ঢাকা ০১:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৪ বিচারকের বিদায় সংবর্ধনা কিসের পাওয়ারে ট্রিপল মার্ডারের আসামি জহিরুল বাহিরে টঙ্গীর জাভান হোটেলে পুলিশের অভিযানে বিদেশি মদ জব্দ, গ্রেফতার ৭ ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আসামী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার ইরানি দম্পতির ওপর হামলা, কারাগারে ৪ আসামি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাসিক নিষ্পত্তি সভা অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা! ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস! ছিনতাইকারীর কবল থেকে ইরানী দম্পতিকে উদ্ধার করলো সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থাকলে স্থানীয়দের চাকরি থাকবে এটাই শেষ কথা!

কুকুর পোষা কি জায়েজ?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:৪৪:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৪২৯ Time View

কুকুর আমাদের পরিচিত একটি প্রাণী। গৃহপালিত প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। কুকুর সাধারণত ১০ থেকে ১৩ বছর বাঁচে। কুকুরের বছরে গড়ে ৪-৬ টি বাচ্চা হয়। একটি কুকুরের গর্ভধারণের দৈর্ঘ্য ৬৩ দিন হয়। পবিত্র কোরআনেও কুকুরের কথা রয়েছে।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি।’ (সুরা: আনআম ৩৮) কুকুর আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ। (ফতোয়াতে মাহমুদিয়া : খ. ১৮, পৃ. ২৬৪/ ফতোয়ায়ে আলমগিরি: খ. ৪, পৃ. ২৪২)

কোরআনে কুকুরের কথা

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আসহাবে কাহফের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা কুকুরের কথা বলেন। আসহাবে কাহফের ঘটনায় কুকুরটির কথা মোট চারবার এসেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘তুমি মনে করবে তারা সজাগ, অথচ তারা ছিল ঘুমন্ত, আমি তাদের ডানে-বামে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম। আর তাদের কুকুরটি গুহার দরজার সামনে তার সামনের পা দুটি প্রসারিত করে ছিল। তুমি যদি তাদের দেখতে, তাহলে অবশ্যই পেছন ফিরে পালিয়ে যেতে, আর অবশ্যই আতঙ্কিত হয়ে পড়তে।’ (সুরা: কাহফ ১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন, চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর। আর কিছু লোক বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর, অজানা বিষয়ে সন্দেহপূর্ণ অনুমানের ভিত্তিতে। আবার কিছু লোক বলবে, তারা ছিল সাতজন, আর অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলো, তাদের সংখ্যা সম্পর্কে আমার প্রতিপালকই বেশি জানেন। অল্প কয়জন ছাড়া তাদের সংখ্যা সম্পর্কে কেউ জানে না। কাজেই সাধারণ কথাবার্তা ছাড়া তাদের ব্যাপার নিয়ে বিতর্ক করো না, আর তাদের সম্পর্কে কারও কাছে কিছু জিজ্ঞেসও করো না।’ (সুরা: কাহফ ২২)

কুকুর পোষা কি জায়েজ

যে বাড়িতে কুকুর থাকে সেই বাড়িতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। তবে যদি বাড়িঘর পাহারার জন্য কুকুর পালন করা হয়, তাহলে সেসব পাহারাদার কুকুর থাকা অবস্থায় রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করাতে বাধাপ্রাপ্ত হয় না। সেই হিসেবে পাহারাদারির জন্য কুকুর পালন করা, পোষা জায়েজ আছে।

হযরত আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে বাড়িতে কুকুর থাকে আর প্রাণীর ছবি থাকে সেথায় ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (বুখারি ৩২২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৬৪৯)
কুকুর কোলে নেয়া কি জায়েজ?

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পশু রক্ষাকারী কিংবা শিকারি কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালে, তার ‘আমল থেকে প্রতিদিন দু-কিরাত পরিমাণ সওয়াব কমে যায়। (বুখারি ৫৪৮২)

প্রয়োজন ছাড়া কুকুর স্পর্শ করা কোলে রাখা জায়েজ নয়। কুকুরের লালা হারাম। গায়ে লাগলে ধোয়া ছাড়া নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।

কুকুর বিষয়ে হাদিস

মুহাম্মাদ ইবন বাশশার রহ. হজরত আবু যর রা. সূত্রে নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মুসল্লির সামনে পালানের লাঠির মতো কোনো জিনিস না থাকলে নারী, গাধা ও কালো রং-এর কুকুর নামাজ বিনষ্ট করে। আমি বললাম, লাল কুকুর থেকে কালো কুকুরের পার্থক্য কি? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যেমন তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তখন তিনি বলেন, কালো কুকুর হলো শয়তান। (ইবনে মাজাহ ৯৫২)

কুকুর দিয়ে শিকার করা

হজরত আদি ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা-কে তিরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যদি তিরের ধারালো অংশ দ্বারা আঘাত করে থাক তাহলে খাও আর যদি ফলকের আঘাত লেগে থাকে, শিকারটি মারা যায়, তাহলে খেয়ো না। কেননা, সেটি ‘ওয়াকিয’ বা থেঁতলিয়ে মরার অন্তর্ভুক্ত। আমি বললাম, আমি তো শিকারের জন্য কুকুর ছেড়ে দিই। তিনি উত্তর দিলেন, যদি তোমার কুকুরকে তুমি বিসমিল্লাহ পড়ে ছেড়ে থাক, তা হলে খাও।

আমি আবার বললাম, যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে? তিনি বললেন, তা হলে খেয়ো না। কেননা, সে তা তোমার জন্য ধরে রাখেনি বরং সে ধরেছে নিজের জন্যই। আমি বললাম, আমি আমার কুকুরকে পাঠানোর পর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুরকেও দেখতে পাই, তখন? তিনি বললেন, তাহলে খেয়ো না। কেননা, তুমি তো কেবল তোমার কুকুর ছাড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলেছ, অন্য কুকুরের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলনি। (বুখারি ৫০৮১, তিরিমিজি ১৭৯৭, আবু দাউদ ২৮৪৫)

কুকুর হত্যা কি জায়েজ?

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী বেশি অনিষ্টকারী। এদের হারাম শরিফেও হত্যা করা যায়। এগুলো হলো: বিচ্ছু, ইঁদুর, চিল, কাক ও পাগলা কুকুর। (ইবনে মাজা ৩০৮৯, বুখারি ৩০৮০) এ হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, কুকুর যদি মানুষের ক্ষতি করে, সম্পদ ও জানের জন্য ভীতিকর হয় তাহলে হত্যা করা জায়েজ। অন্যায়ভাবে হত্যা করা জায়েজ নেই।

কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতি হওয়ার ঘটনা

হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (একবার) একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিব বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (এ করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেয়া হলো। (এ কথা শুনে) সাহাবিগণ আরজ করলেন, পশু-পাখির সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও কি আমাদের জন্য সওয়াব আছে?

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। প্রত্যেকটা প্রাণীর সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও সওয়াব আছে। (বুখারি ৩৩২১, মুসলিম ২২৪৫, আহমাদ ১০৬২১, শারহুস সুন্নাহ ১৬৬৬, আল জামি‘ আস সগির ৪১৬৩)

আজানের সময় কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কেন?

আজান শুরু হলে শয়তান পালাতে থাকে। শয়তানের সেই ভয়ার্ত পলায়ন অনেক প্রাণী অনেক সময় দেখতে পায়। তখন সে ভয় পেয়ে কাঁদতে বা চিৎকার করতেই পারে। তেমনি কুকুর এ কারণে কাঁদে বা ঘেউ ঘেউ করে। যখন দেখতে পায় না, তখন চুপ থাকে।

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শয়তান যখন নামাজের আজান শুনতে পায় তখন বাতকর্ম করতে করতে পলায়ন করে যেন আজানের শব্দ তার কানে পৌঁছতে না পারে। মুয়াজ্জিন যখন আজান শেষ করে তখন সে ফিরে এসে (নামাজির মনে) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। সে পুনরায় যখন ইকামত শুনতে পায় আবার পলায়ন করে যেন এর শব্দ তার কানে না যেতে পারে। যখন ইকামত শেষ হয় তখন সে ফিরে এসে (নামাজিদের মনে) সংশয় সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। (মুসলিম ৩৮৯)

কুকুর মুখ দেয়া পাত্র পবিত্র করার পদ্ধতি কী?

কুকুরের লালা অপবিত্র। কোনো কুকুর যদি মুখ দেয় তাহলে তা অপবিত্র হয়ে যায়। এমন হলে পাত্রটি তিনবার ভালো করে ধৌত করলেই পবিত্র হয়ে যাবে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কুকুর যদি পাত্রটি চাটে, তাহলে তা তিনবার ধুয়ে ফেলবে (সুনানে দার কুতনি ১৯৩, মাআরিফুস সুনান ১/৩২৫)

কুকুর ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েজ?

যদি নিরাপত্তার প্রয়োজনে কুকুর ক্রয়-বিক্রয় করেন এটা জায়েজ। কুকুর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য জায়েজ নেই। মানুষদের থেকে কুকুরপ্রীতি দূর করার উদ্দেশ্যে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর পালন, বিক্রি ইত্যাদি সবই নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মানুষের প্রয়োজনে আসে এমন কুকুর যথা: শিকারি কুকুর, পাহারার কুকুর ইত্যাদি বিক্রি ও পালনের অনুমতি দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ ১৪৪১১, সুনানে নাসায়ী ৪২৯৫, কিতাবুল আসল ৫/৪১৪, শরহু মাআনিল আছার ২/২০৭, আলমাবসূত, সারাখসি ১১/২৩৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪, রদ্দুল মুহতার ৫/২২)

Please Share This Post in Your Social Media

কুকুর পোষা কি জায়েজ?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
Update Time : ০৬:৪৪:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

কুকুর আমাদের পরিচিত একটি প্রাণী। গৃহপালিত প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। কুকুর সাধারণত ১০ থেকে ১৩ বছর বাঁচে। কুকুরের বছরে গড়ে ৪-৬ টি বাচ্চা হয়। একটি কুকুরের গর্ভধারণের দৈর্ঘ্য ৬৩ দিন হয়। পবিত্র কোরআনেও কুকুরের কথা রয়েছে।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি।’ (সুরা: আনআম ৩৮) কুকুর আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ। (ফতোয়াতে মাহমুদিয়া : খ. ১৮, পৃ. ২৬৪/ ফতোয়ায়ে আলমগিরি: খ. ৪, পৃ. ২৪২)

কোরআনে কুকুরের কথা

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আসহাবে কাহফের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা কুকুরের কথা বলেন। আসহাবে কাহফের ঘটনায় কুকুরটির কথা মোট চারবার এসেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘তুমি মনে করবে তারা সজাগ, অথচ তারা ছিল ঘুমন্ত, আমি তাদের ডানে-বামে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম। আর তাদের কুকুরটি গুহার দরজার সামনে তার সামনের পা দুটি প্রসারিত করে ছিল। তুমি যদি তাদের দেখতে, তাহলে অবশ্যই পেছন ফিরে পালিয়ে যেতে, আর অবশ্যই আতঙ্কিত হয়ে পড়তে।’ (সুরা: কাহফ ১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন, চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর। আর কিছু লোক বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর, অজানা বিষয়ে সন্দেহপূর্ণ অনুমানের ভিত্তিতে। আবার কিছু লোক বলবে, তারা ছিল সাতজন, আর অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলো, তাদের সংখ্যা সম্পর্কে আমার প্রতিপালকই বেশি জানেন। অল্প কয়জন ছাড়া তাদের সংখ্যা সম্পর্কে কেউ জানে না। কাজেই সাধারণ কথাবার্তা ছাড়া তাদের ব্যাপার নিয়ে বিতর্ক করো না, আর তাদের সম্পর্কে কারও কাছে কিছু জিজ্ঞেসও করো না।’ (সুরা: কাহফ ২২)

কুকুর পোষা কি জায়েজ

যে বাড়িতে কুকুর থাকে সেই বাড়িতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। তবে যদি বাড়িঘর পাহারার জন্য কুকুর পালন করা হয়, তাহলে সেসব পাহারাদার কুকুর থাকা অবস্থায় রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করাতে বাধাপ্রাপ্ত হয় না। সেই হিসেবে পাহারাদারির জন্য কুকুর পালন করা, পোষা জায়েজ আছে।

হযরত আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে বাড়িতে কুকুর থাকে আর প্রাণীর ছবি থাকে সেথায় ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (বুখারি ৩২২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৬৪৯)
কুকুর কোলে নেয়া কি জায়েজ?

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পশু রক্ষাকারী কিংবা শিকারি কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালে, তার ‘আমল থেকে প্রতিদিন দু-কিরাত পরিমাণ সওয়াব কমে যায়। (বুখারি ৫৪৮২)

প্রয়োজন ছাড়া কুকুর স্পর্শ করা কোলে রাখা জায়েজ নয়। কুকুরের লালা হারাম। গায়ে লাগলে ধোয়া ছাড়া নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।

কুকুর বিষয়ে হাদিস

মুহাম্মাদ ইবন বাশশার রহ. হজরত আবু যর রা. সূত্রে নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মুসল্লির সামনে পালানের লাঠির মতো কোনো জিনিস না থাকলে নারী, গাধা ও কালো রং-এর কুকুর নামাজ বিনষ্ট করে। আমি বললাম, লাল কুকুর থেকে কালো কুকুরের পার্থক্য কি? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যেমন তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তখন তিনি বলেন, কালো কুকুর হলো শয়তান। (ইবনে মাজাহ ৯৫২)

