ঢাকা ০৫:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ কুড়িগ্রামে ছাত্রীনিবাসের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ধারণ, যুবকের কারাদণ্ড সাইকেল চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েছেন “দিদার” টাঙ্গাইলে মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ, বৃদ্ধের মৃত্যু আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাকের পার্টির বিশ্ব ইসলামি মহা সম্মেলন ও মহা পবিত্র ফাতেহা শরীফের সমাপ্তি টঙ্গীতে পরিবহনে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৮ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভবঃ প্রধান বিচারপতি  শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক লালপুরে আ,লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা ইবিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আনসার কর্তৃক শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ

দিনাজপুরে হোটেল ব্যবসা করে স্বাবলম্বী ভাবীরা

আনিসুর রহমান রুবেল
  • Update Time : ০৬:০৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
  • / ৩৮১ Time View

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ সীমান্তে রাণীরঘাটে ভাবিদের হাঁসের মাংসের হোটেল। বর্তমানে এই স্থানটি ভাবীর মোড় হিসেবে পরিচিত। এই মোড়ে রয়েছে মাসতারা বেগম, তাসলিমা আক্তার, মেরিনা পারভীন ও বেলী আক্তার-এই চার ভাবির চারটি হোটেল।

ভাবীদের হোটেল সস্তা ও সুস্বাদু হাঁসের ভুনা মাংসের জন্য বিখ্যাত। হোটেলে নেই কোন পুরুষ কর্মচারী, খাবার পরিবেশন করা, ক্যাশে টাকা নেওয়াসহ সব কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। হোটেল ব্যবসা করে ভাবীরা হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী।

ভাবীর মোড়ের হোটেলগুলো চালান এই চার নারী—(বাঁ থেকে) বেলী আক্তার, মাসতারা বেগম, মেরিনা পারভীন ও তাসলিমা আক্তার (সংগৃহীত)

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই ভাবীদের হোটেলে খাবারের জন্য মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা এবং প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসযোগে আসেন। অনেককেই আবার পরিবার নিয়েও আসতে দেখা যায়।

হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার খাবারের প্যাকেজ। যে যেমন ইচ্ছা ভাত, হাঁসের মাংস ও বিভিন্ন প্রকার সালাদ, শাক-সবজি এবং নানান রকমের ভর্তা খেতে পারেন। ভাবিদের হোটেলে প্রতিদিন জবাই হয় ৫০ থেকে ৬০টি হাঁস। বেচাবিক্রি হয় দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে সরকারি ছুটির দিনে বেচাবিক্রি আরও বেশি হয়। শহর থেকে একেবারে অজপাড়াগাঁ ভারত সীমান্তে ঘেঁষে এই ভাবীর মোড়।

দেখা যায়, হোটেলগুলোতে বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। দেখে মনে হবে যেন কোনো বিয়ে বাড়ির দাওয়াতে এসেছেন তারা। কেউ কেউ খাবারের সময় মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা নিউজ করতে এসে নিজেরাও এই হোটেলে খাবার খেয়ে যায়।

জানা যায়, এই স্থানটির নাম ছিলো রাণীরঘাট। প্রায় ২৫ বছর আগে এই রানীরঘাটে শুকনা মৌসুমে উত্তোলন হতো বালু। প্রতিদিন এই ঘাটে ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাক্টর দিয়ে শ্রমিকরা বালু উত্তোলনের কাজ করতেন। তবে রাণীরঘাটে ছিলো না তখন কোন চা-নাস্তার দোকান। জীবিকার তাগিদে তখন প্রথম জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মাসতারা বেগম একটি চায়ের দোকান দেন। ঘাটের রাস্তাটি ছিলো কাঁচা। পরবর্তীতে শুরু হয় রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ। রাস্তার শ্রমিকদের জন্য তার ছোটো হোটেলে শুরু হয় ভাত বেচাবিক্রি। শ্রমিকদের অনুরোধে প্রথমে রান্না করেন একটি হাঁসের মাংস। তার হাতের রান্না খেয়ে মুগ্ধ তারা। এর পর থেকে শুরু হাঁসের মাংস রান্না। অল্প দিনের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে মাসতারা বেগমের হাতের সুস্বাদু হাঁসের মাংস রান্নার খবর। পরে তাকে দেখে এলাকার আরও তিন ভাবী হাঁসের মাংসের হোটেল দেন। প্রথম থেকেই এই চার মহিলাকে সবাই ভাবী বলে সম্বোধন করতো । মূলত তখন থেকে হোটেলগুলোর নাম হয় ভাবীর হোটেল। আস্তে আস্তে রাণীরঘাট নামটি পরিবর্তন হয়ে ভাবীর মোড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এলাকার মানুষের কাছে। দিনাজপুর জেলাসহ আশপাশের সব জেলার মানুষ এই ভাবির মোড়কে চিনে এবং জানে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভাবির মোড়ের ভাবীদের হোটেলে হাঁসের মাংস দিয়ে খাবার খেতে।

ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে পরিবার সহ আসা আজিজার রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি ভাবীর মোড়ে ভাবীদের হোটেলের কথা। এখানে নাকি সুস্বাদু হাঁসের মাংস সস্তা দামে পাওয়া যায়। তাই পরিবারের সকলকে নিয়ে এসেছি। সবাই মিলে খেলাম। আসলে অনেকের মুখে যেমনটি শুনেছি, খাবার খেয়ে তার চেয়ে বেশি স্বাদ পেলাম। ভাবীদের হাতের রান্নার স্বাদ আসলেই মুখে লেগে থাকার মতো।

দিনাজপুর শহর থেকে আসা সুইটি বেগম বলেন, ভাবীদের হোটেলের রান্নার স্বাদের কথা আর কি বলবো? অসাধারণ। আমি প্রায় সময় এখানকার হোটেলে হাঁসের মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে আসি। মাঝেমধ্যে বাসায় নিজেও চেষ্টা করি তাদের মতো হাঁসের মাংস রান্না করতে। কিন্তু কেন জানি এই স্বাদ খুঁজে পাই না।

বীরগঞ্জ থেকে আসা আশিকুর রহমান বলেন, ভাবীর মোড় দিনাজপুর জেলার উত্তর-দক্ষিণের শেষ সীমানায় অবস্থিত। এটা একটি অজপাড়াগাঁ, এখানে কারও আসার কোনই প্রয়োজন হয় না। শুধু ভাবীদের হোটেলের অমৃত স্বাদের খাবার খেতে আসে। তারা অতি যত্নসহকারে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন এবং খেয়েও খুবই তৃপ্তি পাই।

ভাবী মাসতারা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই মোড়ে আমরা হোটেল ব্যবসা করে আসছি। আমরা সব সময় কাস্টমারের মনপুত ও রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করে থাকি। কাস্টমার আমাদের লক্ষ্মী। জীবনে আমরা এক সময় অনেক অভাবী এবং অসহায় ছিলাম। বর্তমান হোটেল ব্যবসা করে আমরা সবাই স্বয়ংসম্পূর্ণ।

তিনি বলেন, আমরা চার ভাবী মিলেমিশে ব্যবসা করছি। আমাদের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব নেই, সবাই সবার মতো কর্ম করে খাচ্ছি।

Please Share This Post in Your Social Media

দিনাজপুরে হোটেল ব্যবসা করে স্বাবলম্বী ভাবীরা

Update Time : ০৬:০৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ সীমান্তে রাণীরঘাটে ভাবিদের হাঁসের মাংসের হোটেল। বর্তমানে এই স্থানটি ভাবীর মোড় হিসেবে পরিচিত। এই মোড়ে রয়েছে মাসতারা বেগম, তাসলিমা আক্তার, মেরিনা পারভীন ও বেলী আক্তার-এই চার ভাবির চারটি হোটেল।

ভাবীদের হোটেল সস্তা ও সুস্বাদু হাঁসের ভুনা মাংসের জন্য বিখ্যাত। হোটেলে নেই কোন পুরুষ কর্মচারী, খাবার পরিবেশন করা, ক্যাশে টাকা নেওয়াসহ সব কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। হোটেল ব্যবসা করে ভাবীরা হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী।

ভাবীর মোড়ের হোটেলগুলো চালান এই চার নারী—(বাঁ থেকে) বেলী আক্তার, মাসতারা বেগম, মেরিনা পারভীন ও তাসলিমা আক্তার (সংগৃহীত)

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই ভাবীদের হোটেলে খাবারের জন্য মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা এবং প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসযোগে আসেন। অনেককেই আবার পরিবার নিয়েও আসতে দেখা যায়।

হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার খাবারের প্যাকেজ। যে যেমন ইচ্ছা ভাত, হাঁসের মাংস ও বিভিন্ন প্রকার সালাদ, শাক-সবজি এবং নানান রকমের ভর্তা খেতে পারেন। ভাবিদের হোটেলে প্রতিদিন জবাই হয় ৫০ থেকে ৬০টি হাঁস। বেচাবিক্রি হয় দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে সরকারি ছুটির দিনে বেচাবিক্রি আরও বেশি হয়। শহর থেকে একেবারে অজপাড়াগাঁ ভারত সীমান্তে ঘেঁষে এই ভাবীর মোড়।

