ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রথমবারের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে দায় নেবেন ড. ইউনূস: ফখরুল ওসমানী বিমানবন্দরে ইঞ্জিনে বোর্ডিং ব্রিজের ধাক্কা শাহবাগ-আগারগাঁও মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ শরিয়তপুরের জেলা জজের বক্তব্য ঠিক নয় : রেজিস্ট্রার জেনারেল বাকৃবিতে নারী হয়ে নিজের সহপাঠীর অপ্রীতিকর ছবি সিনিয়র ভাইকে পাঠানোর অভিযোগ ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডবের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে’ তিন বিচারপতিকে শোকজের তথ্য সত্য নয়: সুপ্রিম কোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জেলা কারাগার পরিদর্শন গণপূর্তে একটি অনিয়ম ঢাকতে আরেকটি অনিয়ম

৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ: টাকা দিয়ে ধামাচাপার চেষ্টা

মোঃ আনাস ইবনে আরফিন
  • Update Time : ০২:৩৯:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৬২ Time View

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি গ্রামে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী।

এই জঘন্য ঘটনার পরও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি টাকার বিনিময়ে অপরাধ ঢাকতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ছালিয়াকান্দি গ্রামের উত্তর পাড়ার রমিজ মিয়ার ছেলে বাবু একই গ্রামের কদম আলীর নাতনি ও মামুন মিয়ার ৫ বছরের শিশুকন্যাকে পাশবিকভাবে ধর্ষণ করে। এরপর শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কিন্তু ঘটনার ৫ দিন পর, ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) স্থানীয় মহিলা মেম্বার শামসুন্নাহার (বেবি মেম্বার) ও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রামীণ সালিশ বসানো হয়। ধর্ষণের মতো জঘন্য ও অমানবিক অপরাধের পরও ঘটনার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বদলে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে অপরাধ ঢাকতে উদ্যত হন।

সেই সালিশে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সমাধান হিসেবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এই সালিশের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অসংখ্য নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে প্রতিবাদ জানায়।

এলাকাবাসী বলেন, যদি টাকায় ধর্ষণের বিচার মিটে যায় তাহলে আমাদের সমাজে আর কোনো মেয়েশিশু নিরাপদ থাকবে না। এরা শুধু অপরাধ ঢাকছে না, ধর্ষককে উৎসাহ দিচ্ছে।

এলাকাবাসী আরও বলেন, এটা বিচার নয় এটা অন্যায়ের রক্ষাকবচ। এই বিচারকারীদেরও জবাবদিহি করতে হবে। ধর্ষণের মতো অপরাধকে অর্থের বিনিময়ে মিটিয়ে দেওয়া শুধু মানবতার প্রতি অবমাননাই নয়, রাষ্ট্রের আইনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। আইন অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সেই আইনের তোয়াক্কা না করে ধর্ষণকে লেনদেনের পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে এই শিশু ধর্ষণকারীর পিতা রমিজ মিয়াকে পরকীয়া জনিত কারণে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। তখন তাকে এলাকাবাসী মারধর করে চেয়ারম্যানের অফিসে হস্তান্তর করে। সেদিন ছিলো বুধবার, চেয়ারম্যান বলেছিলেন এই রমিজ মিয়ার বিচার করবেন শুক্রবার। তাকে সেই দুইদিনের জন্য তাঁর ভাই রমজান মিয়ার জিম্মায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ধর্ষণকারী রমিজ তার পরদিনই এলাকা ছেড়ে তার পালিয়ে যায়। সেই ঘটনার এক থেকে দেড় বছর পর আবার সে এলাকায় ফিরে আসে। কিন্তু রমিজ মিয়া যখন এলাকায় প্রবেশ করে তখন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তখন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আজকে তার ছেলে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করার সাহস পেত কি?

নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, একটি শিশুর জীবনের ওপর এমন বর্বরতা মানবতার ওপর আঘাত। এখনই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে, সমাজে এমন অপরাধ আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দৈনিক নওরোজকে জানা, ২৯ অক্টোবর বুধবার ভিক্টিমের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করছে এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসি বলেন, ধর্ষণের মতো অপরাধে কারও প্রভাব বা অবস্থান বিবেচনা করা হবে না। দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

এলাকাবাসী একবাক্যে দাবি তুলেছেন, এই ধর্ষণের বিচার আদালতে হোক, সালিশে নয়। শিশুটির জন্য আমরা ন্যায়বিচার চাই।

