ঢাকা ০৯:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি, বাড়লো পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাঃ জেলায় প্রায় ৭ লাখ  মানুষ পানিবন্দী

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট
  • Update Time : ০৩:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪
  • / ৭০ Time View

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ২১টি ওয়ার্ডের অর্ধলক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত।  জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য এটি।  প্রয়োজনেয় তুরনায় ত্রান তৎপরতা অপ্রতুল। বন্যার্ত লোকজন খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

 

২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে   সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের কবলিত সিলেট।

 

ঈদের দিন (১৭ জুন- সোমবার) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে   সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

 

মঙ্গলবার (১৮ জুন) মধ্যরাতে  সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে  সিলেট মহানগরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী।

 

জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশিদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)  সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার সকাল ৯টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর   সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে  বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে। এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৯ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটজুড়ে ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। মহানগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, আবার অনেকে নিজের বাসা-বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।

অপরদিকে,  সিলেট সদর, বিশ্বনাথ,,গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে,  আগামী তিন দিন সিলেটে অভিরাম বৃষ্টি হবে। এছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তদের সহায়তা করছে বলে জানায়। এদিকে, ত্রান প্রতিমন্ত্রী  সিলেট সফরে রয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি, বাড়লো পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাঃ জেলায় প্রায় ৭ লাখ  মানুষ পানিবন্দী

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট
Update Time : ০৩:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ২১টি ওয়ার্ডের অর্ধলক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত।  জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য এটি।  প্রয়োজনেয় তুরনায় ত্রান তৎপরতা অপ্রতুল। বন্যার্ত লোকজন খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

 

২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে   সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের কবলিত সিলেট।

 

ঈদের দিন (১৭ জুন- সোমবার) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে   সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

 

মঙ্গলবার (১৮ জুন) মধ্যরাতে  সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে  সিলেট মহানগরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী।

 

জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশিদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)  সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার সকাল ৯টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর   সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে  বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে। এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৯ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটজুড়ে ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। মহানগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, আবার অনেকে নিজের বাসা-বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।

অপরদিকে,  সিলেট সদর, বিশ্বনাথ,,গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে,  আগামী তিন দিন সিলেটে অভিরাম বৃষ্টি হবে। এছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তদের সহায়তা করছে বলে জানায়। এদিকে, ত্রান প্রতিমন্ত্রী  সিলেট সফরে রয়েছেন।