ঢাকা ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অফিসে প্রকাশ্যে সিগারেটে সুখটান

বিআইডব্লিউটিএ-র বিতর্কিত যুগ্ম পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায়?

মোঃ রিয়াজ উদ্দীন, খুলনা ব্যুরো
  • Update Time : ০৬:৫০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১৩ Time View

নানা অনিয়ম ও অপকর্মে বিতর্কিত সদ্য বদলী হওয়া বিআইডব্লিউটিএ’র খুলনার যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান যেখানেই যান সেখানেই সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে নিজের বাড়ী মনে করে সরকারি অফিস কক্ষকে আড্ডাখানা বানিয়ে প্রকাশ্যে ধুমপানের অভিযোগ ওঠা নতুন নয়। তিনি যেখানেই দায়িত্ব পালন করেন সেখানেই বিআইডব্লিউটিএ’র অবৈধ স্থাপনা ও ঘাট সিন্ডিকেটের হোতাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করে অর্থ হাতানোর নেপথ্যে জড়িত থাকেন বলে একাধিক সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ।

সম্প্রতি খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরএম শাখা থেকে স্বাক্ষরিত সরকারি সম্পত্তি তার পছন্দের লোককে নিজস্ব কায়দায় বৈধ বলে পাইয়ে দেয়ার তথ্য আসলে এ ঘটনায় অনুসন্ধানে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের নেতাকর্মীদের পক্ষে রহস্যজনক কাজ করছেন সরজমিনে এমন তথ্য মিলেছে। তাছাড়া তার ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনকি কাগজপত্রের ত্রুটি আছে কিনা এমন অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে খুলনা বিডব্লিউটিএ’র ২য় তলায় তার অফিস কক্ষের ভেতর গেলে দেখা যায়, টেবিলে গ্যাস লাইটার ও সিগারেটের উচ্ছিষ্টাংশ রাখার জন্য পাত্র। হাতে জলন্ত সিগারেট। টিশার্ট পরিহিত খোলা বোতামে গা-ছাড়া ভাব নিয়ে খুব আয়েশ করেই সিগারেট ফুঁকছেন অফিসে বসে।

এসময় সেবা প্রার্থীদের দেখেও না দেখার ভান করছিলেন তিনি। একজন বিআইডব্লিউটিএ’র সিনিয়র কর্মকর্তার এমন তুঘলকি কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অসংখ্য সেবা প্রার্থীরা। তার অফিস কক্ষে গিয়ে ৩/৪ জন অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের পরিচয় দেয়ার পরও প্রকাশ্যে সিগারেটের সুখটান দিতে দেখে সাংবাদিকসহ অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ধুমপান করার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি হাসতে হাসতে এড়িয়ে যান। প্রায় ৩ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, সাংবাদিকসহ সকল বয়সের লোকজনের সামনে কথা বলার ফাঁকে মাঝে মধ্যে ডান হাত দিয়ে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন তিনি। সুখটান দেয়ার পর আবার কপালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছেন।

এ সময় উপস্থিত থাকা সাংবাদিক সহ সেবা গ্রহীতারা বলেন, গত ২০১৩ সালে পাস হওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধিত আইনে সরকারি- বেসরকারি কার্যালয়সহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস ঘোষণা দিয়ে সেসব জায়গায় ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন অফিস চলাকালীন নিজ কক্ষে বসে ধূমপান করেন তিনি কিভাবে করেন? ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালের প্রণীত আইন অনুযায়ী, প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী এনে জনসমাগম স্থলে ধূমপানের শাস্তির অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়। অনেকেই বলেন, তার আচরণে আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা মনে করছি তিনি মাদকাসক্ত। তিনি যদি মাদকাসক্ত হন আর এভাবে অফিস করেন, তবে সরকারি চেয়ারের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

নাম প্রকাশ না করা খুলনা বিআইডব্লিউটিএ’র এক কর্মচারী বলেন, তিনি এখানে যোগাদানের পর থেকেই অফিসে বসেই একের পর এক সিগারেট ধরান। তার একহাতে থাকে সিগারেট, অন্যহাতে সেবাগ্রহীতাদের ফাইল। সিগারেটে সুখটান দিয়েই তিনি ফাইলে স্বাক্ষর করেন। দুর্গন্ধে তার কক্ষে যাওয়া কষ্টকর। অফিসে যত লোকই থাকুক না কেন তিনি সবার সামনেই এভাবে ধূমপান করেন। এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।’

খোঁজ নিতে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ-র এক কর্মচারীকে কল দিলে তিনি মুঠোফোনে জানান, স্যারকে সিগারেট খেতে দেখিনি। তবে তার কক্ষটিতে প্রচুর সিগারেটের দুর্গন্ধ থাকতো। স্যারের মুখে এতটা দুর্গন্ধ থাকতো যে সামনে গিয়ে কথা বলা যেত না। আমার জানা মতে, তিনি ইতিপূর্বে বিআইডব্লিউটিএ এর আরিচাতে ছিলেন, তারপর বরিশালে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ স্থাপনার মাস্টারমাইন্ড ও ঘাট সিন্ডিকেটসহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ থাকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় তাকে খুলনা বিআইডব্লিউটিএ-তে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন তৎকালীন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি খুলনা থেকে তার বদলি হওয়ার পর মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি টেনশনে থাকি তাই এভাবে ধূমপান করি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-র সদর ও পরিবহন দপ্তরের পরিচালক এ,কে এম আরিফ উদ্দিন ০১৭১২-৫৩৭০২৭ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফাকে ০২২২৩৩৮৫৫৬১ সরকারি নাম্বারটিতে কল দেয়া হলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অফিসে প্রকাশ্যে সিগারেটে সুখটান

বিআইডব্লিউটিএ-র বিতর্কিত যুগ্ম পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায়?