গ্রামের তরুণ সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, যদি এ ধরনের জঘন্য অপরাধ টাকার বিনিময়ে মিটিয়ে ফেলা হয় তাহলে সমাজে অপরাধের সংস্কৃতি আরও গভীর হবে।  এলাকাবাসীর দাবী ধর্ষণকারী বাবুকে এবং তাঁর বাবা রমিজকেও আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক। প্রয়োজনে এলাকাবাসী এবং সর্বস্তরের জনগণ প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ: টাকা দিয়ে ধামাচাপার চেষ্টা

মোঃ আনাস ইবনে আরফিন
Update Time : ০২:৩৯:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি গ্রামে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী।

এই জঘন্য ঘটনার পরও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি টাকার বিনিময়ে অপরাধ ঢাকতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ছালিয়াকান্দি গ্রামের উত্তর পাড়ার রমিজ মিয়ার ছেলে বাবু একই গ্রামের কদম আলীর নাতনি ও মামুন মিয়ার ৫ বছরের শিশুকন্যাকে পাশবিকভাবে ধর্ষণ করে। এরপর শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কিন্তু ঘটনার ৫ দিন পর, ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) স্থানীয় মহিলা মেম্বার শামসুন্নাহার (বেবি মেম্বার) ও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রামীণ সালিশ বসানো হয়। ধর্ষণের মতো জঘন্য ও অমানবিক অপরাধের পরও ঘটনার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বদলে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে অপরাধ ঢাকতে উদ্যত হন।

সেই সালিশে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সমাধান হিসেবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এই সালিশের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অসংখ্য নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে প্রতিবাদ জানায়।

এলাকাবাসী বলেন, যদি টাকায় ধর্ষণের বিচার মিটে যায় তাহলে আমাদের সমাজে আর কোনো মেয়েশিশু নিরাপদ থাকবে না। এরা শুধু অপরাধ ঢাকছে না, ধর্ষককে উৎসাহ দিচ্ছে।

এলাকাবাসী আরও বলেন, এটা বিচার নয় এটা অন্যায়ের রক্ষাকবচ। এই বিচারকারীদেরও জবাবদিহি করতে হবে। ধর্ষণের মতো অপরাধকে অর্থের বিনিময়ে মিটিয়ে দেওয়া শুধু মানবতার প্রতি অবমাননাই নয়, রাষ্ট্রের আইনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। আইন অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সেই আইনের তোয়াক্কা না করে ধর্ষণকে লেনদেনের পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে এই শিশু ধর্ষণকারীর পিতা রমিজ মিয়াকে পরকীয়া জনিত কারণে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। তখন তাকে এলাকাবাসী মারধর করে চেয়ারম্যানের অফিসে হস্তান্তর করে। সেদিন ছিলো বুধবার, চেয়ারম্যান বলেছিলেন এই রমিজ মিয়ার বিচার করবেন শুক্রবার। তাকে সেই দুইদিনের জন্য তাঁর ভাই রমজান মিয়ার জিম্মায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ধর্ষণকারী রমিজ তার পরদিনই এলাকা ছেড়ে তার পালিয়ে যায়। সেই ঘটনার এক থেকে দেড় বছর পর আবার সে এলাকায় ফিরে আসে। কিন্তু রমিজ মিয়া যখন এলাকায় প্রবেশ করে তখন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তখন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আজকে তার ছেলে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করার সাহস পেত কি?

নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, একটি শিশুর জীবনের ওপর এমন বর্বরতা মানবতার ওপর আঘাত। এখনই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে, সমাজে এমন অপরাধ আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দৈনিক নওরোজকে জানা, ২৯ অক্টোবর বুধবার ভিক্টিমের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করছে এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসি বলেন, ধর্ষণের মতো অপরাধে কারও প্রভাব বা অবস্থান বিবেচনা করা হবে না। দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

এলাকাবাসী একবাক্যে দাবি তুলেছেন, এই ধর্ষণের বিচার আদালতে হোক, সালিশে নয়। শিশুটির জন্য আমরা ন্যায়বিচার চাই।

গ্রামের তরুণ সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, যদি এ ধরনের জঘন্য অপরাধ টাকার বিনিময়ে মিটিয়ে ফেলা হয় তাহলে সমাজে অপরাধের সংস্কৃতি আরও গভীর হবে।  এলাকাবাসীর দাবী ধর্ষণকারী বাবুকে এবং তাঁর বাবা রমিজকেও আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক। প্রয়োজনে এলাকাবাসী এবং সর্বস্তরের জনগণ প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।