ঢাকা ১২:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
জুলাই আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ শুরু হয়েছিল রংপুর থেকেই: নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত স্বৈরাচার পতনে ক্রীড়ানকের ভুমিকা পালন করে আবু সাঈদের মৃত্যু পূর্বাচলে ঘোড়ার মাংসসহ আটক ১ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে গবেষণা খাতে কুবির এক শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ সেনা কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা, ভুয়া ‘মেজর’ আটক মগবাজারে আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে লাখ টাকা জরিমানা, ভুয়া চিকিৎসকের কারাদণ্ড

ফিলিস্তিনের ঘরে ঘরে উঁকি মারছে ইসরাইলি ক্যামেরা

নওরোজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১০:১৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১৪৫ Time View

ইসরাইলের কঠোর শাসনের শেকলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের জীবন। বিশ্ব মোড়লদের প্রশ্রয়ের দোলনায় দুলে দুলে প্রায় ১০০ বছর ধরে ভূস্বামীর ওপরই নিপীড়ন চালাচ্ছে দখলদার রাষ্ট্রটি। ভূমি দখল, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বছরের পর বছর বিনা অপরাধে কারাগারে আটকে রাখা- ইসরাইলি নির্যাতনের দৈনন্দিন এ চিত্র এখানেই শেষ নেই। ব্যক্তিজীবনেও শান্তি নেই পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরবাসী ফিলিস্তিনিদের। পরাধীনতার খাঁচায় বন্দি ফিলিস্তিনিদের ওপর সর্বক্ষণই চলে নজরদারি। রাস্তাঘাট থেকে রেস্তোরাঁ, অফিসে বা বাইরে সর্বত্রই ক্যামেরা। রীতিমতো ফিলিস্তিনিদের ঘরে ঘরেও উঁকি মারছে ইসরাইলিরা। ফলে নিজ বাড়িতে বসেও কোনো স্বাধীন চলাফেরা করতে পারেন না মা-বোনেরা।

সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা। অঞ্চলটিতে প্রায়ই অঘোষিত অভিযান বা স্থানীয়দের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। ২০২০ সাল থেকে ডিজিট্যালি নজরদারির বিষয়টি শুরু করে ইসরাইলিরা। সেই থেকেই জেরুজালেম এবং হেব্রন শহরটি কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। জেরুজালেম মিউনিসিপ্যালিটির মতে, শহরটিতে ১ হাজার ক্যামেরা লাগানো আছে।

ক্যামেরা বন্দি সেখানকার বাসিন্দারা সবসময়ই আতঙ্কে। চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে যখনই ক্যামেরাগুলোতে বাসিন্দাদের চোখ পড়ে তখনই মনে হয় এটা তাকে টার্গেট করছে। সারা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই ক্যামেরা এমনভাবে বসানো হয়েছে যে, তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের শনাক্ত ও নজরদারি করা সম্ভব। সব ক্যামেরা যেন তাদের বাড়িতেই বসানো হয়েছে। সারা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের বাড়িকে কখনোই নিজের বাড়ি মনে হয় না। আমাদের সব সময় পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে থাকতে হয়।’ হেব্রনের আরেক বাসিন্দা আজ্জা। তার কর্মস্থলে এক কাপ চা খেতে খেতে তিনি বলেন, ‘আমি সমুদ্রসৈকতে যেতে চাই, আমি সমুদ্র দেখতে চাই, আমি জলের স্বাদ নিতে চাই। এখানে আমাদের এই স্বাধীনতা নেই।’ অনবরত ক্যামেরায় নজর দিতে সব সময় এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ অনুভব করেন বাসিন্দারা। তারা উদাসীনতা এবং হুমকি অনুভব করেন। এমনকি বাসিন্দারা দাবি করেন, ‘আমাদের গোপন করার মতো কিছুই নেই, আমরা আমাদের গোপনীয়তার অধিকারকে বিসর্জন দিয়েছি।’ ইসরাইলে এসব উন্নতমানের ক্যামেরা সরবরাহ করেছে চীনের হিকভিশন ও ডাচ কোম্পানি টিকেএইচ। শুধু ক্যামেরা বসিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি ইসরাইল, ক্যামেরার পাশাপাশি ফেস স্ক্যানিংয়েরও ব্যবস্থা করেছে ইসরাইল।

