ঢাকা ১২:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কংক্রিটের ইট

মাইদুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৯:৪১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৬ Time View

Oplus_0

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ইটভাটার সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে জ্বালানি ও মাটির ব্যবহার ছাড়াই মেশিনে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক ইট।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ঢোলভাঙ্গা এলাকার বড়গোপালপুরে পরিবেশ বান্ধব এই ইট কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইন্জিনিয়ার মোঃ রুবেল প্রধান। আর পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় এই ইট ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করছে।

পরিবেশবান্ধব ও জমির মূল্যবান মাটি নষ্ট না করে জার্মান প্রযুক্তিতে মোটা বালি, চিকন বালি ও সিমেন্ট দ্বারা সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সিমেন্টের ইট তৈরি করছেন তিনি। এমনকি সেগুলো আগুনেও পোড়াতে হচ্ছে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি কারখানায় শ্রমিকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

পাশে স্তূপ করা চিকন বালি, মোটা বালি ,সিমেন্ট এগুলোর সঙ্গে কেমিক্যাল ট্রলিতে এনে হপারে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে।

পরে মিক্সচার মেশিনে সমস্ত উপকরণ সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে ভাইব্রো মাল্টি ক্যাভিটি মোল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে এই ইট। আর এভাবেই মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সারি সারিভাবে মেশিন থেকে বেরিয়ে আসছে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ইট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি। অন্যান্য ইটের চেয়ে এই কংক্রিট ইট সাশ্রয়ী , টেকসই ও শক্তিশালী। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দিন দিন মানুষ এই ইটের প্রতি ঝুঁকছেন। অত্যাধুনিক এই ইট কিনতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে।

দেশ বিদেশে কংক্রিট ইট তৈরি দেখে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় এটি তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্যোগ নেন প্রাইম কংক্রিট ব্রিক এর স্বত্বাধিকারী ইন্জিনিয়ার মোঃ রুবেল প্রধান।

স্থানীয় বাসিন্দা নবিন তালুকদার বলেন, এই কংক্রিট ইট অনেকটাই পোড়া মাটির ইটের তুলনায় আকারে বড় এবং মানসম্মত। এমন একটি অঞ্চলে এ ধরনের ইট তৈরি হওয়ায় ঘর-বাড়ি নির্মাণে মানুষের নির্মাণ খরচ অনেক কম হচ্ছে। তাই তিনি নিজেও এই পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছে।

তাহারুল নামের একজন স্থানীয় কৃষক বলেন, আমাদের এলাকায় মাটির ইটের ভাটার কারণে বায়ুদূষণসহ কৃষি জমির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এই ইট তৈরির ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। ইন্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান নামের আরেকজন শিক্ষক বলেন, এলাকায় এরকম মানসম্মত কংক্রিট ইটের কারখানা হওয়ায় কম খরচে বাড়ি নির্মাতারা প্রয়োজনমতো ইট নিতে পারছে। এতে তাদের নির্মাণ ব্যয় অনেকটাই কমে এসেছে।

উদ্যোক্তা ইন্জিনিয়ার মোঃ রুবেল প্রধান বলেন, এই ইট দিয়ে ভবন নির্মাণ করলে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যায় সাশ্রয়ী করা সম্ভব; যা সচরাচর মাটি দিয়ে তৈরি ইটে সম্ভব না। পরিবেশবান্ধব এই কংক্রিট ইট ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ সহনীয় ও সর্বোপরি ব্যয় সাশ্রয়ী।প্রাইম কংক্রিট ব্রিকসের কারখানায় প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার কংক্রিটের ইট তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ফসলি জমি রক্ষা করতে সবাইকে এই পরিবেশ বান্ধব সিমেন্টের ইট ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে আসা উচিৎ। এবং সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পেলে তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির পোড়ানো ইট বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার করার ঘোষনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। যার ফল স্বরূপ ২০২৩ সালেই ২৫% অবৈধ ভাটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে বাধ্যতামূলকভাবে সিমেন্টের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ২০২৫ সালে তা ১০০% করে মাটির ইটের ব্যবহার শূন্যে নিয়ে আসবে।

