে বিশ্বজুড়ে এই প্রস্তাব ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

গাজা দখলে ট্রাম্পের ‘চোখ কপালে তোলা’ পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে বিতর্কের ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৮:৩২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

গাজায় যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক চমকপ্রদ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে অঞ্চলটির দখল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তার দাবি, গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভিয়েরা’ বা বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।

বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই আরব দেশগুলোর কড়া প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। পাঁচজন আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ অঞ্চলটি আরও বেশি সংঘাতময় করে তুলবে।

তবে মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তার কিছু সমর্থক এটিকে ‘যুগান্তকারী উদ্যোগ’ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে একে ‘অসম্ভব’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করছেন। ইসরায়েলেও বিষয়টি নিয়ে নানান মত রয়েছে। দেশটির এক কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী বাইবেলের একটি পদ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘প্রভু আমাদের জন্য মহান কাজ করেছেন, তাই আমরা আনন্দিত।’ তবে অধিকাংশ ইসরায়েলি ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা দেখে হতবাক।

ট্রাম্পের ব্যাখ্যা
হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, আমরা গাজা দখল করবো এবং একে নতুনভাবে গড়ে তুলবো। আমরা সেখানে অবিস্ফোরিত বোমা ও অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করবো এবং দীর্ঘমেয়াদে এর নিয়ন্ত্রণ নেবো। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে সেখানে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।

ট্রাম্প দাবি করেন, এটি হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোনো পরিকল্পনা নয়। ‘সবাই’ চায়, যুক্তরাষ্ট্র এই জমির মালিক হোক এবং একে একটি ‘মহান স্থানে’ পরিণত করুক।

তার মতে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় ফিলিস্তিনিদের থাকা উচিত নয়। বরং অন্য দেশগুলো তাদের গ্রহণ করুক, আর পুনর্গঠনের পর সেখানে ‘বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে’ আসা মানুষ বসবাস করবে, যার মধ্যে কিছু ফিলিস্তিনিও থাকতে পারে।

নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেছেন, এতে অবশ্যই নজর দেওয়া প্রয়োজন… এটি ইতিহাস বদলে দিতে পারে।

নেতানিয়াহুর সরকার মূলত গাজা যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা আশা করেছিল, ট্রাম্প ইসরায়েলকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে নিতে বলবেন, যাতে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো যায়। কিন্তু ট্রাম্প যে পুরো গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলবেন, তা ইসরায়েলিরাও কল্পনা করেননি।

পরিকল্পনার বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ
গাজার বেশিরভাগ জনগণ আগেও একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের জন্য আরেকটি ‘নাকবা’ বা গণবিপর্যয় মেনে নেওয়া সহজ হবে না। এমনকি, যদি গাজাবাসীরা স্বেচ্ছায় চলেও যায়, তবু এটি জাতিগত নির্মূলের শামিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাছাড়া, আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করতে পারে। সৌদি আরব এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা হবে না।

ট্রাম্পের উদ্দেশ্য কী?
অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের একটি নতুন কৌশল। কেউ কেউ এটিকে তার ব্যবসায়ী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখছেন, যেখানে গাজাকে ‘উন্নয়ন প্রকল্পে’ পরিণত করার কথা বলা হচ্ছে।

এক আরব কূটনীতিক জানিয়েছেন, তারা এখনো নিশ্চিত নন এটি নিছক ট্রাম্পের রাজনৈতিক বক্তব্য, নাকি সত্যিই তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান। তবে বিশ্বজুড়ে এই প্রস্তাব ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।