ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি: মিয়া গোলাম পরওয়ার জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না: মান্না অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আমরা সবাই ব্যর্থ: তারেক রহমান যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন ততই কল্যাণ: মির্জা ফখরুল বিপ্লবে জীবন দেয় বাচ্চারা, পদ ভাগাভাগি করেন মুরব্বিরা: হাসনাত আব্দুল্লাহ ভবিষ্যতে কেউ টাকা পাচার করলেই ধরা পড়বে: অর্থ উপদেষ্টা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র সংস্কারই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও পোপ ফ্রান্সিসের নামে ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ চালু ভ্যাটিকানে সাকিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বিসিবি: ক্রীড়া উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আসছে বাংলাদেশে

নোয়াখালীতে খাল দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:০১:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৭ Time View

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে খাল দখল করে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এক যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।নিহত যুবদল নেতার নাম মো.ইউনুস আলী ওরফে এরশাদ (৪০)।

তিনি চরফকিরা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এবং একই ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এরশাদ উপজেলার দিয়ারাবালুয়া গুচ্ছ গ্রামের রইছুল হকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন নৌকার মাঝি এবং তিন সন্তানের ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম নেওয়ার পথে ফেনীতে তার মৃত্যু হয়। এর আগে, একই দিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছ গ্রাম ঘাটে এই ঘটনা ঘটে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।

নিহতের ভগ্নিপতি মো.জয়নাল আবেদীন আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, গত ৬-৭ মাস আগে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী (পলাতক) আমার থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মুছাপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মুছাপুর ক্লোজারের পশ্চিমের দা খালটি ইজারা দেয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খালটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা।

গত বুধবার বিকেলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ও বিএনপি নেতা বাবরের নির্দেশে স্থানীয় সমীর খাঁন,জাবেদ,ওবায়দুল্যাহ খান সহ ১০-১৫জন দায়ের খালে আমাদের মাছ ধরার জালটি কেটে তাদের জাল বসিয়ে দেয়। খাল দখলকারীরা বলে আওয়ামী সরকার এখন নেই তাদের সময়ের দেওয়া ইজারা বাতিল। এই বলে তারা খালটি দখলে নেয়।

ভগ্নিপতি জয়নাল আবেদীন আলমগীর অভিযোগ করে আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমিসহ আমাদের পরিবারের আরও চারজন সদস্য আমাদের জাল কেটে খাল দখল করে মাছ ধরার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করতে চরফকিরা ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রাম ঘাটে যাই।

স্থানীয় নেজাম (৪২) তার ছেলে সুজন (২৫) ও তারেক (২৬) এবং তাদের আত্মীয় তারেক (২৬) বাবলু (২৭) রুমনের (২৫ ) সাথে আমাদের বাগবিতন্ডা বেঁধে যায়। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে নিজাম ডাকাত ও তার লোকজন ইউনুছ আলী এরশাদকে তলপেটে ছুরিকাঘাত করলে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। এছাড়া আরও চারজনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। পরে গুরুতর আহত এরশাদকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রাত ৯টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম নেওয়ার পথে ফেনীতে তার মৃত্যু হয়। এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর অভিযোগ করে বলেন,মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান ও তার ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক মানছুরুল হক বাবরের নির্দেশে এই হামলা ও হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

চরফকিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী বিপ্লব বলেন,বৃহস্পতিবার গুচ্ছ গ্রামের ঘাট এলাকায় একটি ভিটিতে মাটি ফেলাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে মুছাপুরের খাল দখলের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে।
নিহতের ছোট ভাই সামছুদ্দিন বলেন, দুই মাস আগে উপজেলার গুচ্ছ গ্রামের সুভাষ নামে এক ব্যক্তির থেকে ১ ডিসমিল জমি তিন বছরের জন্য বন্ধক নেয় আমার বড় ভাই এরশাদ।

বৃহস্পতিবার সকালে ওই জায়গার ওপর মাটি ফেলে ভিটি বাঁধার কাজ শুরু করে আমার ভাইয়েরা। তখন সুজন, জাবেদ,জিয়া খাঁন,সমীর খাঁন মেঘনা নদী হয়ে গুচ্ছ গ্রাম ঘাট দিয়ে সেখানে আক্রমণ চালায়। এতে আমার চার ভাই আহত হয়। বড় ভাইকে তলপেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়া গত বুধবার বিকেলে বিএনপি নেতা শাহজাহান ও তার ভাই বাবরের নির্দেশে মুছাপুরের দায়ের খাল দখল করে আমাদের মাছ ধরার জাল কেটে হামলাকারীরা দখল করে।