Please Share This Post in Your Social Media

গাইবান্ধায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কংক্রিটের ইট

Update Time : ০৯:৪১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ইটভাটার সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে জ্বালানি ও মাটির ব্যবহার ছাড়াই মেশিনে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক ইট।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ঢোলভাঙ্গা এলাকার বড়গোপালপুরে পরিবেশ বান্ধব এই ইট কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইন্জিনিয়ার মোঃ রুবেল প্রধান। আর পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় এই ইট ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করছে।

পরিবেশবান্ধব ও জমির মূল্যবান মাটি নষ্ট না করে জার্মান প্রযুক্তিতে মোটা বালি, চিকন বালি ও সিমেন্ট দ্বারা সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সিমেন্টের ইট তৈরি করছেন তিনি। এমনকি সেগুলো আগুনেও পোড়াতে হচ্ছে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি কারখানায় শ্রমিকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

পাশে স্তূপ করা চিকন বালি, মোটা বালি ,সিমেন্ট এগুলোর সঙ্গে কেমিক্যাল ট্রলিতে এনে হপারে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে।

পরে মিক্সচার মেশিনে সমস্ত উপকরণ সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে ভাইব্রো মাল্টি ক্যাভিটি মোল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে এই ইট। আর এভাবেই মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সারি সারিভাবে মেশিন থেকে বেরিয়ে আসছে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ইট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি। অন্যান্য ইটের চেয়ে এই কংক্রিট ইট সাশ্রয়ী , টেকসই ও শক্তিশালী। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দিন দিন মানুষ এই ইটের প্রতি ঝুঁকছেন। অত্যাধুনিক এই ইট কিনতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে।

দেশ বিদেশে কংক্রিট ইট তৈরি দেখে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় এটি তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্যোগ নেন প্রাইম কংক্রিট ব্রিক এর স্বত্বাধিকারী ইন্জিনিয়ার মোঃ রুবেল প্রধান।

স্থানীয় বাসিন্দা নবিন তালুকদার বলেন, এই কংক্রিট ইট অনেকটাই পোড়া মাটির ইটের তুলনায় আকারে বড় এবং মানসম্মত। এমন একটি অঞ্চলে এ ধরনের ইট তৈরি হওয়ায় ঘর-বাড়ি নির্মাণে মানুষের নির্মাণ খরচ অনেক কম হচ্ছে। তাই তিনি নিজেও এই পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছে।

তাহারুল নামের একজন স্থানীয় কৃষক বলেন, আমাদের এলাকায় মাটির ইটের ভাটার কারণে বায়ুদূষণসহ কৃষি জমির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এই ইট তৈরির ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। ইন্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান নামের আরেকজন শিক্ষক বলেন, এলাকায় এরকম মানসম্মত কংক্রিট ইটের কারখানা হওয়ায় কম খরচে বাড়ি নির্মাতারা প্রয়োজনমতো ইট নিতে পারছে। এতে তাদের নির্মাণ ব্যয় অনেকটাই কমে এসেছে।

উদ্যোক্তা ইন্জিনিয়ার মোঃ রুবেল প্রধান বলেন, এই ইট দিয়ে ভবন নির্মাণ করলে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যায় সাশ্রয়ী করা সম্ভব; যা সচরাচর মাটি দিয়ে তৈরি ইটে সম্ভব না। পরিবেশবান্ধব এই কংক্রিট ইট ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ সহনীয় ও সর্বোপরি ব্যয় সাশ্রয়ী।প্রাইম কংক্রিট ব্রিকসের কারখানায় প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার কংক্রিটের ইট তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ফসলি জমি রক্ষা করতে সবাইকে এই পরিবেশ বান্ধব সিমেন্টের ইট ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে আসা উচিৎ। এবং সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পেলে তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির পোড়ানো ইট বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার করার ঘোষনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। যার ফল স্বরূপ ২০২৩ সালেই ২৫% অবৈধ ভাটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে বাধ্যতামূলকভাবে সিমেন্টের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ২০২৫ সালে তা ১০০% করে মাটির ইটের ব্যবহার শূন্যে নিয়ে আসবে।