মোঃ রিয়াজ উদ্দীন, খুলনা ব্যুরো
Update Time : ০৬:৫০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

নানা অনিয়ম ও অপকর্মে বিতর্কিত সদ্য বদলী হওয়া বিআইডব্লিউটিএ’র খুলনার যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান যেখানেই যান সেখানেই সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে নিজের বাড়ী মনে করে সরকারি অফিস কক্ষকে আড্ডাখানা বানিয়ে প্রকাশ্যে ধুমপানের অভিযোগ ওঠা নতুন নয়। তিনি যেখানেই দায়িত্ব পালন করেন সেখানেই বিআইডব্লিউটিএ’র অবৈধ স্থাপনা ও ঘাট সিন্ডিকেটের হোতাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করে অর্থ হাতানোর নেপথ্যে জড়িত থাকেন বলে একাধিক সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ।

সম্প্রতি খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরএম শাখা থেকে স্বাক্ষরিত সরকারি সম্পত্তি তার পছন্দের লোককে নিজস্ব কায়দায় বৈধ বলে পাইয়ে দেয়ার তথ্য আসলে এ ঘটনায় অনুসন্ধানে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের নেতাকর্মীদের পক্ষে রহস্যজনক কাজ করছেন সরজমিনে এমন তথ্য মিলেছে। তাছাড়া তার ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনকি কাগজপত্রের ত্রুটি আছে কিনা এমন অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে খুলনা বিডব্লিউটিএ’র ২য় তলায় তার অফিস কক্ষের ভেতর গেলে দেখা যায়, টেবিলে গ্যাস লাইটার ও সিগারেটের উচ্ছিষ্টাংশ রাখার জন্য পাত্র। হাতে জলন্ত সিগারেট। টিশার্ট পরিহিত খোলা বোতামে গা-ছাড়া ভাব নিয়ে খুব আয়েশ করেই সিগারেট ফুঁকছেন অফিসে বসে।

এসময় সেবা প্রার্থীদের দেখেও না দেখার ভান করছিলেন তিনি। একজন বিআইডব্লিউটিএ’র সিনিয়র কর্মকর্তার এমন তুঘলকি কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অসংখ্য সেবা প্রার্থীরা। তার অফিস কক্ষে গিয়ে ৩/৪ জন অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের পরিচয় দেয়ার পরও প্রকাশ্যে সিগারেটের সুখটান দিতে দেখে সাংবাদিকসহ অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ধুমপান করার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি হাসতে হাসতে এড়িয়ে যান। প্রায় ৩ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, সাংবাদিকসহ সকল বয়সের লোকজনের সামনে কথা বলার ফাঁকে মাঝে মধ্যে ডান হাত দিয়ে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন তিনি। সুখটান দেয়ার পর আবার কপালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছেন।

এ সময় উপস্থিত থাকা সাংবাদিক সহ সেবা গ্রহীতারা বলেন, গত ২০১৩ সালে পাস হওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধিত আইনে সরকারি- বেসরকারি কার্যালয়সহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস ঘোষণা দিয়ে সেসব জায়গায় ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন অফিস চলাকালীন নিজ কক্ষে বসে ধূমপান করেন তিনি কিভাবে করেন? ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালের প্রণীত আইন অনুযায়ী, প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী এনে জনসমাগম স্থলে ধূমপানের শাস্তির অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়। অনেকেই বলেন, তার আচরণে আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা মনে করছি তিনি মাদকাসক্ত। তিনি যদি মাদকাসক্ত হন আর এভাবে অফিস করেন, তবে সরকারি চেয়ারের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

নাম প্রকাশ না করা খুলনা বিআইডব্লিউটিএ’র এক কর্মচারী বলেন, তিনি এখানে যোগাদানের পর থেকেই অফিসে বসেই একের পর এক সিগারেট ধরান। তার একহাতে থাকে সিগারেট, অন্যহাতে সেবাগ্রহীতাদের ফাইল। সিগারেটে সুখটান দিয়েই তিনি ফাইলে স্বাক্ষর করেন। দুর্গন্ধে তার কক্ষে যাওয়া কষ্টকর। অফিসে যত লোকই থাকুক না কেন তিনি সবার সামনেই এভাবে ধূমপান করেন। এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।’

খোঁজ নিতে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ-র এক কর্মচারীকে কল দিলে তিনি মুঠোফোনে জানান, স্যারকে সিগারেট খেতে দেখিনি। তবে তার কক্ষটিতে প্রচুর সিগারেটের দুর্গন্ধ থাকতো। স্যারের মুখে এতটা দুর্গন্ধ থাকতো যে সামনে গিয়ে কথা বলা যেত না। আমার জানা মতে, তিনি ইতিপূর্বে বিআইডব্লিউটিএ এর আরিচাতে ছিলেন, তারপর বরিশালে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ স্থাপনার মাস্টারমাইন্ড ও ঘাট সিন্ডিকেটসহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ থাকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় তাকে খুলনা বিআইডব্লিউটিএ-তে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন তৎকালীন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি খুলনা থেকে তার বদলি হওয়ার পর মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি টেনশনে থাকি তাই এভাবে ধূমপান করি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-র সদর ও পরিবহন দপ্তরের পরিচালক এ,কে এম আরিফ উদ্দিন ০১৭১২-৫৩৭০২৭ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফাকে ০২২২৩৩৮৫৫৬১ সরকারি নাম্বারটিতে কল দেয়া হলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।