ফিলিস্তিনিদের আইডি চেক না করেই তাদের শনাক্ত করতে পারে সৈন্যরা। নজরদারির এই অ্যাপ্লিকেশনটি ‘উলফ প্যাক’ নামে পরিচিত। এতে প্রতিটি বাসিন্দার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০২১ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট বিশাল এ তথ্যভান্ডারের খবর প্রকাশ করে। সেই ডেটাবেজে পশ্চিম তীরের ৩০ লাখ বাসিন্দার সবার ছবিসহ সব তথ্য রয়েছে। প্রতিটি প্রোফাইলে ছবি, পারিবারিক ইতিহাস, শিক্ষা এবং নিরাপত্তাবিষয়ক তথ্য থাকে। এমনকি ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অবকাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।

সাশ্রয়ী মূল্যের মানসম্পন্ন ইন্টারনেট অধিকার থেকেও বঞ্চিত ফিলিস্তিনিরা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করলেও ফিলিস্তিনিদের সেই আগের যুগেই ফেলে রাখা হয়েছে। ইসরাইলিরা পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা এখনো তৃতীয় প্রজন্ম ব্যবহার করছে। এমনকি পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় প্রতিটি ফোনালাপ নিরীক্ষণ করে ইসরাইলিরা। ইসরাইলের এমন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্বয়ং ইসরাইলি সাবেক সেনা।

বর্তমানে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের (ইসরাইলি সংস্থা) অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ওরি গিভাতি (সাবেক সৈনিক) বলেছেন, নজরদারি কার্যক্রম এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ‘আমাদের ইসরাইলকে সুরক্ষিত করা, ইসরাইলের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং দখলদারিত্ব সম্প্রসারণের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। দুটোর মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। বেশি দখল করা মানে ইসরাইলের জন্য আরও নিরাপত্তা নয়। দীর্ঘমেয়াদে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরও বেশি নজরদারির কোনো কারণ দেখি না।’

সুত্রঃ গার্ডিয়ান। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

Please Share This Post in Your Social Media

ফিলিস্তিনের ঘরে ঘরে উঁকি মারছে ইসরাইলি ক্যামেরা

নওরোজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ১০:১৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

ইসরাইলের কঠোর শাসনের শেকলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের জীবন। বিশ্ব মোড়লদের প্রশ্রয়ের দোলনায় দুলে দুলে প্রায় ১০০ বছর ধরে ভূস্বামীর ওপরই নিপীড়ন চালাচ্ছে দখলদার রাষ্ট্রটি। ভূমি দখল, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বছরের পর বছর বিনা অপরাধে কারাগারে আটকে রাখা- ইসরাইলি নির্যাতনের দৈনন্দিন এ চিত্র এখানেই শেষ নেই। ব্যক্তিজীবনেও শান্তি নেই পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরবাসী ফিলিস্তিনিদের। পরাধীনতার খাঁচায় বন্দি ফিলিস্তিনিদের ওপর সর্বক্ষণই চলে নজরদারি। রাস্তাঘাট থেকে রেস্তোরাঁ, অফিসে বা বাইরে সর্বত্রই ক্যামেরা। রীতিমতো ফিলিস্তিনিদের ঘরে ঘরেও উঁকি মারছে ইসরাইলিরা। ফলে নিজ বাড়িতে বসেও কোনো স্বাধীন চলাফেরা করতে পারেন না মা-বোনেরা।

সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা। অঞ্চলটিতে প্রায়ই অঘোষিত অভিযান বা স্থানীয়দের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। ২০২০ সাল থেকে ডিজিট্যালি নজরদারির বিষয়টি শুরু করে ইসরাইলিরা। সেই থেকেই জেরুজালেম এবং হেব্রন শহরটি কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। জেরুজালেম মিউনিসিপ্যালিটির মতে, শহরটিতে ১ হাজার ক্যামেরা লাগানো আছে।

