ঢাকা ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫৮ বছরের ভুল বিচারের অবসান, সমালোচনায় জাপানের বিচারব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:০১:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৬৩ Time View

বিশ্বের দীর্ঘ সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইওয়া হাকামাতাকে জাপানের আদালত নির্দোষ ঘোষণা করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে ৫৮ বছরের একটি আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়ে ঐতিহাসিক রায়ে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। এই রায় জাপানের দীর্ঘতম চলমান আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।

প্রধান বিচারক কোশি কুনুই ঘোষণা করেন যে, “ইওয়া হাকামাতা নির্দোষ, প্রমাণ হিসাবে দেখানো লাল দাগযুক্ত পোশাকটি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ষড়যন্ত্র করে তৈরি করা হয়েছিল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিও জাল করা হয়েছিল।” দীর্ঘ সময় ধরে ন্যায়বিচার দিতে দেরি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিচারক কুনুই।

৮৮ বছর বয়সী হাকামাতা একজন পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা, ১৯৬৮ সালে তার কর্মস্থলের মালিক, তার স্ত্রী এবং তাদের দুই কিশোর সন্তানকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। আদালত প্রমাণ পেয়েছে যে হাকামাতার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলি জালিয়াতি করা হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও, কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। এবং এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তিনি মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কারাগারের একটি ছোট ঘরে দিন কাটান।

অপরাধের এক বছরেরও বেশি সময় পরে একটি পোশাক উদ্ধার করা হয়। পোশাকে লেগে থাকা রক্তের দাগ তার বিরুদ্ধে প্রধান প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তবে ২০১৪ সালে ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায় এই দাগের সঙ্গে হাকামাতার ডিএনএ মেলে না। এই প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং পুনর্বিচার মঞ্জুর করা হয়। এই বছর আদালত প্রমাণ করেন তার বিরুদ্ধে উপস্থাপন করা প্রমাণগুলি জালিয়াতি করা হয়েছিল। এবং এরপর তাকে সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ ঘোষণা করেন আদালত।

হাকামাতার চার দশকেরও বেশি সময়ের কারাবাস তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ২০১৪ সালে মুক্তির পর থেকে হাকামাতা তার বোন হিদেকোর কাছে রয়েছেন, যিনি দীর্ঘ ৯১ বছর বয়সে এখনও তার পাশে আছেন। হিদেকো তার ভাইয়ের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।

হিদেকো জানান, “কারাগারে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে তার ভাইয়ের মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারা তাকে একটি পশুর মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য করেছিল,”।
তিনি আরও বলেন, “আমি অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না, আমি শুধু চাই হাকামাতা যেন শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে।”

শিজুওকার পুলিশ প্রধান তাকায়োশি সুদা সম্প্রতি তাদের বাড়িতে এসে ক্ষমা চান। এবং বলেন, “গত ৫৮ বছর ধরে আমরা আপনাদের কষ্ট দিয়েছি। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত,”।

হিদেকো শান্তভাবে উত্তর দেন, “আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের নিয়তি ছিল। আমরা এখন আর কিছু নিয়ে অভিযোগ করব না।”

হাকামাতার মামলাটি জাপানের বিচারব্যবস্থার সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই রায় জাপানের বিচারব্যবস্থার কাঠামোগত সমস্যাগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে। জাপানের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের শুধুমাত্র ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে জানানো হয়, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলি নির্মম ও অমানবিক বলে অভিহিত করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ব্যবস্থাকে “নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবমাননাকর” বলে আখ্যায়িত করে। এর ফলে বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ভুল বিচারের পুনরাবৃত্তি রোধে কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

৫৮ বছরের ভুল বিচারের অবসান, সমালোচনায় জাপানের বিচারব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৭:০১:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বের দীর্ঘ সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইওয়া হাকামাতাকে জাপানের আদালত নির্দোষ ঘোষণা করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে ৫৮ বছরের একটি আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়ে ঐতিহাসিক রায়ে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। এই রায় জাপানের দীর্ঘতম চলমান আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।

প্রধান বিচারক কোশি কুনুই ঘোষণা করেন যে, “ইওয়া হাকামাতা নির্দোষ, প্রমাণ হিসাবে দেখানো লাল দাগযুক্ত পোশাকটি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ষড়যন্ত্র করে তৈরি করা হয়েছিল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিও জাল করা হয়েছিল।” দীর্ঘ সময় ধরে ন্যায়বিচার দিতে দেরি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিচারক কুনুই।

৮৮ বছর বয়সী হাকামাতা একজন পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা, ১৯৬৮ সালে তার কর্মস্থলের মালিক, তার স্ত্রী এবং তাদের দুই কিশোর সন্তানকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। আদালত প্রমাণ পেয়েছে যে হাকামাতার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলি জালিয়াতি করা হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও, কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। এবং এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তিনি মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কারাগারের একটি ছোট ঘরে দিন কাটান।

অপরাধের এক বছরেরও বেশি সময় পরে একটি পোশাক উদ্ধার করা হয়। পোশাকে লেগে থাকা রক্তের দাগ তার বিরুদ্ধে প্রধান প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তবে ২০১৪ সালে ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায় এই দাগের সঙ্গে হাকামাতার ডিএনএ মেলে না। এই প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং পুনর্বিচার মঞ্জুর করা হয়। এই বছর আদালত প্রমাণ করেন তার বিরুদ্ধে উপস্থাপন করা প্রমাণগুলি জালিয়াতি করা হয়েছিল। এবং এরপর তাকে সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ ঘোষণা করেন আদালত।

হাকামাতার চার দশকেরও বেশি সময়ের কারাবাস তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ২০১৪ সালে মুক্তির পর থেকে হাকামাতা তার বোন হিদেকোর কাছে রয়েছেন, যিনি দীর্ঘ ৯১ বছর বয়সে এখনও তার পাশে আছেন। হিদেকো তার ভাইয়ের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।

হিদেকো জানান, “কারাগারে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে তার ভাইয়ের মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারা তাকে একটি পশুর মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য করেছিল,”।
তিনি আরও বলেন, “আমি অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না, আমি শুধু চাই হাকামাতা যেন শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে।”

শিজুওকার পুলিশ প্রধান তাকায়োশি সুদা সম্প্রতি তাদের বাড়িতে এসে ক্ষমা চান। এবং বলেন, “গত ৫৮ বছর ধরে আমরা আপনাদের কষ্ট দিয়েছি। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত,”।

হিদেকো শান্তভাবে উত্তর দেন, “আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের নিয়তি ছিল। আমরা এখন আর কিছু নিয়ে অভিযোগ করব না।”

হাকামাতার মামলাটি জাপানের বিচারব্যবস্থার সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই রায় জাপানের বিচারব্যবস্থার কাঠামোগত সমস্যাগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে। জাপানের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের শুধুমাত্র ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে জানানো হয়, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলি নির্মম ও অমানবিক বলে অভিহিত করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ব্যবস্থাকে “নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবমাননাকর” বলে আখ্যায়িত করে। এর ফলে বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ভুল বিচারের পুনরাবৃত্তি রোধে কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন।