ঢাকা ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় চরম দুর্ভোগে গাইবান্ধার নদী এলাকার মানুষ

মাইদুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:১২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৯০ Time View

তীব্র বর্ষণ আর উজানের ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি চরম দুর্ভোগে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নদীতীরবর্তী ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলায় ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

আজ রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, গিদারি,  মোল্লার চর ইউনিয়নে বিভিন্ন চরে ঘুরে সরেজমিন দেখা গেছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের তীরে চরাঞ্চলে নির্মিত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। অনেক টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে নৌকায় করে ঘরের নিরাপদে জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।  শাক সবজি-  কাঁচা মরিচ,  টেঁড়স,  কড়লা  পুঁইশাক  তিন- চারদিন আগেই পানির নীচে তলে গেছে। নতুন করে পাটে পঁচন ধরছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৫টি, সুন্দরগঞ্জে ৭টি, সাঘাটায় ৮টি ও ফুলছড়িতে ৭টি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মোট ২৮ হাজার ৯২৮টি পরিবার। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫১৮টি, সুন্দরগঞ্জে ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটায় ১৩ হাজার ২৯০টি ও ফুলছড়িতে ৭ হাজার ৪২০টি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ১৮১টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২৪টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, সাঘাটায় ৩৬ এবং ফুলছড়িতে ২৩টি, সাদুল্ল্যাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জে ১১টি।

কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি গ্রামের আব্দুল ছালাম  বলেন, গত কয়েকদিন  থেকে নদীত  খুব পানি  বাড়ছে। রাতে আমাদের বাড়িঘর ডুবে গেছে । রান্না করতে পারছি না। খুবই কষ্টে আছি ভাই।

গিদারি ইউনিয়নের ফলিয়ার ঘোব গ্রামে আফজাল বলেন,  খুবই কষ্ট করে খাবারের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু প্রাকৃতিক কাজ সারতে সমস্যায় পড়েছি। বিশেষ করে নারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন বেশি।’

 চিরারকুটি চরের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, বাড়ি- ঘর বন্যার পানিত ডুবে গেছে। বাড়ি- ঘর ভাঙ্গে নিয়ে আশ্রায় কেন্দ্রের যাচ্ছি।

জেলার গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা। পাঠদান বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম  বলেন , জেলার চারটি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল থেকে পানিতে নিমজ্জিত। এ কারণে ৭০টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়ে আগের মতো পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হবে।

 জেলা মাধ্যমিক অফিসার মোছা. রোকসা বেগম ১০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও  মাদ্রাসার বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যাকবলিত চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব বিতরণ শুরু হয়েছে। পানিবন্দীদের উদ্ধারের জন্য নৌকা, স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। জেলা ও উপজেলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম ও লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে।

এ দিকে বন্যায় প্রাণীসংক্রান্ত নানান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তরুন কুমার দত্ত। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের পালনকৃত পশুর নানাভাবে পরামর্শ প্রদান করে আসছে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিমগঠন এবং ২ হাজার মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।  বন্যার্তদের যেকোন সমস্যায় সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল পাশে থেকে কাজ করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

বন্যায় চরম দুর্ভোগে গাইবান্ধার নদী এলাকার মানুষ

মাইদুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:১২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

তীব্র বর্ষণ আর উজানের ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি চরম দুর্ভোগে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নদীতীরবর্তী ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলায় ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

আজ রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, গিদারি,  মোল্লার চর ইউনিয়নে বিভিন্ন চরে ঘুরে সরেজমিন দেখা গেছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের তীরে চরাঞ্চলে নির্মিত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। অনেক টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে নৌকায় করে ঘরের নিরাপদে জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।  শাক সবজি-  কাঁচা মরিচ,  টেঁড়স,  কড়লা  পুঁইশাক  তিন- চারদিন আগেই পানির নীচে তলে গেছে। নতুন করে পাটে পঁচন ধরছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৫টি, সুন্দরগঞ্জে ৭টি, সাঘাটায় ৮টি ও ফুলছড়িতে ৭টি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মোট ২৮ হাজার ৯২৮টি পরিবার। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫১৮টি, সুন্দরগঞ্জে ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটায় ১৩ হাজার ২৯০টি ও ফুলছড়িতে ৭ হাজার ৪২০টি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ১৮১টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২৪টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, সাঘাটায় ৩৬ এবং ফুলছড়িতে ২৩টি, সাদুল্ল্যাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জে ১১টি।

কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি গ্রামের আব্দুল ছালাম  বলেন, গত কয়েকদিন  থেকে নদীত  খুব পানি  বাড়ছে। রাতে আমাদের বাড়িঘর ডুবে গেছে । রান্না করতে পারছি না। খুবই কষ্টে আছি ভাই।

গিদারি ইউনিয়নের ফলিয়ার ঘোব গ্রামে আফজাল বলেন,  খুবই কষ্ট করে খাবারের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু প্রাকৃতিক কাজ সারতে সমস্যায় পড়েছি। বিশেষ করে নারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন বেশি।’

 চিরারকুটি চরের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, বাড়ি- ঘর বন্যার পানিত ডুবে গেছে। বাড়ি- ঘর ভাঙ্গে নিয়ে আশ্রায় কেন্দ্রের যাচ্ছি।

জেলার গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা। পাঠদান বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম  বলেন , জেলার চারটি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল থেকে পানিতে নিমজ্জিত। এ কারণে ৭০টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়ে আগের মতো পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হবে।

 জেলা মাধ্যমিক অফিসার মোছা. রোকসা বেগম ১০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও  মাদ্রাসার বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যাকবলিত চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব বিতরণ শুরু হয়েছে। পানিবন্দীদের উদ্ধারের জন্য নৌকা, স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। জেলা ও উপজেলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম ও লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে।

এ দিকে বন্যায় প্রাণীসংক্রান্ত নানান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তরুন কুমার দত্ত। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের পালনকৃত পশুর নানাভাবে পরামর্শ প্রদান করে আসছে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিমগঠন এবং ২ হাজার মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।  বন্যার্তদের যেকোন সমস্যায় সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল পাশে থেকে কাজ করছে।