ঢাকা ০১:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ভাইরাল হওয়া গানটি আসলে দুঃখের

“ছি ছি ছিরে ননী” এক হৃদয়বিদারক গান পরিণত হলো মজার মিমে

সাজিদুর রহমান
  • Update Time : ০৮:০৭:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ২৩২ Time View

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই একটি গান প্রায়ই কানে আসে – “ছি ছি ছিরে ননী ছি ছি ছি…”। ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব– যেখানেই যান না কেন, এই গানটি কোনো না কোনো ভিডিও বা রিলসে জুড়ে রয়েছে। এমনকি বন্ধুদের আড্ডায়, ক্লাসের ফাঁকে, কিংবা কাজের সময় কেউ একজন হঠাৎ গেয়ে উঠলেই, বাকিরা হেসে গড়াগড়ি খায়।

তবে আপনি কী জানেন? মজার সুর আর মিমে ভাইরাল হওয়া এই গানটি আসলে এক দুঃখের গল্প বয়ে আনে।

“ছি ছি ছিরে ননী” গানটি ভারতীয় রাজ্য আসামের কামরূপী বা অসমিয়া ভাষার একটি পুরনো লোকগীতি। গানের প্রতিটি লাইনে লুকিয়ে আছে এক প্রেমহীন জীবনের বেদনা। গানটি এমন একজনের কষ্টের গল্প বলে, যার সঙ্গিনী ধনসম্পদের মোহে তাকে ছেড়ে চলে যায়।

গানটি প্রথমে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হলেও, প্রযোজক সীতারাম আগরওয়াল এবং প্রয়াত গায়ক-গীতিকার সত্যনারায়ণ অধিকারীর প্রচেষ্টায় এটি নতুনভাবে তৈরি হয়। গানটির সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য সীতারাম গায়ক সত্যনারায়ণ অধিকারীকে কৃতিত্ব দিয়েছেন।

গানের মিউজিক ভিডিওতে মুখ্য শিল্পী বিভূতি ভিশ্বল ও পরিচালক মানভঞ্জন নায়েকের অবদানও উল্লেখযোগ্য। এই শিল্পীরা গানটিকে শুধু ভাইরালই করেননি, এর গভীরতাও তুলে ধরেছেন।

গানের কথাগুলো শুধু মজার সুরেই সীমাবদ্ধ নয়; এতে রয়েছে একটি হৃদয়স্পর্শী বার্তা। চলুন গানটির কিছু অংশের বাংলা অর্থ জেনে নেই।

“ধন কে দেখলু তুই ননী সিনা মন কে চিনলু নাই” – তুমি শুধু ধন-সম্পদ দেখেছো, কিন্তু মানুষের মনের ভালোবাসা চিনতে পারোনি।

“সোনাকে চিনলো বানাকে চিনলো মনিষো চিনলু নাই” – সোনাদানা চিনলে, কিন্তু প্রকৃত মানুষকে চিনলে না।

“ধন নাই বলি মোর পাখে ননী তার কাজে উঠি গলু” – আমার ধনসম্পদ নেই বলে তুমি অন্য কারো সঙ্গে চলে গেলে।

“মই গাঁ যাই করি আসলা বেলে কেন্তা পাছরি দেলু” – আমি একদিন বেড়াতে গেলাম, ফিরে এসে দেখলাম তুমি আমাকে ভুলে গেছো।

“ছি ছি ছিরে ননী ছি ছি ছি” অর্থাৎ ছি ছি ছিরে মেয়ে ছি ছি ছি।

এই গান মানুষের আত্মিক সম্পর্ক ও ভালোবাসার প্রতি প্রশ্ন তোলে। এটা বলে যে, বাহ্যিক সৌন্দর্য বা সম্পদ দেখে প্রকৃত মনের মানুষকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

গানটির আকর্ষণীয় সুর এবং মজার উপস্থাপনা এটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিমের রূপ দিয়েছে। মজার রিল, ভিডিও এবং ক্লিপের মাধ্যমে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইউটিউবে গানটির ভিউ সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১২০ কোটির বেশি। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে লাখো ব্যবহারকারী গানটির ক্লিপ তৈরি করেছেন।

এই গান শুধু হাসি-তামাশার মাধ্যম নয়; এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। মানুষ অনেক সময় বাহ্যিক আকর্ষণ ও সম্পদের দিকে দৌড়ায়। কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা ও আন্তরিকতাকে উপেক্ষা করা কখনো উচিত নয়।

“ছি ছি ছিরে ননী” গানটি কেবল ভাইরাল মিউজিক নয়, এটি আমাদের জীবনের গভীর সত্যকে প্রতিফলিত করে। গানের সুর যত মজারই হোক না কেন, এর প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে এক মর্মস্পর্শী গল্প। তাই, এই গানটি শুনে শুধু মজা নয়, ভাবার সময়ও এসেছে। বাহ্যিক ধনসম্পদের মোহ ছেড়ে, আসুন আমরা প্রকৃত ভালোবাসা ও আন্তরিকতাকে গুরুত্ব দিই।

