ঢাকা ০২:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ডেঙ্গুতে আরও ৮ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি: মিয়া গোলাম পরওয়ার জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না: মান্না অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আমরা সবাই ব্যর্থ: তারেক রহমান যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন ততই কল্যাণ: মির্জা ফখরুল বিপ্লবে জীবন দেয় বাচ্চারা, পদ ভাগাভাগি করেন মুরব্বিরা: হাসনাত আব্দুল্লাহ ভবিষ্যতে কেউ টাকা পাচার করলেই ধরা পড়বে: অর্থ উপদেষ্টা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র সংস্কারই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও পোপ ফ্রান্সিসের নামে ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ চালু ভ্যাটিকানে সাকিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বিসিবি: ক্রীড়া উপদেষ্টা
১৯৭৬ সালে প্রথম কুলখানী করেন সালাম পিন্টু

স্বাধীনতার মহান স্থপতি মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী কাল

আবদুল গাফফার মাহমুদ
  • Update Time : ০৬:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩ Time View

স্বাধীনতার মহান স্থপতি, আজীবন সংগ্রামী, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা পিজি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম তৎকালীন ন্যাপ নেতা আবদুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে কুলখানি করেন। এরপর আস্তে আস্তে তার মাজার প্রাঙ্গনে কুলখানির আয়োজন শুরু হয়। ভাসানীর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েই সালাম পিন্টু স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।

পরবর্তীতে মাওলানা ভাসানীর পরামর্শে জিয়াউর রহমান বিএনপি সংগঠিত করেন। বিচারপতি সায়েমকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেন।মাওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালইয়াদিন’। অর্থাৎ তোমার পথে তুমি, আমার পথে আমি। আজ থেকে তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।

মাওলানা জিয়াকে বলেন, বিএনপি গঠন করলে মশিউর রহমান যাদু মিয়া সব সহযোগিতা করবেন। জিয়া বিএনপি গঠনের পর থেকেই ভাসানীর নির্দেশে সালাম পিন্টু বিএনপিতে যোগদান করেন। বেগম জিয়া তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু ২১ আগস্ট বি বি এভিনিউয়ে বোমা হামলার মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পিন্টুকে আসামী করা হয়। বিগত ১৮ বছর যাবত তিনি জেলেই আছেন। টাঙ্গাইলের বিএনপিতে এই পরিবারের আবদান সবচেয়ে বেশী। তারা আবার বিএনপি করার কারণে সবচেয়ে নির্যাতিত পরিবার।

আবদুস সালাম পিন্টু ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু

সালাম পিন্টু ও তার ঐতিহ্যবাহী পরিবার
আবদুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলাধীন যমুনা বিধোত গুলিপেচা গ্রামের ডাঃ মরহুম মহিউদ্দিন মিয়ার জ্যৈষ্ঠ সন্তান। ডাঃ মহিউদ্দিন এলাকায় মহু ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী নলিন বাজারে ছিল তার চেম্বার। এলাকার মানুষের চিকিৎসায় সে সময় একমাত্র ভরসা ছিলেন এই মহু ডাক্তার। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর আঙ্গুঁর কোম্পানী, হাকিম কোম্পানী, ভোলা কোম্পানী ও আরজু কোম্পানীর সকল সদস্যকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন।

সিরাজকান্দির চরে (বর্তমান যুমনা ব্রীজের উত্তর পাশে) যমুনা নদীতে পাক বাহিনীর ভারী যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী একটি জাহাজ মুক্তিবাহিনী ডুবিয়ে দেয়। সে সময়ে এটি ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক যুগান্তকারী ঘটনা।সে সময় এই ঘটনা দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। রাতারাতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে কাদের সিদ্দিকীকে বাঘা সিদ্দিকী উপাধি দিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়। এই খবরে গোটা দেশবাসী উৎফুল্ল হয়ে উঠে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারী সমরাস্ত্র বোঝাই ওই জাহাজটি উত্তরবঙ্গ সীমান্তে পৌঁছতে পারলে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার সাথে জড়িত মুক্তিযোদ্ধারাও এসে মহু ডাক্তারের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল টাইফয়েড আক্রান্ত। মহু ডাক্তার তাদের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন।

মহু ডাক্তারের বড় ছেলে আবদুস সালাম পিন্টু। ‘৭১ সালে পাক-বাহিনী যেদিন প্রথম ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল মার্চ করে নাটিয়াপাড়া ব্রীজে সালাম পিন্টুর নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। সেখানে বেশ কিছু সময় যুদ্ধ চলার পর পাক-বাহিনীর ভারী অস্ত্রেশস্ত্রের আক্রমণে টিকতে না পেরে প্রতিরোধকারীরা প্রতিরোধ তুলে নিতে বাধ্য হন। পরে সালাম পিন্টু বাড়ী ফিরে যাবার সময় পাকুটিয়া এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাকে বহনকারী গাড়ী পুকুরে পড়ে যায়। এতে গুরুত্বর আহত হয়ে দীর্ঘদিন তিনি বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা নেন। স্বাধীনতার পরে তিনি ওকালতি পাস করে টাঙ্গাইলে আয়কর আইনজীবী হিসাবে প্রাকটিস শুরু করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি বিএনপিতেই আছেন। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় ১৮ বছর যাবত জেলে। তার ছোট ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। ইতি পূর্বে তিনি ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক ছিলেন।

তিনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূইয়াপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একাধিকবার। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনার সমাবেশে যড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত গ্রেনেড হামলা মামলার আসামী হিসাবে কারাগারে আছেন। তার ছোট ভাই আবদসু সেলিম ‘৭১-এ ভারতে ট্রেনিং নিয়ে প্রথমে টাঙ্গাইলে আসেন। তাদের দলটিই টাঙ্গাইলে প্রথম মুক্তিবাহিনীর আগমন। ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ, মুক্তি বাহিনীর হাকিম কোম্পানীর অধীনে প্লাটুন কমান্ডার আঃ হাইয়ের অধীনে যুদ্ধ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

১৯৭৬ সালে প্রথম কুলখানী করেন সালাম পিন্টু

স্বাধীনতার মহান স্থপতি মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী কাল

আবদুল গাফফার মাহমুদ
Update Time : ০৬:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

স্বাধীনতার মহান স্থপতি, আজীবন সংগ্রামী, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা পিজি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম তৎকালীন ন্যাপ নেতা আবদুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে কুলখানি করেন। এরপর আস্তে আস্তে তার মাজার প্রাঙ্গনে কুলখানির আয়োজন শুরু হয়। ভাসানীর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েই সালাম পিন্টু স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।

পরবর্তীতে মাওলানা ভাসানীর পরামর্শে জিয়াউর রহমান বিএনপি সংগঠিত করেন। বিচারপতি সায়েমকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেন।মাওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালইয়াদিন’। অর্থাৎ তোমার পথে তুমি, আমার পথে আমি। আজ থেকে তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।

মাওলানা জিয়াকে বলেন, বিএনপি গঠন করলে মশিউর রহমান যাদু মিয়া সব সহযোগিতা করবেন। জিয়া বিএনপি গঠনের পর থেকেই ভাসানীর নির্দেশে সালাম পিন্টু বিএনপিতে যোগদান করেন। বেগম জিয়া তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু ২১ আগস্ট বি বি এভিনিউয়ে বোমা হামলার মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পিন্টুকে আসামী করা হয়। বিগত ১৮ বছর যাবত তিনি জেলেই আছেন। টাঙ্গাইলের বিএনপিতে এই পরিবারের আবদান সবচেয়ে বেশী। তারা আবার বিএনপি করার কারণে সবচেয়ে নির্যাতিত পরিবার।

আবদুস সালাম পিন্টু ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু

সালাম পিন্টু ও তার ঐতিহ্যবাহী পরিবার
আবদুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলাধীন যমুনা বিধোত গুলিপেচা গ্রামের ডাঃ মরহুম মহিউদ্দিন মিয়ার জ্যৈষ্ঠ সন্তান। ডাঃ মহিউদ্দিন এলাকায় মহু ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী নলিন বাজারে ছিল তার চেম্বার। এলাকার মানুষের চিকিৎসায় সে সময় একমাত্র ভরসা ছিলেন এই মহু ডাক্তার। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর আঙ্গুঁর কোম্পানী, হাকিম কোম্পানী, ভোলা কোম্পানী ও আরজু কোম্পানীর সকল সদস্যকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন।

সিরাজকান্দির চরে (বর্তমান যুমনা ব্রীজের উত্তর পাশে) যমুনা নদীতে পাক বাহিনীর ভারী যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী একটি জাহাজ মুক্তিবাহিনী ডুবিয়ে দেয়। সে সময়ে এটি ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক যুগান্তকারী ঘটনা।সে সময় এই ঘটনা দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। রাতারাতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে কাদের সিদ্দিকীকে বাঘা সিদ্দিকী উপাধি দিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়। এই খবরে গোটা দেশবাসী উৎফুল্ল হয়ে উঠে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারী সমরাস্ত্র বোঝাই ওই জাহাজটি উত্তরবঙ্গ সীমান্তে পৌঁছতে পারলে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার সাথে জড়িত মুক্তিযোদ্ধারাও এসে মহু ডাক্তারের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল টাইফয়েড আক্রান্ত। মহু ডাক্তার তাদের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন।

মহু ডাক্তারের বড় ছেলে আবদুস সালাম পিন্টু। ‘৭১ সালে পাক-বাহিনী যেদিন প্রথম ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল মার্চ করে নাটিয়াপাড়া ব্রীজে সালাম পিন্টুর নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। সেখানে বেশ কিছু সময় যুদ্ধ চলার পর পাক-বাহিনীর ভারী অস্ত্রেশস্ত্রের আক্রমণে টিকতে না পেরে প্রতিরোধকারীরা প্রতিরোধ তুলে নিতে বাধ্য হন। পরে সালাম পিন্টু বাড়ী ফিরে যাবার সময় পাকুটিয়া এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাকে বহনকারী গাড়ী পুকুরে পড়ে যায়। এতে গুরুত্বর আহত হয়ে দীর্ঘদিন তিনি বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা নেন। স্বাধীনতার পরে তিনি ওকালতি পাস করে টাঙ্গাইলে আয়কর আইনজীবী হিসাবে প্রাকটিস শুরু করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি বিএনপিতেই আছেন। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় ১৮ বছর যাবত জেলে। তার ছোট ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। ইতি পূর্বে তিনি ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক ছিলেন।

তিনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূইয়াপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একাধিকবার। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনার সমাবেশে যড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত গ্রেনেড হামলা মামলার আসামী হিসাবে কারাগারে আছেন। তার ছোট ভাই আবদসু সেলিম ‘৭১-এ ভারতে ট্রেনিং নিয়ে প্রথমে টাঙ্গাইলে আসেন। তাদের দলটিই টাঙ্গাইলে প্রথম মুক্তিবাহিনীর আগমন। ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ, মুক্তি বাহিনীর হাকিম কোম্পানীর অধীনে প্লাটুন কমান্ডার আঃ হাইয়ের অধীনে যুদ্ধ করেছেন।