দেখা যায়, হোটেলগুলোতে বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। দেখে মনে হবে যেন কোনো বিয়ে বাড়ির দাওয়াতে এসেছেন তারা। কেউ কেউ খাবারের সময় মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা নিউজ করতে এসে নিজেরাও এই হোটেলে খাবার খেয়ে যায়।

জানা যায়, এই স্থানটির নাম ছিলো রাণীরঘাট। প্রায় ২৫ বছর আগে এই রানীরঘাটে শুকনা মৌসুমে উত্তোলন হতো বালু। প্রতিদিন এই ঘাটে ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাক্টর দিয়ে শ্রমিকরা বালু উত্তোলনের কাজ করতেন। তবে রাণীরঘাটে ছিলো না তখন কোন চা-নাস্তার দোকান। জীবিকার তাগিদে তখন প্রথম জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মাসতারা বেগম একটি চায়ের দোকান দেন। ঘাটের রাস্তাটি ছিলো কাঁচা। পরবর্তীতে শুরু হয় রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ। রাস্তার শ্রমিকদের জন্য তার ছোটো হোটেলে শুরু হয় ভাত বেচাবিক্রি। শ্রমিকদের অনুরোধে প্রথমে রান্না করেন একটি হাঁসের মাংস। তার হাতের রান্না খেয়ে মুগ্ধ তারা। এর পর থেকে শুরু হাঁসের মাংস রান্না। অল্প দিনের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে মাসতারা বেগমের হাতের সুস্বাদু হাঁসের মাংস রান্নার খবর। পরে তাকে দেখে এলাকার আরও তিন ভাবী হাঁসের মাংসের হোটেল দেন। প্রথম থেকেই এই চার মহিলাকে সবাই ভাবী বলে সম্বোধন করতো । মূলত তখন থেকে হোটেলগুলোর নাম হয় ভাবীর হোটেল। আস্তে আস্তে রাণীরঘাট নামটি পরিবর্তন হয়ে ভাবীর মোড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এলাকার মানুষের কাছে। দিনাজপুর জেলাসহ আশপাশের সব জেলার মানুষ এই ভাবির মোড়কে চিনে এবং জানে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভাবির মোড়ের ভাবীদের হোটেলে হাঁসের মাংস দিয়ে খাবার খেতে।

ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে পরিবার সহ আসা আজিজার রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি ভাবীর মোড়ে ভাবীদের হোটেলের কথা। এখানে নাকি সুস্বাদু হাঁসের মাংস সস্তা দামে পাওয়া যায়। তাই পরিবারের সকলকে নিয়ে এসেছি। সবাই মিলে খেলাম। আসলে অনেকের মুখে যেমনটি শুনেছি, খাবার খেয়ে তার চেয়ে বেশি স্বাদ পেলাম। ভাবীদের হাতের রান্নার স্বাদ আসলেই মুখে লেগে থাকার মতো।

দিনাজপুর শহর থেকে আসা সুইটি বেগম বলেন, ভাবীদের হোটেলের রান্নার স্বাদের কথা আর কি বলবো? অসাধারণ। আমি প্রায় সময় এখানকার হোটেলে হাঁসের মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে আসি। মাঝেমধ্যে বাসায় নিজেও চেষ্টা করি তাদের মতো হাঁসের মাংস রান্না করতে। কিন্তু কেন জানি এই স্বাদ খুঁজে পাই না।

বীরগঞ্জ থেকে আসা আশিকুর রহমান বলেন, ভাবীর মোড় দিনাজপুর জেলার উত্তর-দক্ষিণের শেষ সীমানায় অবস্থিত। এটা একটি অজপাড়াগাঁ, এখানে কারও আসার কোনই প্রয়োজন হয় না। শুধু ভাবীদের হোটেলের অমৃত স্বাদের খাবার খেতে আসে। তারা অতি যত্নসহকারে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন এবং খেয়েও খুবই তৃপ্তি পাই।

ভাবী মাসতারা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই মোড়ে আমরা হোটেল ব্যবসা করে আসছি। আমরা সব সময় কাস্টমারের মনপুত ও রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করে থাকি। কাস্টমার আমাদের লক্ষ্মী। জীবনে আমরা এক সময় অনেক অভাবী এবং অসহায় ছিলাম। বর্তমান হোটেল ব্যবসা করে আমরা সবাই স্বয়ংসম্পূর্ণ।

তিনি বলেন, আমরা চার ভাবী মিলেমিশে ব্যবসা করছি। আমাদের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব নেই, সবাই সবার মতো কর্ম করে খাচ্ছি।