Please Share This Post in Your Social Media

ভাইরাল হওয়া গানটি আসলে দুঃখের

“ছি ছি ছিরে ননী” এক হৃদয়বিদারক গান পরিণত হলো মজার মিমে

সাজিদুর রহমান
Update Time : ০৮:০৭:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই একটি গান প্রায়ই কানে আসে – “ছি ছি ছিরে ননী ছি ছি ছি…”। ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব– যেখানেই যান না কেন, এই গানটি কোনো না কোনো ভিডিও বা রিলসে জুড়ে রয়েছে। এমনকি বন্ধুদের আড্ডায়, ক্লাসের ফাঁকে, কিংবা কাজের সময় কেউ একজন হঠাৎ গেয়ে উঠলেই, বাকিরা হেসে গড়াগড়ি খায়।

তবে আপনি কী জানেন? মজার সুর আর মিমে ভাইরাল হওয়া এই গানটি আসলে এক দুঃখের গল্প বয়ে আনে।

“ছি ছি ছিরে ননী” গানটি ভারতীয় রাজ্য আসামের কামরূপী বা অসমিয়া ভাষার একটি পুরনো লোকগীতি। গানের প্রতিটি লাইনে লুকিয়ে আছে এক প্রেমহীন জীবনের বেদনা। গানটি এমন একজনের কষ্টের গল্প বলে, যার সঙ্গিনী ধনসম্পদের মোহে তাকে ছেড়ে চলে যায়।

গানটি প্রথমে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হলেও, প্রযোজক সীতারাম আগরওয়াল এবং প্রয়াত গায়ক-গীতিকার সত্যনারায়ণ অধিকারীর প্রচেষ্টায় এটি নতুনভাবে তৈরি হয়। গানটির সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য সীতারাম গায়ক সত্যনারায়ণ অধিকারীকে কৃতিত্ব দিয়েছেন।

গানের মিউজিক ভিডিওতে মুখ্য শিল্পী বিভূতি ভিশ্বল ও পরিচালক মানভঞ্জন নায়েকের অবদানও উল্লেখযোগ্য। এই শিল্পীরা গানটিকে শুধু ভাইরালই করেননি, এর গভীরতাও তুলে ধরেছেন।

গানের কথাগুলো শুধু মজার সুরেই সীমাবদ্ধ নয়; এতে রয়েছে একটি হৃদয়স্পর্শী বার্তা। চলুন গানটির কিছু অংশের বাংলা অর্থ জেনে নেই।

“ধন কে দেখলু তুই ননী সিনা মন কে চিনলু নাই” – তুমি শুধু ধন-সম্পদ দেখেছো, কিন্তু মানুষের মনের ভালোবাসা চিনতে পারোনি।

“সোনাকে চিনলো বানাকে চিনলো মনিষো চিনলু নাই” – সোনাদানা চিনলে, কিন্তু প্রকৃত মানুষকে চিনলে না।

“ধন নাই বলি মোর পাখে ননী তার কাজে উঠি গলু” – আমার ধনসম্পদ নেই বলে তুমি অন্য কারো সঙ্গে চলে গেলে।

“মই গাঁ যাই করি আসলা বেলে কেন্তা পাছরি দেলু” – আমি একদিন বেড়াতে গেলাম, ফিরে এসে দেখলাম তুমি আমাকে ভুলে গেছো।

“ছি ছি ছিরে ননী ছি ছি ছি” অর্থাৎ ছি ছি ছিরে মেয়ে ছি ছি ছি।

এই গান মানুষের আত্মিক সম্পর্ক ও ভালোবাসার প্রতি প্রশ্ন তোলে। এটা বলে যে, বাহ্যিক সৌন্দর্য বা সম্পদ দেখে প্রকৃত মনের মানুষকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

গানটির আকর্ষণীয় সুর এবং মজার উপস্থাপনা এটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিমের রূপ দিয়েছে। মজার রিল, ভিডিও এবং ক্লিপের মাধ্যমে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইউটিউবে গানটির ভিউ সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১২০ কোটির বেশি। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে লাখো ব্যবহারকারী গানটির ক্লিপ তৈরি করেছেন।

এই গান শুধু হাসি-তামাশার মাধ্যম নয়; এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। মানুষ অনেক সময় বাহ্যিক আকর্ষণ ও সম্পদের দিকে দৌড়ায়। কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা ও আন্তরিকতাকে উপেক্ষা করা কখনো উচিত নয়।

“ছি ছি ছিরে ননী” গানটি কেবল ভাইরাল মিউজিক নয়, এটি আমাদের জীবনের গভীর সত্যকে প্রতিফলিত করে। গানের সুর যত মজারই হোক না কেন, এর প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে এক মর্মস্পর্শী গল্প। তাই, এই গানটি শুনে শুধু মজা নয়, ভাবার সময়ও এসেছে। বাহ্যিক ধনসম্পদের মোহ ছেড়ে, আসুন আমরা প্রকৃত ভালোবাসা ও আন্তরিকতাকে গুরুত্ব দিই।