শেষ হলো ইজতেমার প্রথম পর্ব মোনাজাত

- Update Time : ০২:৩৮:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫৩ Time View
আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইসলামের বাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া এবং রাসুল (স.) প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ী জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লির জিকির আসকার, ইবাদত বন্দেগি, পবিত্র কোরআনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শেষ হয়েছে ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ৯টা ৩৫ মিনিটে। ২৫ মিনিটের দোয়া পরিচালনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের।
ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপার্শ্বে বিশেষভাবে স্থাপিত মোনাজাত মঞ্চ থেকে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ মোনাজাতে প্রায় ২০ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা করছেন ইজতেমার আয়োজকরা।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা থেকে যানবাহন চালাচল বন্ধ থাকায় রবিবার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে ছুটে এসেছেন। অনেক মুসল্লি হেঁটে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন।
প্রথম পর্বের শুরায়ে নিজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান হেদায়েতি বয়ান করছেন। এখান থেকে যারা ৩ চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কী আমল করবেন এবং এখান থেকে যারা মহল্লায় ফিরে যাচ্ছেন তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কী আমল করবে তার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হয়। তাৎক্ষণিক মাওলানা আব্দুল মতিন বয়ান বাংলায় অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নসিহত মূলক কথা বলেন। বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জুবায়ের। ইজতেমা ময়দানে আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষায় লাখো মুসল্লি।
বিশ্ব ইজতেমায় তিন দিনের অংশগ্রহণকারী মুসুল্লী ছাড়াও শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের এসেছেন। তারা আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষায় রয়েছেন। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মুসুল্লীরা বলেন, পরিবহন বন্ধ থাকায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাতেই ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা। রাতে কামারপাড়া সড়কের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানেই ফজরের নামাজ আদায় করে হেদায়াতি বয়ান শুনছেন। ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা থাকলেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মোনাযাতে শরিক হওয়ার জন্য কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বাস ও পিকআপে করে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন নারীরাও লাখো মুসল্লির সাথে আল্লাহকে রাজিখুশি করতে ময়দানে এসেছেন নারীরাও। আকলিমা আক্তার, নাজমা আক্তার, মর্জিনা বেগম কমলা বানুসহ অন্যরা বলেন, আল্লাহর কাছে চাইতে এসেছি। পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি, লাখ লাখ মানুষের মাঝে আল্লাহ হয়তো কারো উছিলায় আমাদের দোয়া কবুল করবেন। উড়াল সেতুর নিচে মহাসড়কের পাশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা। সেখান থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন।
গণপরিবহন সংকটে অফিসগামীদের ভোগান্তি
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাযাত উপলক্ষ্যে গণপরিবহন সংকটে পড়তে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। বিশেষত টঙ্গী থেকে উত্তরামুখী সড়কে গণপরিবহনের জন্য ভোগান্তি বেশি দেখা গেছে। গাজীপুর বা টঙ্গী থেকে যানচলাচল বন্ধ থাকায় তাদেরকে এ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দু-একটি বাস এলেও ভিড়ের কারণে ওঠার উপায় ছিল না। টঙ্গীর ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর মিলগেট থেকে আবদুল্লাহপুর, রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া-টঙ্গীর মন্নুগেট সড়ক এবং ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত পুরো এলাকায় প্রচুর মানুষ।
সড়কের পাশের ঢালু জায়গা ও ফুটপাতে কাগজ, পাটি বিছিয়ে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। জায়গা না পেয়ে অনেকে সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিগত বছরগুলোতে তাবলিগের দুই পক্ষ মাওলানা জোবায়ের ও সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা আলাদাভাবে দুই পর্বে ইজতেমা করতেন। তবে এবারই প্রথম মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা দুই ধাপে ইজতেমা করবেন। রবিবার (২ ফেব্রæয়ারি) আখেরি মোনাজাতে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপ।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপের ইজতেমা। ঢাকার একাংশ এবং ৪১ জেলা মুসল্লিরা প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ নিয়েছেন। আগামী ৩ ফেব্রæয়ারি থেকে ৫ ফেব্রæয়ারি প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিসহ ২২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিবেন।
৮দিন বিরতি দিয়ে ভারতের মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ১৪ ফেব্রæয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন। ১৬ ফেব্রæয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা।গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান কালবেলাকে জানান, আখেরি মোনাজাতের শেষে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় সাত হাজার পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। খিত্তায় খিত্তায় মুসল্লিদের বেশে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মুসল্লিরা যাতে দ্রুত এবং নিরাপদে ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করতে পারে সে জন্য বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে।