ঢাকা ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুলে থাকা সেই গুলিবিদ্ধ তরুণ বেঁচে আছেন

জাতীয়
  • Update Time : ১১:০০:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৫৩ Time View

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নির্মাণাধীন ভবনের চারতলার রড ধরে ঝুলে থাকা অবস্থায় এক তরুণকে ছয় রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই তরুণ বেঁচে আছেন। তার নাম আমির হোসেন (১৮)। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। ছয়-সাত বছর আগে মাকে হারিয়ে তারা তিন ভাই-বোন ঢাকায় চলে আসেন। বাবা বিল্লাল মিয়া গ্রামে অটোরিকশা চালান। নয়াপাড়ায় একটি টিনশেড বাসায় তিন ভাই-বোন থাকেন।

নির্মাণাধীন ওই ভবনটি রামপুরার মেরাদিয়ার। ১৯ জুলাই কী ঘটেছিল, জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, বিক্ষোভের কারণে দোকান বন্ধ ছিল। সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলাম। বাসার কাছেই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যাই। পুলিশ গুলি শুরু করে। আমি দৌড়ে নির্মাণাধীন ভবনটির চারতলায় গিয়ে আশ্রয় নেই।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে পুলিশ ভবনটির চারতলায় উঠে যায়। সেখানে আমাকে পেয়ে যায়। পুলিশের সদস্যরা আমার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে বারবার নিচে লাফ দিতে বলেন। একজন পুলিশ সদস্য আমাকে ভয় দেখাতে কয়েকটি গুলিও করেন। একপর্যায়ে ভয়ে আমি লাফ দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির রড ধরে ঝুলে থাকি।

গুলিবিদ্ধ তরুণ আমির হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

আমির বলেন, আমি যখন ঝুলে ছিলাম, তখন তৃতীয় তলা থেকে একজন পুলিশ সদস্য আমাকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি করেন। গুলিগুলো আমার দুই পায়ে লাগে। একপর্যায়ে পুলিশ চলে যায়, আমি ঝুলে ছিলাম। পরে ঝাঁপ দিয়ে কোনোরকমে তৃতীয় তলায় পড়ি। সেখানে দুই পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আমাকে উদ্ধার করেন একজন শিক্ষার্থী ও দুই চিকিৎসক। তারা আমাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি বাসায় ফিরি।

চিকিৎসক দুজন স্থানীয় ফেমাস স্পেশালাইজড হাসপাতালের। তাদের ডেকে এনেছিলেন ওই শিক্ষার্থী। আমির তাদের নাম জানেন না। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে তিন মাসের ওষুধ লিখে দিয়ে আমাকে বাসায় পাঠানো হয়।

আমির আরও বলেন, আমি এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া শৌচাগারেও যেতে পারি না। দিনের বেলায় পায়ে তেমন ব্যথা থাকে না। তবে রাতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ব্যথার কারণে ঘুম তেমন একটা হয় না।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকেরা আমাকে তিন মাস বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। কিন্তু চাকরি না করে কীভাবে নিজের চিকিৎসা করাবো, সংসার চলবে কীভাবে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media

ঝুলে থাকা সেই গুলিবিদ্ধ তরুণ বেঁচে আছেন

জাতীয়
Update Time : ১১:০০:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নির্মাণাধীন ভবনের চারতলার রড ধরে ঝুলে থাকা অবস্থায় এক তরুণকে ছয় রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই তরুণ বেঁচে আছেন। তার নাম আমির হোসেন (১৮)। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। ছয়-সাত বছর আগে মাকে হারিয়ে তারা তিন ভাই-বোন ঢাকায় চলে আসেন। বাবা বিল্লাল মিয়া গ্রামে অটোরিকশা চালান। নয়াপাড়ায় একটি টিনশেড বাসায় তিন ভাই-বোন থাকেন।

নির্মাণাধীন ওই ভবনটি রামপুরার মেরাদিয়ার। ১৯ জুলাই কী ঘটেছিল, জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, বিক্ষোভের কারণে দোকান বন্ধ ছিল। সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলাম। বাসার কাছেই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যাই। পুলিশ গুলি শুরু করে। আমি দৌড়ে নির্মাণাধীন ভবনটির চারতলায় গিয়ে আশ্রয় নেই।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে পুলিশ ভবনটির চারতলায় উঠে যায়। সেখানে আমাকে পেয়ে যায়। পুলিশের সদস্যরা আমার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে বারবার নিচে লাফ দিতে বলেন। একজন পুলিশ সদস্য আমাকে ভয় দেখাতে কয়েকটি গুলিও করেন। একপর্যায়ে ভয়ে আমি লাফ দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির রড ধরে ঝুলে থাকি।

গুলিবিদ্ধ তরুণ আমির হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

আমির বলেন, আমি যখন ঝুলে ছিলাম, তখন তৃতীয় তলা থেকে একজন পুলিশ সদস্য আমাকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি করেন। গুলিগুলো আমার দুই পায়ে লাগে। একপর্যায়ে পুলিশ চলে যায়, আমি ঝুলে ছিলাম। পরে ঝাঁপ দিয়ে কোনোরকমে তৃতীয় তলায় পড়ি। সেখানে দুই পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আমাকে উদ্ধার করেন একজন শিক্ষার্থী ও দুই চিকিৎসক। তারা আমাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি বাসায় ফিরি।

চিকিৎসক দুজন স্থানীয় ফেমাস স্পেশালাইজড হাসপাতালের। তাদের ডেকে এনেছিলেন ওই শিক্ষার্থী। আমির তাদের নাম জানেন না। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে তিন মাসের ওষুধ লিখে দিয়ে আমাকে বাসায় পাঠানো হয়।

আমির আরও বলেন, আমি এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া শৌচাগারেও যেতে পারি না। দিনের বেলায় পায়ে তেমন ব্যথা থাকে না। তবে রাতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ব্যথার কারণে ঘুম তেমন একটা হয় না।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকেরা আমাকে তিন মাস বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। কিন্তু চাকরি না করে কীভাবে নিজের চিকিৎসা করাবো, সংসার চলবে কীভাবে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।