ছোট হয়ে আসছে দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামার
- Update Time : ০৪:৫৭:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
- / ৬৫ Time View
গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রংপুরের দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি ও গৃহস্থরা। প্রান্তিক খামারি ও গৃহস্থরা নিজেরাই পরিচর্যা করে কোনো রকমে টিকে থাকলেও বড় খামারিদের আকার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। এ অবস্থায় গো-খাদ্যের দামের তুলনায় দুধের দাম না পেলে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দুধ উৎপাদন ও গাভির সংখ্যা বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে প্রান্তিক ও মাঝারি খামারিদের সংখ্যাও।
রংপুর মহানগরের কলেজ রোড এলাকার ক্ষুদ্র খামারি হারুনুর রশীদ স্বধীন। এক বছর আগেও তার খামারে ছিল ৭০ টি গাভি। এখন রয়েছে ৩৫ টি। গো-খাদ্যের দামের লাগামহীন বৃদ্ধি এবং দুধের যথাযত দাম না পাওয়ায় ধীরে ধীরে কমিয়ে এনেছেন খামারের আকার।
হারুনুর রশীদ স্বধীন বলেন, এক বছর আগে বাজারে ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিক্সড ভুসির দাম ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা। এখন সেই ভুসির দাম হয়েছে ১৩৫০ থেকে ১৩৮০ টাক। ফিডের কেজি ছিল ২৫-২৭ টাকা, এখন হয়েছে ৪০-৪২ টাকা। এক বছর আগে এক লিটার দুধ বিক্রি করেছেন ৩৫-৩৭ টাকায়। এখন বিক্রি করছেন ৪০-৪৫ টাকা। খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি।
হারুনুর রশীদ স্বধীন জানান, বাজার থেকে কেনা দানাদার খাবারের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস ও খড় কিনতে হয়। একহাজার খড়ের মুঠার দাম ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। একটা গাভীর পেছনে দিনে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খরচ হয়। নিজে ও পরিবারের লোকেরা মিলে গরুর দেখাশোনা করেন। বাইরের কোনো শ্রমকি লাগে না। সে অনুযায়ী বছরে যে দুধ আসে তাতে খুব বেশি লাভ হয় না। শ্রমিক দিয়ে কাজ করালে লোকসান গুনতে হতো। শ্রমিক রাখা সম্ভব হয় না বলেই তিনি খামারের আকার ছোট করতে বাধ্য হয়েছেন।
হারুনুর রশীদ স্বধীন আরও জানান, বিভন্ন বেসরকারি কোম্পানি দুধের ঘনত্ব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দেয়। তবে ভালোমানের দুধ কম উৎপাদন হয়। এজন্য তিনি কোম্পানিতে দুধ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেই বিভিন্ন বাড়ি ও হোটেলে দুধ বিক্রি করেন। এতে দাম কিছুটা বেশি যাওয়া যায়।
রংপুর দুগ্ধ শীতলিকরণ কেন্দ্রের (মিল্কভিটা) ব্যবস্থাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, দুধের ঘনত্ব অনুয়ায়ী দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। বর্তমানে ভালোমানের এক লিটার দুধ ৫৫-৬০ টাকা এবং এর নিচে ৪০-৪৫ টাকা দরে দুধ কিনছেন তারা।
আগের তুলনায় দুধের উৎপাদন ও খামারির সংখ্যা কমে আসছে জানিয়ে ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, তার কেন্দ্রের দৈনিক ধারণ ক্ষমতা দশ হাজার লিটার। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হয়।
রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ রঘু বাজার এলাকার খামারি মতিয়ার রহমান জানান, রঘু বাজার এলাকায় বছর দুয়েক আগে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমিতির সদস্য সংখ্যা দেড় শতাধিক থাকলেও এখন তা কমে ৬০-৬৫ জন হয়েছে। আগে সদস্যদের বাড়িতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮টি করে গাভি থাকলেও এখন ১ থেকে ৩টা করে গাভি রয়েছে। অব্যাহত লোকসানের মুখে গাভি গরুর সংখ্যা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। শ্রমিক ছাড়াই নিজেরাই লালন-পালন করছেন।
রংপুর জেলা ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম আসিফুল ইসলাম আসিফ বলেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। জেলায় সমিতির আওতাধীন ১২ হাজারের বেশি খামারি রয়েছে। এর বাইরে খামারি রয়েছে আরও ১৮ থেকে ২০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ লিটার দুধ উৎপন্ন হয়।
আসিফুল ইসলাম আসিফ জানান, একবছর আগে এক কেজি খৈলের দাম ছিল ৩৫-৩৮ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। আগে গমের ভুসি ছিল ২৫-৩০ টাকা। এখন হয়েছে ৫২-৫৫ টাকা। ধানের গুঁড়া ৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা। ভুট্টার গুঁড়া ১৪ টাকা থেকে হয়েছে ২৫-৩৫ টাকা। সে অনুযায়ী বাজারে দুধের দাম বাড়েনি। শহর এলাকায় হোটেলে বা বাসাবাড়িতে দুধের লিটার ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হলেও গ্রাম এলাকায় তা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। আর বিভিন্ন কোম্পানিতে দুধ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা।
আগামাী বাজেটে গো-খাদ্যের ওপর ভর্তুকি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসিফুল ইসলাম আসিফ আরও বলেন, খামরিদের টিকে থাকতে হলে দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমাতে সরকারি খাস জমি বা চর এলাকার পতিত জমি লিজ দিয়ে ঘাস চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা করতে হবে। গবাদি পশুর চিকিৎসায় রংপুরে কোনো সরকারি ল্যাব নেই। বাইরে থেকে গোবর বা রক্ত পরীক্ষা করাতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়। অথচ সরকারি আধুনিক ল্যাব থাকলে ২০ টাকাতেই পরীক্ষা করা যেত। সরকার যদি এ বিষয়ে দৃষ্টি না দেয় তাহলে খামার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত খামারির সংখ্যা ৩১৪৯টি। দুগ্ধ উৎপাদকারী গাভি রয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার। বড় খামারিরা তাদের গরুর সংখ্যা কমিয়ে দিলেও প্রান্তিক ও মাঝারি খামারির সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে গাভির সংখ্যাও।
এনামুল হক বলেন, গ্রামে দুধের লিটার ৬০ টাকা। শহর এলাকায় গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো যেন দুধের দাম বাড়িয়ে দেয়, খামারিরা যেন উপকৃত হন সেজন্য অধিদপ্তর থেকে তাদের বলা হয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়