কুকুর দিয়ে শিকার করা

হজরত আদি ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা-কে তিরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যদি তিরের ধারালো অংশ দ্বারা আঘাত করে থাক তাহলে খাও আর যদি ফলকের আঘাত লেগে থাকে, শিকারটি মারা যায়, তাহলে খেয়ো না। কেননা, সেটি ‘ওয়াকিয’ বা থেঁতলিয়ে মরার অন্তর্ভুক্ত। আমি বললাম, আমি তো শিকারের জন্য কুকুর ছেড়ে দিই। তিনি উত্তর দিলেন, যদি তোমার কুকুরকে তুমি বিসমিল্লাহ পড়ে ছেড়ে থাক, তা হলে খাও।

আমি আবার বললাম, যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে? তিনি বললেন, তা হলে খেয়ো না। কেননা, সে তা তোমার জন্য ধরে রাখেনি বরং সে ধরেছে নিজের জন্যই। আমি বললাম, আমি আমার কুকুরকে পাঠানোর পর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুরকেও দেখতে পাই, তখন? তিনি বললেন, তাহলে খেয়ো না। কেননা, তুমি তো কেবল তোমার কুকুর ছাড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলেছ, অন্য কুকুরের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলনি। (বুখারি ৫০৮১, তিরিমিজি ১৭৯৭, আবু দাউদ ২৮৪৫)

কুকুর হত্যা কি জায়েজ?

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী বেশি অনিষ্টকারী। এদের হারাম শরিফেও হত্যা করা যায়। এগুলো হলো: বিচ্ছু, ইঁদুর, চিল, কাক ও পাগলা কুকুর। (ইবনে মাজা ৩০৮৯, বুখারি ৩০৮০) এ হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, কুকুর যদি মানুষের ক্ষতি করে, সম্পদ ও জানের জন্য ভীতিকর হয় তাহলে হত্যা করা জায়েজ। অন্যায়ভাবে হত্যা করা জায়েজ নেই।

কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতি হওয়ার ঘটনা

হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (একবার) একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিব বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (এ করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেয়া হলো। (এ কথা শুনে) সাহাবিগণ আরজ করলেন, পশু-পাখির সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও কি আমাদের জন্য সওয়াব আছে?

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। প্রত্যেকটা প্রাণীর সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও সওয়াব আছে। (বুখারি ৩৩২১, মুসলিম ২২৪৫, আহমাদ ১০৬২১, শারহুস সুন্নাহ ১৬৬৬, আল জামি‘ আস সগির ৪১৬৩)

আজানের সময় কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কেন?

আজান শুরু হলে শয়তান পালাতে থাকে। শয়তানের সেই ভয়ার্ত পলায়ন অনেক প্রাণী অনেক সময় দেখতে পায়। তখন সে ভয় পেয়ে কাঁদতে বা চিৎকার করতেই পারে। তেমনি কুকুর এ কারণে কাঁদে বা ঘেউ ঘেউ করে। যখন দেখতে পায় না, তখন চুপ থাকে।

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শয়তান যখন নামাজের আজান শুনতে পায় তখন বাতকর্ম করতে করতে পলায়ন করে যেন আজানের শব্দ তার কানে পৌঁছতে না পারে। মুয়াজ্জিন যখন আজান শেষ করে তখন সে ফিরে এসে (নামাজির মনে) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। সে পুনরায় যখন ইকামত শুনতে পায় আবার পলায়ন করে যেন এর শব্দ তার কানে না যেতে পারে। যখন ইকামত শেষ হয় তখন সে ফিরে এসে (নামাজিদের মনে) সংশয় সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। (মুসলিম ৩৮৯)

কুকুর মুখ দেয়া পাত্র পবিত্র করার পদ্ধতি কী?

কুকুরের লালা অপবিত্র। কোনো কুকুর যদি মুখ দেয় তাহলে তা অপবিত্র হয়ে যায়। এমন হলে পাত্রটি তিনবার ভালো করে ধৌত করলেই পবিত্র হয়ে যাবে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কুকুর যদি পাত্রটি চাটে, তাহলে তা তিনবার ধুয়ে ফেলবে (সুনানে দার কুতনি ১৯৩, মাআরিফুস সুনান ১/৩২৫)

কুকুর ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েজ?

যদি নিরাপত্তার প্রয়োজনে কুকুর ক্রয়-বিক্রয় করেন এটা জায়েজ। কুকুর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য জায়েজ নেই। মানুষদের থেকে কুকুরপ্রীতি দূর করার উদ্দেশ্যে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর পালন, বিক্রি ইত্যাদি সবই নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মানুষের প্রয়োজনে আসে এমন কুকুর যথা: শিকারি কুকুর, পাহারার কুকুর ইত্যাদি বিক্রি ও পালনের অনুমতি দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ ১৪৪১১, সুনানে নাসায়ী ৪২৯৫, কিতাবুল আসল ৫/৪১৪, শরহু মাআনিল আছার ২/২০৭, আলমাবসূত, সারাখসি ১১/২৩৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪, রদ্দুল মুহতার ৫/২২)