পিকে হালদার স্টাইলে হাজার কোটি টাকার ঋণ মাফিয়া রতন এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে !
- Update Time : ০৬:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ৪ Time View
ব্যাংক লোপাটের মাফিয়া চক্রের মূলহোতা রতন এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই ব্যাংক লুটেরা প্রতারক ও দালাল এবং মাফিয়া চক্রের মূল হোতার পুরা নাম হায়দার আলী রতন। ফ্যাসিবাদি হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী আওয়ামীলীগ নেতা ওবায়দুল কাদের ও সাবেক কেবিনেট সচিব কবির বিন আনোয়ারের দোসর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এই রতন। বাড়ী ফেনী এবং সম্পর্কে ওবায়দুল কাদেরের ভাগনা। ঢাকার ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের মাইডাস বিল্ডিং-এর ৭ তলায় ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড নামে তার একটি অফিস থাকলেও বেশীর ভাগ সময়ে সেই অফিস এখন তালাবন্ধ থাকে।
বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে । সেইসব সংস্থাগুলোর সূত্রমতে,নামসর্বস্ব একাধিক প্রতিষ্ঠান খুলে ‘পিকে হালদার স্টাইলে’ এই রতন আত্মসাৎ করেছেন হাজার কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি অন্তত সাতটি ব্যাংক থেকে এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন রতন । দুদকের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিলেছে অর্থ লোপাটের দালিলিক তথ্য-প্রমাণও। ব্যাংক পাড়ায় আলোচিত নতুন এই মাফিয়ার নাম আলী হায়দার রতন।
অভিযোগ আছে, তার কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৬০৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ফেরত পায়নি পাঁচটি ব্যাংক। এরপরও বেসরকারি একটি ব্যাংক রতনের নতুন প্রতিষ্ঠানের নামে রাতারাতি ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছেও এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।
আরও জানা গেছে, আলী হায়দার রতন সাতটি ব্যাংক থেকে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের একটি অনুসন্ধান দল এসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে জমা সব ধরনের রেকর্ডপত্র, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এসব রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করে ঋণ জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে আলী হায়দার রতন বলেন, ‘হাইকোর্টের নিদের্শে দুদক ব্যাংক ঋণের বিষয়ে একটি তদন্ত করেছে বলে শুনেছি। তবে আমি এ ব্যাপারে কোনো পার্টি না। আমার সঙ্গে দুদক কখনো যোগাযোগ করেনি। আমি ২০ বছর ধরে ব্যবসা করি। আমার ১০টি কোম্পানি রয়েছে। এর কয়েকটির নামে এখনো ৬০০ কোটি টাকার কাজ চলমান। ফলে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ থাকলে সেটা দোষের কিছু? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের একটি কোম্পানির নামে ২৬টি ব্যাংকে যদি ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ থাকতে পারে আমি ঋণ নিয়ে ব্যবসা করলে ক্ষতি কি?
ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করে দুদক জানতে পেরেছে, কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে পাঁচটি ব্যাংক থেকে ধারাবাহিকভাবে ৬০৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন আলী হায়দার রতন। ঋণখেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান নতুন করে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে না। তাই কৌশল হিসাবে ব্র্যান্ড শেয়ার ট্রেডিং নামের নতুন একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন রতন। বাস্তবে এই কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে কর্মকর্তাদের সহায়তায় ‘পিকে হালদার স্টাইলে’ নতুন করে ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ নেন। এই অর্থের কিছু অংশ দিয়ে কোম্পানির নামে জায়গা-জমি কেনেন। বাকি অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। একইভাবে তার আরেক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি দুটি ব্যাংক থেকে কয়েকশ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। রাতের আঁধারে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে রতনের অর্থ তোলার ঘটনা মিডিয়ায় আলোচিত হয়।
বিএফআইইউর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দুদক নিশ্চিত হয়েছে, ব্র্যান্ড শেয়ার কোম্পানির নামে ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে বেসরকারি এক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ঋণ আবেদনে প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেখানো হয়েছে মোহাম্মদ আতাউর রহমান ও মো. মামুন রশিদকে। কিন্তু ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে অবস্থিত রতনের ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের অফিসকেই ব্র্যান্ড শেয়ার কোম্পানির অফিস হিসাবে দেখানো হয়েছে। ব্র্যান্ড শেয়ার কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ১০ জানুয়ারি বেসরকারি ওই ব্যাংকে ৩৫০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। আবেদনের দিনই ব্যাংকটির গুলশান শাখার ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা রতনের ধানমন্ডির অফিস পরিদর্শন করে মতামত দেন, ‘গ্রাহক প্রচুর পরিমানে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করে।’ অথচ উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহকের এক টাকার পণ্যসামগ্রী আমদানির রেকর্ড নেই। একই কায়দায় অন্য পাঁচটি ব্যাংক থেকে নেওয়া ৫৫৯ কোটি টাকা ঋণের বেশিরভাগ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন রতন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, আলী হায়দার রতনের ন্যাশনাল ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। সবশেষ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাত ৯টায় ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২৮ কোটি টাকা তোলার ঘটনা গণমাধ্যমে আলোচিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়কের চরম আপত্তি থাকার পরও ব্যাংক আগের দিন এই ঋণ ছাড় করেছিল বলে নথিপত্রে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকে রতনের ঋণের পরিমাণ ২৩৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বনশ্রী শাখা থেকে ঋণের এই অর্থ তুলে বিদেশে পাচার করেন। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ও বেসরকারি আর একটি ব্যাংকে রতনের ঋণের পরিমাণ ২৫৮ কোটি টাকা। এই অর্থের বেশির ভাগই তিনি বিদেশে পাচার করেছেন বলে জানতে পেরেছে দুদক।