ঢাকা ০৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সিটি ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ অবিলম্বে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে কঠোর কর্মসূচীর হুমকি সাংবাদিকদের রায় ছিঁড়ে ক্ষমতার দাপট দেখানো সেই জেলা জজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ঢাবিতে ধূমপানে জরিমানা, গাঁজা সেবনে বহিষ্কার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল আওয়ামীলীগ – মঈন খান সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ঘুমের মধ্যে মাদ্রাসা ছাত্রকে গলা কেটে হত্যা   ১ হাজার টাকা কমেছে স্বর্ণের দাম বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সুন্দরী নারীরা রাস্তায় বের হতে পারবে না: ফয়জুল করিম ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ,আগুন

৩৬ বার অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরল দীপ্ত, আর যেতে চায় না স্কুলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:০২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৫৪ Time View

মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নাভিদ নাওয়াজ দীপ্ত। ৯৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল ছাড়পত্র পেয়েছে।

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ৯৭ দিন পর যবনিকা এক যন্ত্রণাকর অধ্যায়ের। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে দীপ্তর ছুটি মিলল অবশেষে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা সপ্তম শ্রেণির এই লড়াকু শিক্ষার্থী বাসায় ফিরেছে গতকাল সোমবার।

শরীরের ৪৫ শতাংশই পোড়া। দুই হাত, পেট ও পেছনের অংশে মারাত্মক ক্ষত। ছোট্ট শরীরে ৩৬ বার অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসক! এর মধ্যে আটবার চামড়া প্রতিস্থাপন। তবু হার মানেনি। চিকিৎসকদের কাছেও বিস্ময়ের আরেক নাম নাভিদ নওয়াজ দীপ্ত!

যে স্কুল মাঠে সহপাঠীর সঙ্গে খেলায় মেতে থাকত দীপ্ত, সেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম শুনতেই চুপসে যাচ্ছে সে। বিমান দুর্ঘটনার তিন মাস পার হলেও দীপ্তর মুখে এখনও ভীতির ছাপ। দীপ্ত তার বাবাকে বলেছে, ‘আর ওই স্কুলে যেতে চাই না।’

হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়পত্র নিচ্ছেন, তখনও দীপ্তর বাবা মিজানুর রহমানের ভেজাচোখ। বললেন, ‘সেদিন যখন হাসপাতালে ছেলেকে প্রথম দেখি, মনে হয়েছিল আর ফিরে পাব না। চিকিৎসকদের পরিশ্রম, সবার দোয়া আর আল্লাহর রহমতে আজ তাকে কোলে নিতে পেরেছি। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। প্রতিটা রাত ছিল নির্ঘুম। ড্রেসিংয়ের সময় ছেলের চিৎকার, ব্যথার যন্ত্রণার অধ্যায়টা আপাতত শেষ হলো। আমরা যদি মা-বাবা না হতাম, হয়তো এই সময়টা পার করা সম্ভব হতো না। তিন মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালের সেই প্রতিদিনের ভয়, উদ্বেগ আর যন্ত্রণার স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফিরছে।’

দীপ্ত এখন অনেকটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে ধীরে ধীরে চলাফেরা শুরু করেছে। তবে স্কুলের নাম শুনলেই ভয় পেয়ে যায় সে। তার বাবার ভাষায়– আমরা ওকে অনেক মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিচ্ছি। তার পড়াশোনা তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। তাই এখন আশপাশের কোনো স্কুলে ভর্তি করানোর চিন্তা করছি।

দীপ্তর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, দীপ্তর বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তি আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে এখন সুস্থ। এই মুহূর্তটা আমাদের জন্য আনন্দের।

দীপ্তর চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন ডা. মারুফুল ইসলামও। তিনি বলেন, তাকে বাঁচাতে আমাদের দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে। তিন দফায় ভেবেছিলাম, হয়তো আর পারব না। দুবার পরিবারকেও খারাপ খবর দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। কিন্তু অলৌকিকভাবে ফিরে এসেছে সে। ৩৬ বার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ২২ দিন আইসিইউতে, ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল। এরপর আরও ৭৫ দিন লড়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে।

সেই আতঙ্কের দিনগুলো মনে করে দীপ্তর মা মিতু নেওয়াজ বলেন, দুর্ঘটনার দিন দুপুরে ওকে ফোন দিয়েও পাইনি। হঠাৎ ছোট মেয়ে নায়রা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আম্মু, ভাইয়ার ক্লাসে প্লেন ক্রাশ হয়েছে।’ ছুটে গিয়েছিলাম স্কুলে। এরপর সন্তানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। আজ আমার ছেলে আমার সামনে– এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ। দগ্ধের দুঃসহ ব্যথা, ৩৬টি অস্ত্রোপচার, হাসপাতালের ঠান্ডা ঘর, মনোবল হারানো মুহূর্ত– সব কিছু পেছনে ফেলে এখন দীপ্ত নতুন জীবনের পথে হাঁটছে।