নিহতের স্বজনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এই ঘটনার সাথে আমিও আমার ছোট ভাই বাবর কোনো ভাবেই জড়িত নেই। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। কোন নেতা ষড়যন্ত্র করে আমাদের নাম বলাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে বাবরের মুঠোফোনে কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওরোজ/এসএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

নোয়াখালীতে খাল দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:০১:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে খাল দখল করে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এক যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।নিহত যুবদল নেতার নাম মো.ইউনুস আলী ওরফে এরশাদ (৪০)।

তিনি চরফকিরা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এবং একই ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এরশাদ উপজেলার দিয়ারাবালুয়া গুচ্ছ গ্রামের রইছুল হকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন নৌকার মাঝি এবং তিন সন্তানের ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম নেওয়ার পথে ফেনীতে তার মৃত্যু হয়। এর আগে, একই দিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছ গ্রাম ঘাটে এই ঘটনা ঘটে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।

নিহতের ভগ্নিপতি মো.জয়নাল আবেদীন আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, গত ৬-৭ মাস আগে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী (পলাতক) আমার থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মুছাপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মুছাপুর ক্লোজারের পশ্চিমের দা খালটি ইজারা দেয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খালটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা।

গত বুধবার বিকেলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ও বিএনপি নেতা বাবরের নির্দেশে স্থানীয় সমীর খাঁন,জাবেদ,ওবায়দুল্যাহ খান সহ ১০-১৫জন দায়ের খালে আমাদের মাছ ধরার জালটি কেটে তাদের জাল বসিয়ে দেয়। খাল দখলকারীরা বলে আওয়ামী সরকার এখন নেই তাদের সময়ের দেওয়া ইজারা বাতিল। এই বলে তারা খালটি দখলে নেয়।

ভগ্নিপতি জয়নাল আবেদীন আলমগীর অভিযোগ করে আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমিসহ আমাদের পরিবারের আরও চারজন সদস্য আমাদের জাল কেটে খাল দখল করে মাছ ধরার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করতে চরফকিরা ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রাম ঘাটে যাই।

স্থানীয় নেজাম (৪২) তার ছেলে সুজন (২৫) ও তারেক (২৬) এবং তাদের আত্মীয় তারেক (২৬) বাবলু (২৭) রুমনের (২৫ ) সাথে আমাদের বাগবিতন্ডা বেঁধে যায়। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে নিজাম ডাকাত ও তার লোকজন ইউনুছ আলী এরশাদকে তলপেটে ছুরিকাঘাত করলে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। এছাড়া আরও চারজনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। পরে গুরুতর আহত এরশাদকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রাত ৯টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম নেওয়ার পথে ফেনীতে তার মৃত্যু হয়। এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর অভিযোগ করে বলেন,মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান ও তার ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক মানছুরুল হক বাবরের নির্দেশে এই হামলা ও হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

চরফকিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী বিপ্লব বলেন,বৃহস্পতিবার গুচ্ছ গ্রামের ঘাট এলাকায় একটি ভিটিতে মাটি ফেলাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে মুছাপুরের খাল দখলের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে।
নিহতের ছোট ভাই সামছুদ্দিন বলেন, দুই মাস আগে উপজেলার গুচ্ছ গ্রামের সুভাষ নামে এক ব্যক্তির থেকে ১ ডিসমিল জমি তিন বছরের জন্য বন্ধক নেয় আমার বড় ভাই এরশাদ।

বৃহস্পতিবার সকালে ওই জায়গার ওপর মাটি ফেলে ভিটি বাঁধার কাজ শুরু করে আমার ভাইয়েরা। তখন সুজন, জাবেদ,জিয়া খাঁন,সমীর খাঁন মেঘনা নদী হয়ে গুচ্ছ গ্রাম ঘাট দিয়ে সেখানে আক্রমণ চালায়। এতে আমার চার ভাই আহত হয়। বড় ভাইকে তলপেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়া গত বুধবার বিকেলে বিএনপি নেতা শাহজাহান ও তার ভাই বাবরের নির্দেশে মুছাপুরের দায়ের খাল দখল করে আমাদের মাছ ধরার জাল কেটে হামলাকারীরা দখল করে।

নিহতের স্বজনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এই ঘটনার সাথে আমিও আমার ছোট ভাই বাবর কোনো ভাবেই জড়িত নেই। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। কোন নেতা ষড়যন্ত্র করে আমাদের নাম বলাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে বাবরের মুঠোফোনে কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওরোজ/এসএইচ