ক্যামেরা বন্দি সেখানকার বাসিন্দারা সবসময়ই আতঙ্কে। চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে যখনই ক্যামেরাগুলোতে বাসিন্দাদের চোখ পড়ে তখনই মনে হয় এটা তাকে টার্গেট করছে। সারা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই ক্যামেরা এমনভাবে বসানো হয়েছে যে, তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের শনাক্ত ও নজরদারি করা সম্ভব। সব ক্যামেরা যেন তাদের বাড়িতেই বসানো হয়েছে। সারা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের বাড়িকে কখনোই নিজের বাড়ি মনে হয় না। আমাদের সব সময় পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে থাকতে হয়।’ হেব্রনের আরেক বাসিন্দা আজ্জা। তার কর্মস্থলে এক কাপ চা খেতে খেতে তিনি বলেন, ‘আমি সমুদ্রসৈকতে যেতে চাই, আমি সমুদ্র দেখতে চাই, আমি জলের স্বাদ নিতে চাই। এখানে আমাদের এই স্বাধীনতা নেই।’ অনবরত ক্যামেরায় নজর দিতে সব সময় এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ অনুভব করেন বাসিন্দারা। তারা উদাসীনতা এবং হুমকি অনুভব করেন। এমনকি বাসিন্দারা দাবি করেন, ‘আমাদের গোপন করার মতো কিছুই নেই, আমরা আমাদের গোপনীয়তার অধিকারকে বিসর্জন দিয়েছি।’ ইসরাইলে এসব উন্নতমানের ক্যামেরা সরবরাহ করেছে চীনের হিকভিশন ও ডাচ কোম্পানি টিকেএইচ। শুধু ক্যামেরা বসিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি ইসরাইল, ক্যামেরার পাশাপাশি ফেস স্ক্যানিংয়েরও ব্যবস্থা করেছে ইসরাইল।

ফিলিস্তিনিদের আইডি চেক না করেই তাদের শনাক্ত করতে পারে সৈন্যরা। নজরদারির এই অ্যাপ্লিকেশনটি ‘উলফ প্যাক’ নামে পরিচিত। এতে প্রতিটি বাসিন্দার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০২১ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট বিশাল এ তথ্যভান্ডারের খবর প্রকাশ করে। সেই ডেটাবেজে পশ্চিম তীরের ৩০ লাখ বাসিন্দার সবার ছবিসহ সব তথ্য রয়েছে। প্রতিটি প্রোফাইলে ছবি, পারিবারিক ইতিহাস, শিক্ষা এবং নিরাপত্তাবিষয়ক তথ্য থাকে। এমনকি ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অবকাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।

সাশ্রয়ী মূল্যের মানসম্পন্ন ইন্টারনেট অধিকার থেকেও বঞ্চিত ফিলিস্তিনিরা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করলেও ফিলিস্তিনিদের সেই আগের যুগেই ফেলে রাখা হয়েছে। ইসরাইলিরা পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা এখনো তৃতীয় প্রজন্ম ব্যবহার করছে। এমনকি পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় প্রতিটি ফোনালাপ নিরীক্ষণ করে ইসরাইলিরা। ইসরাইলের এমন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্বয়ং ইসরাইলি সাবেক সেনা।

বর্তমানে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের (ইসরাইলি সংস্থা) অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ওরি গিভাতি (সাবেক সৈনিক) বলেছেন, নজরদারি কার্যক্রম এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ‘আমাদের ইসরাইলকে সুরক্ষিত করা, ইসরাইলের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং দখলদারিত্ব সম্প্রসারণের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। দুটোর মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। বেশি দখল করা মানে ইসরাইলের জন্য আরও নিরাপত্তা নয়। দীর্ঘমেয়াদে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরও বেশি নজরদারির কোনো কারণ দেখি না।’

সুত্রঃ গার্ডিয়ান। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।