২১ জুলাইয়ের দুপুরটা এখনও ভুলতে পারেন না কেউ। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুলের পাশে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয় ৫৭ জন। এখন পর্যন্ত ৩৬ জন মারা গেছেন। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনও পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Please Share This Post in Your Social Media

৩৬ বার অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরল দীপ্ত, আর যেতে চায় না স্কুলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১২:০২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ৯৭ দিন পর যবনিকা এক যন্ত্রণাকর অধ্যায়ের। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে দীপ্তর ছুটি মিলল অবশেষে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা সপ্তম শ্রেণির এই লড়াকু শিক্ষার্থী বাসায় ফিরেছে গতকাল সোমবার।

শরীরের ৪৫ শতাংশই পোড়া। দুই হাত, পেট ও পেছনের অংশে মারাত্মক ক্ষত। ছোট্ট শরীরে ৩৬ বার অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসক! এর মধ্যে আটবার চামড়া প্রতিস্থাপন। তবু হার মানেনি। চিকিৎসকদের কাছেও বিস্ময়ের আরেক নাম নাভিদ নওয়াজ দীপ্ত!

যে স্কুল মাঠে সহপাঠীর সঙ্গে খেলায় মেতে থাকত দীপ্ত, সেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম শুনতেই চুপসে যাচ্ছে সে। বিমান দুর্ঘটনার তিন মাস পার হলেও দীপ্তর মুখে এখনও ভীতির ছাপ। দীপ্ত তার বাবাকে বলেছে, ‘আর ওই স্কুলে যেতে চাই না।’

হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়পত্র নিচ্ছেন, তখনও দীপ্তর বাবা মিজানুর রহমানের ভেজাচোখ। বললেন, ‘সেদিন যখন হাসপাতালে ছেলেকে প্রথম দেখি, মনে হয়েছিল আর ফিরে পাব না। চিকিৎসকদের পরিশ্রম, সবার দোয়া আর আল্লাহর রহমতে আজ তাকে কোলে নিতে পেরেছি। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। প্রতিটা রাত ছিল নির্ঘুম। ড্রেসিংয়ের সময় ছেলের চিৎকার, ব্যথার যন্ত্রণার অধ্যায়টা আপাতত শেষ হলো। আমরা যদি মা-বাবা না হতাম, হয়তো এই সময়টা পার করা সম্ভব হতো না। তিন মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালের সেই প্রতিদিনের ভয়, উদ্বেগ আর যন্ত্রণার স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফিরছে।’

দীপ্ত এখন অনেকটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে ধীরে ধীরে চলাফেরা শুরু করেছে। তবে স্কুলের নাম শুনলেই ভয় পেয়ে যায় সে। তার বাবার ভাষায়– আমরা ওকে অনেক মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিচ্ছি। তার পড়াশোনা তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। তাই এখন আশপাশের কোনো স্কুলে ভর্তি করানোর চিন্তা করছি।

দীপ্তর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, দীপ্তর বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তি আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে এখন সুস্থ। এই মুহূর্তটা আমাদের জন্য আনন্দের।

দীপ্তর চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন ডা. মারুফুল ইসলামও। তিনি বলেন, তাকে বাঁচাতে আমাদের দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে। তিন দফায় ভেবেছিলাম, হয়তো আর পারব না। দুবার পরিবারকেও খারাপ খবর দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। কিন্তু অলৌকিকভাবে ফিরে এসেছে সে। ৩৬ বার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ২২ দিন আইসিইউতে, ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল। এরপর আরও ৭৫ দিন লড়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে।

সেই আতঙ্কের দিনগুলো মনে করে দীপ্তর মা মিতু নেওয়াজ বলেন, দুর্ঘটনার দিন দুপুরে ওকে ফোন দিয়েও পাইনি। হঠাৎ ছোট মেয়ে নায়রা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আম্মু, ভাইয়ার ক্লাসে প্লেন ক্রাশ হয়েছে।’ ছুটে গিয়েছিলাম স্কুলে। এরপর সন্তানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। আজ আমার ছেলে আমার সামনে– এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ। দগ্ধের দুঃসহ ব্যথা, ৩৬টি অস্ত্রোপচার, হাসপাতালের ঠান্ডা ঘর, মনোবল হারানো মুহূর্ত– সব কিছু পেছনে ফেলে এখন দীপ্ত নতুন জীবনের পথে হাঁটছে।

২১ জুলাইয়ের দুপুরটা এখনও ভুলতে পারেন না কেউ। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুলের পাশে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয় ৫৭ জন। এখন পর্যন্ত ৩৬ জন মারা গেছেন। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনও পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।